শুক্রবার, ০৮ সেপ্টেম্বর, ২০২৩, ১২:২৩:০৫

জুমার দিনে ইসলামের ইতিহাসে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে

জুমার দিনে ইসলামের ইতিহাসে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে

ইসলাম ডেস্ক : সপ্তাহে ৭ দিনের মধ্যে অন্যান্য দিনে তুলনায় জুম্মার দিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং তাৎপর্যপূর্ণ। কারণ এই জুমার দিনে ইসলামের ইতিহাসে অনেক বড় বড় ঘটনা ঘটেছে। এই জুমার দিনের গুরুত্ব সম্পর্কে অনেক হাদিস রয়েছে। আমরা অনেকেই জুম্মার দিনের ফজিলত জানিনা।

যদি আপনি জুম্মার দিনের ফজিলত না জানেন তাহলে এই পোস্ট আপনার জন্য। এছাড়াও এই পোস্টে জুম্মা মোবারক এর হাদিস দেয়া হয়েছে। আপনারা জুম্মার দিনের ফজিলত এবং জুম্মা মোবারক এর হাদিস জানতে পারবেন। তাহলে এবার জুম্মা মোবারক এর হাদিস ও জুম্মার দিনের ফজিলত জেনে নিন- জুম্মা মোবারক এর হাদিস জুম্মার দিনের ফজিলত

জুম্মার দিন নিয়ে কিছু কথাঃ
সপ্তাহের সাত দিনের মধ্যে জুম্মার দিন হচ্ছে অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। শুক্রবার আমাদের স্কুল কলেজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সহো সকল অফিস আদালত বন্ধ থাকে। যার কারণে আমরা ফজিলতময় এই শুক্রবার আল্লার ইবাদতে কাটতে পারি। অনেক হাদিসে শুক্রবার অর্থাৎ জুম্মার দিনের ফজিলত সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছে।

প্রত্যেক মুসলমানের কর্তব্য জুম্মার দিনে বিশেষ আমলগুলো করা। শুক্রবার অর্থাৎ জুমার দিনের গুরুত্বপূর্ণ একটি নামাজ হচ্ছে জুম্মার নামাজ। শুক্রবারের দিন জোহরের নামাজের পরিবর্তে জুম্মার নামাজকে ফরজ করা হয়েছে। জুমার দুই রাকাত ফরজ নামাজ এবং ইমামের খুতবাকে জোহরের চার রাকাত ফরজ নামাজের স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে।

সপ্তাহের এই জুমার দিনে খতিব তাঁর খুতবায় উম্মতের যাবতীয় প্রয়োজনীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে কোরআন ও হাদিসের আলোকে নির্দেশনা ও উপদেশ দেবেন। এই পবিত্র জুম্মা মোবারক এর অনেক হাদিস এবং ফজিলত রয়েছে। এবার তাহলে জুম্মা মোবারক এর হাদিস এবং জুম্মার দিনের ফজিলত জেনে নিন-

জুম্মা মোবারক এর হাদিসঃ
আমরা সকলেই জানি জুমার দিন হচ্ছে অন্যান্য দিনের তুলনায় ফজিলতময় একটি দিন। জুমার দিনের গুরুত্ব ইসলামে অনেক বেশি হওয়ায় রাসূল (সাঃ) বিভিন্ন হাদিসে জুমার দিন সম্পর্কে বর্ণনা করেছেন।

আমরা রাসূল (সাঃ) এর জুমার দিন সম্পর্কিত হাদিস থেকে জুমার দিনের গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে ধারণা পেয়ে থাকি। নিম্নে সকল গুরুত্বপূর্ণ জুম্মা মোবারক এর হাদিস দেয়া হলো-

রাসুল (সা.) হাদিসে বলেছেনঃ
– মুমিনের জন্য জুমার দিন হলো সাপ্তাহিক ঈদের দিন।
(ইবনে মাজাহ, হাদিস নম্বর ১০৯৮)।

