ইসলাম ডেস্ক : নির্ধারিত সময়ে কেয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। এটা মহান প্রভুর ঘোষণা। কেয়ামতের দিন মহান আল্লাহ ছাড়া আর কোনো কিছুর অস্তিত্ব থাকবে না। সবকিছু ধ্বসং হয়ে যাবে। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘জমিনের উপর যা কিছু রয়েছে, সবই ধ্বংস হয়ে যাবে; একমাত্র আপনার মহিমায় এবং মহানুভব পালনকর্তা ছাড়া।’ (সুরা আর-রাহমান : আয়াত ২৬-২৭)
কেয়ামতের আগে ধারাবাহিকভাবে ৬টি ঘটনা ঘটবে। হাদিসের একাধিক বর্ণনায় ভিন্ন ভিন্ন ঘটনার বর্ণনা ওঠে এসেছে। সব শেষে যে ঘটনাটি ঘটবে; তা হবে খুবই ভয়ংকর ব্যাপার! একজন পুরুষের পেছনে ৪০/৫০ জন নারী আশ্রয় চাইবে। সেসময় পুরুষের সংখ্যা কমে যেতে থাকবে আর নারীর সংখ্যা ক্রমাগত ব্যাপক হারে বাড়তে থাকব। শুধু এ সম্পর্কেই হাদিসে এসেছে-
হজরত আবু মুসা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন নবিজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইরশাদ করেছেন যে, (এমন একটা সময় আসবে যখন) একজন পুরুষকে দেখতে পাবে তার পেছনে চল্লিশজন নারী অনুসরণ করছে আশ্রয়ের জন্য। কেননা, তখন পুরুষের সংখ্যা অনেক কমে যাবে আর নারীর সংখ্যা বাড়তে থাকবে।’ (বুখারি)
হাদিসের ধারাক্রম অনুযায়ী এটি হলো সর্বশেষ আলামত। কেয়ামতের আগে আরও ৬টি ঘটনা ব্যাপকভাবে প্রকাশ পাবে। হাদিসে পাকে এরকম দুটি ঘটনা ওঠে এসেছে। তাহলো-
হজরত আউফ ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, আমি তাবুক যুদ্ধে আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে এলাম। তখন তিনি একটি চামড়ার তৈরি তাঁবুতে ছিলেন। আল্লাহর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন-
اعْدُدْ سِتًّا بَيْنَ يَدَيْ السَّاعَةِ
কেয়ামতের আগের ছয়টি নিদর্শন গণনা করে রাখো-
১. مَوْتِيْ : আমার মৃত্যু।
২. ثُمَّ فَتْحُ بَيْتِ الْمَقْدِسِ : এরপর বায়তুল মুকাদ্দাস বিজয়।
৩. ثُمَّ مُوْتَانٌ يَأْخُذُ فِيكُمْ كَقُعَاصِ الْغَنَمِ : এরপর তোমাদের মধ্যে ঘটবে মহামারী, বকরীর পালের মহামারীর মতো।
৪. ثُمَّ اسْتِفَاضَةُ الْمَالِ حَتَّى يُعْطَى الرَّجُلُ مِائَةَ دِيْنَارٍ فَيَظَلُّ سَاخِطًا : সম্পদের প্রাচুর্য, এমনকি এক ব্যক্তিকে একশ’ দিনার দেওয়ার পরেও সে অসন্তুষ্ট থাকবে।
৫. ثُمَّ فِتْنَةٌ لَا يَبْقَى بَيْتٌ مِنْ الْعَرَبِ إِلَّا دَخَلَتْهُ : এরপর এমন এক ফিতনা আসবে যা আরবের প্রতিটি ঘরে প্রবেশ করবে।
৬. ثُمَّ هُدْنَةٌ تَكُوْنُ بَيْنَكُمْ وَبَيْنَ بَنِي الأَصْفَرِ فَيَغْدِرُوْنَ فَيَأْتُوْنَكُمْ تَحْتَ ثَمَانِيْنَ غَايَةً تَحْتَ كُلِّ غَايَةٍ اثْنَا عَشَرَ أَلْفًا
এরপর যুদ্ধ বিরতির চুক্তি-যা তোমাদের ও বানী আসফার বা রোমকদের মধ্যে সম্পাদিত হবে। এরপর তারা বিশ্বাসঘাতকতা করবে এবং ৮০টি পতাকা উড়িয়ে তোমাদের বিপক্ষে আসবে; প্রত্যেক পতাকার নীচে থাকবে ১২ হাজার সৈন্য। (বুখারি ৩১৭৬)
অন্য বর্ণনায় হজরত আনাস রাদিয়াল্লাহু আনহু সাহাবায়ে কেরামের উদ্দেশ্যে বর্ণনা করেছেন, আমি তোমাদের কাছে একটি হাদিস বর্ণনা করব; যা আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে শুনেছি এবং আমি ছাড়া আর কেউ সে হাদিস বলতে পারবে না।
আমি রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলতে শুনেছি; কেয়ামতের আলামতের মধ্যে রয়েছে-
১. ইলম ওঠে যাবে; ২. অজ্ঞতা বেড়ে যাবে; ৩. ব্যভিচার বেড়ে যাবে; ৪. ম'দ পানের মাত্রা বেড়ে যাবে; ৫. পুরুষের সংখ্যা কমে যাবে এবং ৬. নারীর সংখ্যা (এমনভাবে) বেড়ে যাবে যে, একজন পুরুষকে পঞ্চাশজন নারীর দেখাশুনা করতে হবে।’ (বুখারি)
আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে কেয়ামত আসার আগে পরকালের যথাযথ প্রস্তুতি গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন। নিজেদের মুসলিম হিসেবে তৈরি করার তাওফিক দান করুন। আমিন।