ইসলাম ডেস্ক : রাসুল (সা.) রাষ্ট্রীয় চিঠি ও অন্যান্য নথিপত্রে সিল মোহর হিসেবে একটি রুপার আংটি ব্যবহার করতেন। (সহিহ বুখারি: ৫৮৭০) ওই আংটির গায়ে আরবিতে খোদাই করে ওপরে ‘আল্লাহ’, মাঝখানে ‘রাসুল’ এবং নিচে ‘মুহাম্মদ’ লেখা ছিল। যা নিচ থেকে পড়লে দাঁড়ায় ‘মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ’ অর্থাৎ ‘আল্লাহর রাসুল মোহাম্মদ।’ (সুনান তিরমিজি: ১৭৪৭)
হুদায়বিয়ায় মক্কার মুশরিকদের সাথে সন্ধি করার পর নবিজি যখন বিভিন্ন সাম্রাজ্যের রাজা-বাদশাহদের কাছে চিঠি পাঠানো শুরু করেন, তখন তার সিল মোহরের প্রয়োজন দেখা দেয় এবং তিনি এভাবে সিলমোহরটি তৈরি করেন।
বিভিন্ন বাদশাহের কাছে প্রেরিত রাসুলের (সা.) যেসব পত্র সংরক্ষিত আছে, সেগুলোতে তার এই সিল মোহরটির ছাপ এখনো দেখতে পাওয়া যায়। রাসুলের (সা.) ওফাতের পর তার স্থলাভিষিক্ত পরবর্তী দু’জন খলিফা আবু বকর (রা.) ও ওমর (রা.) এ আংটিটি ব্যবহার করেছিলেন। তাদের পর তৃতীয় খলিফা ওসমানও (রা.) প্রায় ছয় বছর আংটিটি ব্যবহার করেছিলেন। একদিন তার হাত থেকে রাসুলের (সা.) আংটি মদিনার আরিস নামক কূপে পড়ে যায়। এরপর ওসমানের (রা.) নিয়োজিত কর্মচারীরা লাগাতার তিনদিন আংটিটি খোঁজাখুঁজি করেন। কূপের সব পানি তুলে ফেলা হয়। কিন্তু আংটিটি খুঁজে পাওয়া যায়নি।
ঐতিহাসিকদের অনেকে মনে করেন, আংটিটি হারিয়ে যাওয়ার পর থেকেই ওসমানের (রা.) খেলাফতে অস্থিরতা দেখা দেয়। বিভিন্ন অঞ্চলে তার বিরুদ্ধে ক্ষোভ ও বিদ্রোহ দানা বাঁধে। দীর্ঘসময় ধরে অশান্তি ও অস্থিরতা চলতে থাকে এবং একপর্যায়ে তিনি শহিদ হন।
রাসুলের (সা.) আংটি যে কূপে পড়ে গিয়েছিল, সেটি মদিনার দক্ষিণ-পশ্চিমে কুবা মসজিদ থেকে ২০০ মিটার দূরে অবস্থিত। ১২ মিটার গভীর কূপটির নাম আরিস হয়েছিল এক ইহুদি ব্যক্তির নাম অনুসারে। রাসুলের আংটি পড়ে যাওয়ার কারণে এ কূপের পানিকে কেউ কেউ বিশেষ বরকতময় মনে করেন।
হারিয়ে যাওয়ার পর রাসুলের (সা.) ঐতিহাসিক আংটি পাওয়ার ব্যাপারে কিছু জানা যায়নি। বর্তমানে তুরস্কের একটি জাদুঘরে স্বর্ণের একটি আংটি সংরক্ষিত আছে। যার গায়ে রাসুলের সিল মোহরের অনুরূপ লেখা খোদাইকৃত আছে। অনেকে দাবি করেন, এটি রাসুলের (সা.) আংটি। কিন্তু এ ব্যাপারে শক্তিশালী কোনো প্রমাণ নেই। বরং এটি রাসুলের আংটি না হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।
শক্তিশালী রেওয়ায়াত অনুযায়ী রাসুলের (সা.) মোহরাঙ্কিত আংটিটি ছিল রৌপ্যের, স্বর্ণের নয়। পুরুষের স্বর্ণ ব্যবহার নিষিদ্ধ হওয়ার আগে রাসুল (সা.) স্বর্ণের আংটি ব্যবহার করেছেন। কিন্তু সেটাতে তার মোহর অঙ্কিত ছিল না।