রাসুল (সা.) ইরশাদ করেনঃ 
– যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন হচ্ছে সর্বোত্তম। ওই দিন হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং ওই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। এছাড়াও ওই দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে।

– (মুসলিম শরিফ , হাদিস নম্বর ৮৫৪)

মহানবী (সা.) ইরশাদ করেনঃ – জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি সময় রয়েছে। কোনো মুসলিম যদি সেই সময়টা পায় এবং তখন যদি সে নামাজে থাকে, তাহলে তার যেকোনো কল্যাণ কামনা আল্লাহ পূরণ করেন।
– (বুখারি, হাদিস নম্বর ৬৪০০)

রাসুল (সা.) এরশাদ করেছেনঃ তোমরা জুমার দিনে আমার ওপর বেশি বেশি দরুদ পাঠ করো। কেননা তোমাদের পাঠকৃত দরুদ আমার সামনে পেশ করা হয়। – (আবু দাউদ, হাদিস নম্বর ১০৪৭)।

হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেনঃ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
“কেয়ামতের দিন আমরা সর্বশেষ উম্মত কিন্তু অগ্রগামী হবো। যদিও আমাদের আগে সব উম্মতকে (আসমানি) কিতাব দেওয়া হয়েছে, আর আমাদেরকে সব উম্মতের শেষে কিতাব দেওয়া হয়েছে।

এরপর যে দিনটি আল্লাহ আমাদের জন্য নির্ধারণ করেছেন, সেদিন সম্পর্কে তিনি আমাদের হেদায়াতও দান করেছেন। সেদিনের ব্যাপারে অন্যান্যরা আমাদের পেছনে রয়েছে। (যেমন)- ইয়াহুদিরা (আমাদের) পরের দিন (শনিবার) এবং খৃষ্টানরা তাদেরও পরের দিন (রোববার)।”

– (মুসলিম)

হজরত আবু হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেছেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
“জুমার দিনে ফেরেশতাগণ বিশেষ রেজিস্টার নিয়ে মসজিদের প্রতিটি দরজায় দাঁড়িয়ে যান। তাঁরা ধারাবাহিকভাবে মসজিদে আগমনকারী মুসল্লিদের নাম লিখতে থাকেন। এরপর যখন ইমাম মিম্বারে আসেন তখন ফেরেশতারা রেজিস্টার বন্ধ করে খুতবা শুনতে থাকেন।

সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করা ব্যক্তি একটি উট আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করার সাওয়াব লাভ করে। যে দুই নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করার সাওয়াব পায়। যে তিন নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি দুম্বা কোরবানি করার সাওয়াব পায়। যে চার নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি মুরগি দান করার সাওয়াব লাভ করে। আর যে পাঁচ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সাওয়াব পায়।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে শাফি, মুসনাদে হুমাইদি)

হজরত আবু হুরায়রাহ (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেনঃ
“যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার নামাজে এলো, এরপর সাধ্যমত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করলো, এরপর ইমামের খুতবাহ শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকলো। এরপর ইমামের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করলো, এতে তার দুই জুমার মধ্যবর্তী দিনসমূহ এবং আরো তিন দিন (মোট ১০ দিনের) গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” – (মুসলিম)

হজরত সালমান রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
“যে ব্যক্তি জুমার দিনে সুন্দর করে গোসল করবে, এরপর তেল ব্যবহার করবে এবং সুগন্ধি নেবে, তারপর মসজিদে গমন করবে, দুই মুসল্লির মাঝে জোর করে জায়গা নেবে না, সে নামাজ আদায় করবে এবং ইমাম যখন খুতবা দেবেন, (তখন) চুপ করে মনোযোগসহকারে তাঁর খুতবা শুনবে। দুই জুমার মধ্যবর্তী সময়ে তার সব গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হবে।”
– (আবু দাউদ)

