সাজ্জাদ হোসেন: শিক্ষাজীবনে সফলতা লাভের জন্য এখন পর্যন্ত যত রুটিন তৈরি হয়েছে সেগুলের মধ্যে মাদরাসার হিফজ বিভাগের রুটিন সবচেয়ে কঠিন। অন্যসব পড়ালেখার রুটিন দিনের নির্দিষ্ট কয়েকটি ঘণ্টার হলেও হিফজ বিভাগের রুটিন দিনের চব্বিশ ঘণ্টার সঙ্গেই সম্পৃক্ত। ইসলামিক বিশেষজ্ঞদের মতে, হাফেজ হওয়ার জন্য প্রয়োজন হয় কঠোর পরিশ্রম, সাধনা আর আল্লাহর বিশেষ রহমত। দিনের পর দিন কঠোর পরিশ্রম আর সাধনার পর যখন পবিত্র কুরআনের সম্পূর্ণটা নিজের মধ্যে ধারণ করতে পারে কোমলমতি শিশুরা, তখন তাদের বলা হয় হাফেজ।
হাফেজিয়া মাদরাসার রুটিন অনুযায়ী, প্রতিদিন ফজরের আজানের দেড়ঘণ্টা আগেই ঘুম থেকে উঠে ক্লাস শুরু করতে হয় হেফজখানার কোমলমতি শিশুদের। নামাজের দেড়ঘণ্টা পর হালকা নাস্তার জন্য মাত্র ১৫ মিনিটের বিরতি পায় তারা। পরে সকাল ৯টা পর্যন্ত টানা পড়াশুনা। এরপর খাওয়া-গোসলের মতো ব্যক্তিগত কাজ আর কিছুক্ষণ বিশ্রাম। দুপুর ১২টা বাজতেই আবার পড়তে বসতে হয় শিক্ষার্থীদের। পরে দুপুর সোয়া ১টা থেকে আড়াইটা পর্যন্ত যোহরের নামাজ ও দুপুরের খাবারের বিরতি। এরপর আবারও বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত পড়াশুনা শেষে বাদ আসর হতে মাগরীব পূর্ব পর্যন্ত ক্লাস বিরতি। বাদ মাগরীব হতে এশা পর্যন্ত নতুন সবক মুখস্থ করা। এশার নামাজ শেষে ৩০ মিনিট রাতের খাবারের জন্য ছুটি। এরপর থেকে রাত সোয়া ১০টা পর্যন্ত টানা পড়াশুনা শেষে কিছু সময় বিশ্রামের সুযোগ।
বিশিষ্ট ইসলামিক বক্তা হাফেজ মো. ফাহিম বিল্লাহ বলেন, হাফেজিয়া মাদরাসায় অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের বেশিরভাগেরই বস ৬-৭ বছর। সেসব শিশুর অনেকেই মাদরাসাতেই থাকে। হেফজখানায় শুধু কঠিন রুটিন পালনই নয়, কোমলমতি শিশুদের অনেক আত্মত্যাগও করতে হয়। যে বয়সে অন্য শিশুরা মা-বাবার আদরে জীবন কাটায়, সেই বয়সে পরিবার ছেড়ে মাদরাসায় আসে তারা। অন্যান্য শিশুদের মতো খেলাধুলারও অতোটা সুযোগ পায় না তারা।
ইসলামিক লেখক ও ময়মনসিংহের জামিয়া শায়খ আবদুল মোমিন মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ মাওলানা মুফতি মাহফুজ হোসাইনী বলেন, হাফেজি পড়া এক সাধনার নাম। হাফেজ হতে অনেক সাধনা, মেহনত, পরিশ্রম করতে হয়। পুরা কোরআন শরীফ মগজে আর অন্তরে ধারণ করা চাট্টিখানি কথা নয়। অন্যান্য শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের তুলনায় দেশের হাফেজি মাদরাসাগুলোর অবকাঠামো সম্পূর্ণ ভিন্ন, পরিবেশও আলাদা। হাফেজি মাদরাসায় দিনের ২৪ ঘণ্টায় সুবিন্যস্ত নিয়ম-কানুন।
