মানুষের ক্ষমতা ও সক্ষমতা খুবই সীমিত। বিপরীতে মহান আল্লাহ সৃষ্টিজগতের ওপর সর্বময় ক্ষমতার অধিকারী। ফলে জাগতিক জীবনে আল্লাহর কাছে আত্মসমর্পণই বান্দার জন্য সার্বিক বিবেচনায় কল্যাণকর। আল্লাহর আশ্রয় বান্দার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ স্থান। শুধু তা-ই নয়, এটাই মুমিনের বৈশিষ্ট্য। মহান আল্লাহ বলেন, ‘আমি তোমাদেরকে কিছু ভয়, ক্ষুধা এবং ধনসম্পদ, জীবন ও ফল-ফসলের ক্ষয়ক্ষতি দ্বারা অবশ্যই পরীক্ষা করব। তবে আপনি সুসংবাদ দিন ধৈর্যশীলদের, যারা বিপদে পতিত হলে বলে—আমরা তো আল্লাহরই এবং নিশ্চিতভাবে আমরা তাঁরই কাছে ফিরে যাব এমন লোকদেরই প্রতি তাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে বিশেষ অনুগ্রহ ও রহমত বর্ষিত হয়। আর এরাই সৎপথপ্রাপ্ত।’ (সুরা: বাকারা, আয়াত : ১৫৫-১৫৭)
বিপদে ধৈর্য ধারণ করা মানে আল্লাহর ফায়সালা বলে মেনে নেওয়া এবং আল্লাহর পক্ষ হতে বিনিময় লাভের আশা রাখা। রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, মুমিনের এই বিষয়টি কত আনন্দের যে, সকল অবস্থাই তার জন্য কল্যাণকর। আর তা মুমিন ছাড়া অন্য কারো প্রাপ্য নয়। কেননা মুমিন যখন আনন্দিত তখন সে আল্লাহর শোকর আদায় করে। ফলে তা তার জন্য কল্যাণকর হয়। তদ্রূপ যখন সে বিপদের সম্মুখীন হয় তখন ধৈর্য ধারণ করে। সুতরাং এ অবস্থাও তার জন্য কল্যাণকর হয়ে যায়। (সহিহ মুসলিম)
ঈমানদারদের জন্য এটা বড় আনন্দের বিষয় যে পার্থিব কোনো ক্ষতিই তাদের জন্য প্রকৃত ক্ষতি নয়। প্রকৃত ক্ষতি তো কেবল অবিশ্বাসীদের জন্য। আর মুমিনের জন্য রয়েছে সর্বাবস্থায় আনন্দ ও তৃপ্তি। আরাম-আয়েশের অবস্থায়ও সে আনন্দ লাভ করে। বিপদ-আপদেও তার জন্য থাকে আনন্দ। কেননা সে ধৈর্য ধারণ করে সওয়াব অর্জন করে। এভাবে চিন্তা করলে বড় থেকে বড় বিপদকেও আনন্দের মনে হবে এবং কোনো মুসিবতেই মুমিন বিচলিত হবে না।
যে ব্যক্তি আল্লাহর পূর্ণ আনুগত্য করে, গুনাহ থেকে বেঁচে থাকে এবং ইচ্ছাধীন ও ইচ্ছাবহির্ভূত সব পরিস্থিতিকে আল্লাহর পায়ে সমর্পণ করে এবং বিশ্বাস রাখে, সব কিছু তাঁরই হুকুমে হয়, সে বড় আত্মিক তৃপ্তি ও প্রশান্তি লাভ করে। অনাকাঙ্ক্ষিত কোনো পরিস্থিতি তার ওপর কোনোরূপ প্রভাব বিস্তার করতে পারে না; বরং তাদের জন্য বাহ্যিক বিপদ-আপদও আত্মিক শান্তির কারণ হয়। তাদের দৃষ্টি সর্বদা এক আল্লাহর প্রতি নিবদ্ধ থাকে এবং সব কিছু আল্লাহর পক্ষ থেকে হয় বলে তাঁরা বিশ্বাস করেন। জীবন তাঁর দান, মৃত্যুও তাঁরই বিধান। কষ্ট-ক্লেশ আরাম-আনন্দ সবই তাঁর পক্ষ হতে! যখন সব কিছু সেই একই সত্তার পক্ষ থেকে, অতএব সবই পছন্দনীয়।
বান্দার ওপর যত বিপদ-আপদ আসে সব কিছুরই তাৎপর্য থাকে। কিন্তু সব বিষয় আল্লাহ তাআলা বান্দার সামনে প্রকাশ করেন না। যেহেতু বিপদেও কল্যাণ নিহিত থাকে সুতরাং যেকোনো বিপদের সময় এ কথা স্মরণ করে নেবে যে, এতেই আমার জন্য কল্যাণ রয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রশান্তি লাভের একমাত্র উপায় হলো আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি। আর আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টির (সহজ) পদ্ধতি হলো আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গে সম্পর্ক করা। আল্লাহওয়ালাদের সঙ্গে সম্পর্ক করলেই আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক সৃষ্টি হবে। আর আল্লাহর সঙ্গে সম্পর্ক হয়ে গেলে কোনো বিপদ মানুষকে বিচলিত করবে না।
আল্লাহ সবাইকে তাঁর অনুগ্রহ দান করুন। আমিন।