হজরত আনাস ইবনু মালিক রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
“জুমার দিনের যে মুহুর্তে (দোয়া কুবুল হওয়ার) আশা করা যায় তা আসরের পর থেকে সূর্যাস্তের মধ্যে তালাশ করো।”
– (তিরমিজি, মুসলিম, মিশকাত, তালিকুর রাগিব)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনু ওমর ও আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেছেন, তারা উভয়ে রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তার মিম্বারের সিড়িতে দাঁড়িয়ে বলতে শুনেছেন, “যারা জুমার নামাজ ত্যাগ করে তাদেরকে এই অভ্যাস বর্জন করতে হবে। নতুবা আল্লাহ তাদের অন্তরে সীল মোহর মেরে দিবেন। এরপর তারা গাফিলদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাবে।’
– (মুসলিম)

হজরত আবু সাঈদ খুদরি রাদিয়াল্লাহু আনহু রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণনা করেন-
– যে ব্যক্তি জুমআর দিন সুরা কাহাফ পাঠ করবে তার জন্য এক জুমআ থেকে অপর (পরবর্তী) জুমআ পর্যন্ত নূর হবে।

হজরত আলি রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন-
– যে ব্যক্তি জুমআর দিন সুরা কাহাফ তেলাওয়াত করবে, সে আট দিন পর্যন্ত সর্বপ্রকার ফেতনা থেকে মুক্ত থাকবে। যদি দাজ্জাল বের হয় তবে সে দাজ্জালের ফেতনা থেকেও মুক্ত থাকবে।

নৈকট্যপ্রাপ্ত ফেরেশতারা পর্যন্ত জুমার দিন (কিয়ামতের আশঙ্কায়) ভীত-সন্ত্রস্ত থাকে। পৃথিবী, আকাশ, বাতাস, পাহাড়, পর্বত, সাগর সবকিছু জুমার দিন (কিয়ামতের আশঙ্কায়) উদ্বিগ্ন থাকে।
– মুসান্নাফে ইবনে আবী শায়বা, হাদীস ৫৫৫৯; মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১৫৫৪৮; সুনানে ইবনে মাজাহ, হাদীস ১০৮৪১

আবু হুরায়রা (রা) বলেন, রাসূলে কারীম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
– বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে অর্থাৎ জুমার রাতে মানুষের আমল আল্লাহর সামনে পেশ করা হয়। তখন আত্মীয়তার সম্পর্ক ছিন্নকারীদের আমল কবুল করা হয়না। – মুসনাদে আহমাদ, হাদীস ১০২৭২; আলআদাবুল মুফরাদ, হাদীস ৬১২

আনাস ইবনে মালেক রা. বর্ণনা করেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন-
– জিবরীল আলাইহিস সালাম আমার কাছে এসেছেন শুভ্র আয়নার মত একটা জিনিস নিয়ে। আয়নাটিতে একটি কালো দাগ। আমি বললাম, এটা কী? জিবরীল আলাইহিস সালাম বলেছেন, এটি হল জুমার দিন। এ দিনকে আল্লাহ তাআলা আপনার এবং আপনার উম্মতের জন্য ঈদের দিন বানিয়ে দিয়েছেন।

সুতরাং আপনারা ইহুদী ও নাসারা থেকে অগ্রগামী। (তাদের বিশেষ ইবাদতের দিন যথাক্রমে শনিবার ও রবিবার, যা জুমার দিনের পরে আসে।) এই দিন একটা সময় আছে, যে সময় বান্দা আল্লাহর কাছে যে কল্যাণই প্রার্থনা করে আল্লাহ তাকে তা-ই দান করেন। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি জিজ্ঞেস করলাম, জুমার দিনকে কালো দাগ দিয়ে চিহ্নিত করা হল কেন?