তিনি বলেন, হাফেজি পড়ার সেই সোনালি অতীত এখনও আমার চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়। গভীর রাতে ঘুম থেকে উঠেই কোরআন তেলাওয়াতের মধ্য দিয়ে দিনের সূচনা। এরপর থেকে রাত ১০টা পর্যন্ত নিয়মতান্ত্রিকভাবে চলে কোরআন তেলাওয়াত। মাঝখানে খাওয়া, গোসল, নামাজ ও প্রাকৃতিক প্রয়োজন পূরণ। শিশু বয়সে এত নিয়মকানুন মাঝে মধ্যে অসহ্য মনে হতো। কিন্তু অসাধ্য সাধন করতে হলে আত্মত্যাগ করতেই হবে। যারা অধৈর্য হয়েছে তাদের কপালে হাফেজ হওয়ার সৌভাগ্য মেলেনি।
মহান আল্লাহ তায়ালার কাছে বিশেষ মর্যাদার অধিকারী এই হাফেজদের সম্মান জানানোর উদ্যোগ নিয়েছে দেশের শীর্ষ শিল্পগোষ্ঠী বসুন্ধরা গ্রুপ। হাফেজদের সম্মান জানাতে দেশের সর্ববৃহৎ হিফজুল কুরআন প্রতিযোগিতা ‘কুরআনের নূর-পাওয়ার্ড বাই বসুন্ধরা গ্রুপ’ এর আয়োজন করেছে প্রতিষ্ঠানটি।
গত রমজানে সারা মাসজুড়ে চলা এই প্রতিযোগতার জমকালো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান আগামীকাল শনিবার। একই সঙ্গে অনুষ্ঠিত হবে বিশাল ইসালামিক কনফারেন্স। শনিবার সন্ধ্যা ৬টায় ইন্টারন্যাশনাল কনভেনশন সিটি বসুন্ধরা (আইসিসিবি)-এর হল-৪ (নবরত্ন)-এ জমকালো এই আয়োজনের উদ্বোধন করবেন বসুন্ধরা গ্রুপের চেয়ারম্যান আহমেদ আকবর সোবহান।
বসুন্ধরা গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সায়েম সোবহান আনভীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থাকবেন আওলাদে রাসুল সায়্যিদ মুফতি আফফান মানসুরপুরী। বিশেষ অতিথি হিসেবে থাকবেন আল্লামা মুহাম্মদ ইয়াহইয়া ও বায়তুল মুকাররম জাতীয় মসজিদের খতিব আল্লামা মুফতি রুহুল আমীন। এ ছাড়া থাকবেন আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্বারি শায়খ ড. আহমাদ আহমাদ আহমাদ নাইনাসহ দেশের বিদেশের দুই হাজারেরও বেশি আলেম।
প্রতিযোগিতায় প্রথম বিজয়ী পাবেন নগদ ১০ লাখ টাকা ও সম্মাননা। এ ছাড়া দ্বিতীয় বিজয়ী পাবেন সাত লাখ টাকা ও সম্মাননা। তৃতীয় বিজয়ী পাবেন পাঁচ লাখ টাকা ও সম্মাননা। চতুর্থ ও পঞ্চম পুরস্কার হিসেবে দুজন দুই লাখ টাকা ও সম্মাননা পাবেন। এমনকি, সেরা আটে থাকা প্রতিযোগীরাও পাবেন এক লাখ টাকা আর্থিক পুরস্কার ও সম্মাননা। এ ছাড়া বিজয়ীরা পাবেন বাবা-মাকে সঙ্গে নিয়ে পবিত্র ওমরাহ পালনের সুযোগ।-কালের কণ্ঠ