জিবরীল আলাইহিস সালাম জবাব দিয়েছেন, এই যে কিয়ামত দিবস তা এ দিনেই সংঘঠিত হবে। আখেরাতে৩ জুমার দিনকে আমরা ‘ইয়াউমুল মাযীদ’ নামে স্মরণ করব। নবীজী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, আমি প্রশ্ন করলাম, ‘ইয়াউমুল মাযীদ’ কী? জিবরীল আলাইহিস সালাম উত্তর দিয়েছেন, জান্নাতে আল্লাহ তাআলা প্রশস্ত ও সুগন্ধময় একটা উপত্যকা বানিয়েছেন এবং এতে তিনি শুভ্র মেশকের একাধিক টিলা স্থাপন করেছেন।

জুমার দিন এলে আল্লাহ তাআলা এ উপত্যকায় অবতরণ করবেন। তখন সেখানে নবীগণের জন্য স্বর্ণের মিম্বরসমূহ রাখা হবে, শহীদগণের জন্য মুক্তার অনেক চেয়ার পাতা হবে এবং জান্নাতী হুরেরা আপন আপন কক্ষ থেকে অবতরণ করবে। এরপর সকলে মিলে আল্লাহ তাআলার প্রশংসা ও মাহাত্ম্যের স্তুতি গাইতে থাকবে।

জিবরীল আলাইহিস সালাম আরো বলেন, এরপর আল্লাহ তাআলা ঘোষণা করবেন, হে ফেরেশতারা! আমার বান্দাদের বিশেষ পোশাক পরিধান করাও। সে অনুযায়ী তাদের সজ্জিত করা হবে। তখন আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দেবেন, আমার বান্দাদের জন্য বিশেষ খাদ্য পরিবেশন কর। আল্লাহর নির্দেশ মোতাবেক তাদের জন্যই বিশেষ ভোজনের ব্যবস্থা করা হবে।

এরপর আল্লাহ তাআলা বলবেন, আমার বান্দাদের সামনে বিশেষ পানীয় উপস্থিত কর। সে হিসাবে তাদের সামনে পানীয় পরিবেশন করা হবে। এরপর আল্লাহ তাআলার আদেশ, আমার বান্দাদের আতর-খোশবু লাগিয়ে দাও। তখন তাদেরকে সুরভিত করা হবে। এবার আল্লাহ তাআলা জিজ্ঞেস করবেন, (হে আমার বান্দারা!) তোমরা আমার কাছে কী চাও?

তারা বলবে, হে আমাদের রব! আমরা কেবল আপনার রিযা ও সন্তুষ্টি কামনা করি। আল্লাহ তাআলা উত্তর দেবেন, আমি তোমাদের প্রতি রাজি হয়ে গেছি। (তবারানীর বর্ণনায় আছে, অতঃপর আল্লাহ তাআলা তাদের জন্য এমন এমন নিআমতের দ্বার উন্মুক্ত করবেন, যা কখনো কোনো চোখ দেখেনি এবং কোনো হৃদয় কল্পনা করেনি।)

তারপর সবাইকে নিজ নিজ স্থানে চলে যাওয়ার জন্য আল্লাহ তাআলা নির্দেশ করবেন। সকলে আপন আপন জান্নাতে চলে যাবে এবং হুরেরা ঐসব কক্ষে আরোহণ করবে, যার প্রত্যেকটিই সবুজ (মূল্যবান রত্ন) পান্না বা লাল ইয়াকুতের তৈরি।
তথ্যসূত্রঃ (মুসনাদে আবু ইয়ালা, হাদীস ৪২২৮; মুজামে আওসাত, তবারানী ৩/৫৫, হাদীস ২১০৫৪)

হজরত আবু হুরায়রা রা: থেকে বর্ণিত, নবীজী সা: বলেনঃ
– আমাদের পূর্ববর্তী উম্মতকে জুমার দিন সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা অজ্ঞ রেখেছেন। ইহুদিদের ফজিলতপূর্ণ দিবস ছিল শনিবার। খ্রিষ্টানদের ছিল রোববার। অতঃপর আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে দুনিয়ায় পাঠালেন এবং জুমার দিনের ফজিলত দান করলেন। সিরিয়ালে শনি ও রোববারকে শুক্রবারের পরে রাখলেন। দুনিয়ার এই সিরিয়ালের মতো কেয়ামতের দিনও ইহুদি খ্রিষ্টানরা মুসলমানদের পরে থাকবে। আমরা উম্মত হিসেবে সবার শেষে এলেও কেয়ামতের দিন সব সৃষ্টির আগে থাকব।
– (মুসলিম-১৪৭৩)।

রাসূলুল্লাহ সা: ইরশাদ করেনঃ
– জুমার দিনকে আল্লাহ তায়ালা মুসলমানদের জন্য ঈদের দিন বানিয়েছেন।
– (সহিহ ইবনে মাজাহ-৯০৮)।

 হাদিস শরিফে এরশাদ হয়েছেঃ
– কোনো মুসলমান শুক্রবারে রাতে কিংবা দিনে ইন্তেকাল করলে আল্লাহ তায়ালা তাকে কবরের আজাব থেকে রক্ষা করবেন।
– (তিরমিজি-১০৭৪)।

আল্লাহ তায়ালা ইরশাদ করেনঃ
– ‘হে মুমিনগণ! জুমার দিনে যখন নামাজের আজান দেয়া হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণে দ্রুত ছুটে যাও এবং বেচাকেনা বন্ধ করো। এটা তোমাদের জন্য উত্তম যদি তোমরা বোঝো’। – (সূরা জুমা, আয়াত : ৯)।

হজরত তারেক ইবনে শিহাব (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণিত হয়েছে। তিনি বলেছেনঃ
– রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, ক্রীতদাস, মহিলা, নাবালেগ বাচ্চা ও অসুস্থ ব্যক্তি। এই চার প্রকার মানুষ ছাড়া সকল মুসলমানের ওপর জুমার নামাজ জামাতে আদায় করা অপরিহার্য কর্তব্য (ফরজ)।
– (আবু দাউদ : ১০৬৭, মুসতাদরেকে হাকেম : ১০৬২ , আস্-সুনানুল কাবীর : ৫৫৮৭)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে এ মর্মে হাদিস বর্ণিত হয়েছে যে রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেনঃ
– যে ব্যক্তি কোনো শরীয়তসম্মত কারণ ছাড়া জুমার নামাজ বর্জন করবে, তার নাম মুনাফিক হিসেবে এমন দপ্তরে লিপিবদ্ধ হবে, যা মুছে ফেলা হবে না এবং পরিবর্তন ও করা যাবে না। – (তাফসিরে মাজহারি ,খণ্ড : ৯ , পৃষ্ঠা : ২৮৩)

হজরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ (রা.) এ মর্মে হাদিস বর্ণনা করেছেন যেঃ
– রাসূলুল্লাহ (স.) যে সমস্ত লোক জুমার নামাজ থেকে দূরে থাকে (পড়ে না) তাদের সম্পর্কে বলেছেন, নিশ্চয়ই আমার ইচ্ছা হয় যে আমি কাউকে নামাজ পড়ানোর আদেশ করি, সে মানুষকে নামাজ পড়াক। অতঃপর যে সমস্ত লোক জুমার নামাজ পড়ে না, আমি তাদের ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দিই।

– (মুসলিম : ৬৫২, মুসনাদে আহমাদ : ৩৮১৬, মুসনাদে ইবনে আবি শাইবা : ৫৫৩৯, আসু-সুনানুল কুবরা : ৪৯৩৫)

এই ছিল সকল জুম্মা মোবারক এর হাদিস। উপরে জুমার দিনের সকল হাদিস দেয়া হয়েছে। আশা করছি আপনারা জুম্মা মোবারক এর সকল হাদিস সম্পর্কে জানতে পেরেছেন। এবার আপনারা জুম্মার দিনের ফজিলত জেনে নিন-

জুম্মার দিনের ফজিলতঃ
মুসলমানদের জন্য জুমার দিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতের একটি দিন। ইসলামের দৃষ্টিতে জুমার দিন একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতের দিন। এই দিনকে সাপ্তাহিক ঈদের দিনও বলা হয়েছে। এছাড়াও বলা হয়ে থাকে যে জুমার দিন গরীবের জন্য হজের দিন। জুমার গুরুত্ব আল্লাহ তায়ালার কাছে এত বেশি যে, তিনি কোরআনে ‘জুমা’ নামে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাজিল করেছেন।

এক হাদিসে নবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, যে দিনগুলোতে সূর্য উদিত হয়, ওই দিনগুলোর মধ্যে জুমার দিন সর্বোত্তম। ওই দিন হজরত আদমকে (আ.) সৃষ্টি করা হয়েছে। ওই দিন তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হয় এবং ওই দিনই তাকে জান্নাত থেকে বের করে দেওয়া হয়। আর ওই দিনই কিয়ামত অনুষ্ঠিত হবে। (মুসলিম শরিফ , হাদিস নম্বর ৮৫৪) এ থেকে স্পষ্ট যে সপ্তাহে অন্যান্য দিনের তুলনায় জুমার দিন অনেক গুরুত্বপূর্ণ এবং ফজিলতের দিন।

জুমার দিন দোয়া কবুল হওয়ার একটি সময় রয়েছে। কোনো মুসলিম যদি সেই সময়টা পায় এবং তখন যদি সে নামাজে থাকে, তাহলে তার যেকোনো কল্যাণ কামনা আল্লাহ পূরণ করেন। এতে বোঝা যায় জুমার দিনের ফজিলত অনেক। আমাদেরকে জুমার দিনে আল্লাহর এবাদত করে কাটিয়ে দিতে হবে।

এছাড়াও হাদিসে এসেছে রাসূল সাঃ বলেছেন- “যে ব্যক্তি গোসল করে জুমার নামাজে এলো, এরপর সাধ্যমত (সুন্নাত) নামাজ আদায় করলো, এরপর ইমামের খুতবাহ শেষ হওয়া পর্যন্ত চুপ থাকলো। এরপর ইমামের সঙ্গে জুমার নামাজ আদায় করলো, এতে তার দুই জুমার মধ্যবর্তী দিনসমূহ এবং আরো তিন দিন (মোট ১০ দিনের) গুনাহ ক্ষমা করে দেওয়া হয়।” (মুসলিম)

শুক্রবার জুমার নামাজে যেসব ব্যক্তি মসজিদে তাড়াতাড়ি আসবে আল্লাহ তাদের জন্য পুরস্কারের ব্যবস্থা করেছেন। সবার আগে মসজিদে প্রবেশ করা ব্যক্তি একটি উট আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করার সাওয়াব লাভ করে। যে দুই নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি গরু আল্লাহর রাস্তায় কোরবানি করার সাওয়াব পায়। যে তিন নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি দুম্বা কোরবানি করার সাওয়াব পায়। যে চার নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি মুরগি দান করার সাওয়াব লাভ করে। আর যে পাঁচ নম্বরে প্রবেশ করে, সে একটি ডিম আল্লাহর রাস্তায় দান করার সাওয়াব পায়।’ (বুখারি, মুসলিম, মুসনাদে শাফি, মুসনাদে হুমাইদি)

এই ছিল জুম্মার দিনের ফজিলত। এগুলো ছাড়াও জুম্মার দিনের আরো অনেক ফজিলত রয়েছে। আশা করছি আপনারা উপরের জুম্মা মোবারক এর হাদিস থেকে জুম্মার দিনের ফজিলত সম্পর্কে জানতে পেরেছেন।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে