মুফতি মুহাম্মদ মর্তুজা: একটি গুণ এমন আছে, যা মানুষকে মহান আল্লাহর প্রিয় করে তোলে। আল্লাহর রহমতের ছায়ায় আশ্রয় দেয়। সে মহান গুণটি হলো দয়া ও আন্তরিকতা। যে ব্যক্তি অন্যের প্রতি দয়া করে, অন্যের প্রতি আন্তরিক হয়, তার ওপর মহান আল্লাহও দয়া করেন।
পরস্পর দয়া ও আন্তরিকতার প্রতি গুরুত্ব দিতে গিয়ে মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, আল্লাহ তাআলা দয়ালুদের ওপর দয়া ও অনুগ্রহ করেন। যারা জমিনে বসবাস করছে, তাদের প্রতি তোমরা দয়া করো, তাহলে যিনি আকাশে আছেন তিনি তোমাদের প্রতি দয়া করবেন। দয়া রহমান থেকে উদগত। যে লোক দয়ার সম্পর্ক বজায় রাখে আল্লাহ তাআলাও তার সঙ্গে নিজ সম্পর্ক বজায় রাখেন।
যে লোক দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করে, আল্লাহ তাআলাও তার সঙ্গে দয়ার সম্পর্ক ছিন্ন করেন। (তিরমিজি, হাদিস : ১৯২৪)
অন্য একটি হাদিসে নবী (সা.) দয়ালু ও আন্তরিক মানুষদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন। সেখানে নবীজি (সা.) মূলত তিন শ্রেণির মানুষের ব্যাপারে জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন, তার মধ্যে অন্যতম হলো দয়ালু ও আন্তরিক মানুষ। রাসুল (সা.) তাঁর এক খুতবায় বলেন, তিন শ্রেণির মানুষ জান্নাতি হবে।
এক প্রকার মানুষ তাঁরা, যাঁরা রাষ্ট্রীয় কর্ণধার, ন্যায়পরায়ণ, সত্যবাদী এবং নেক কাজের তাওফিক লাভে ধন্য লোক। দ্বিতীয়ত ওই সব মানুষ, যাঁরা দয়ালু এবং আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কোমলচিত্ত। তৃতীয়ত ওই শ্রেণির মানুষ, যাঁরা পূত-পবিত্র চরিত্রের অধিকারী, যাঞ্চাকারী নয় এবং সন্তানাদি সম্পন্ন লোক। (মুসলিম, হাদিস : ৭০৯৯)
এই হাদিসে নবীজি (সা.) দয়ালু এবং আত্মীয়-স্বজন ও মুসলিম সম্প্রদায়ের প্রতি কোমলচিত্ত লোকদের জন্য জান্নাতের সুসংবাদ দিয়েছেন।
শুধু আত্মীয়-স্বজনই নয়, যেকোনো অসহায় মানুষের প্রতি দয়া প্রদর্শনে আল্লাহর রহমত পাওয়া যায়। যেমন—বিধবা ও মিসকিনদের প্রতি দয়া করে তাদের জন্য খাবার সংগ্রহে সচেষ্ট ব্যক্তিকে মুজাহিদের সঙ্গে তুলনা করা হয়েছে। রাসুল (সা.) বলেছেন, বিধবা ও মিসকিনের জন্য খাদ্য জোগাড় করতে চেষ্টারত ব্যক্তি আল্লাহর রাস্তায় মুজাহিদের মতো অথবা রাতে নামাজে দণ্ডায়মান এবং দিনে সিয়ামকারীর মতো। (বুখারি, হাদিস : ৫৩৫৩)
উল্লেখ্য, আল্লাহর রাস্তায় সংগ্রামকারীদের মুজাহিদ বলা হয়, যারা আল্লাহর কাছে অনেক দামি। তদ্রূপ রাতে দাঁড়িয়ে নামাজ আদায় ও দিনের বেলায় রোজা রাখাও অত্যন্ত ফজিলতপূর্ণ আমল।
এমনকি নিজ সন্তানের প্রতি দয়া ও ভালোবাসা মানুষের স্বভাবজাত বিষয়। এই স্বভাবজাত ভালোবাসার বিনিময়েও মহান আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন করা যায়। নিজ সন্তানের জন্য ত্যাগ করলেও মহান আল্লাহ খুশি হন। হাদিস শরিফে ইরশাদ হয়েছে, আয়েশা (রা.) বলেন, একবার এক অসহায় স্ত্রী তার দুটি মেয়ে সন্তানসহ আমার কাছে এলো। আমি তাদের তিনটি খেজুর খেতে দিলাম। সে দুই মেয়ের প্রত্যেককে একটি করে খেজুর দিল এবং একটি নিজে খাওয়ার জন্য তার মুখে তুলল। সেই মুহূর্তে মেয়ে দুটি এ খেজুরটিও খেতে চাইল। সে তখন নিজে খাওয়ার জন্য যে খেজুরটি মুখে তুলেছিল সেটি তাদের উভয়ের মধ্যে বণ্টন করে দিল। তার এ আচরণ আমাকে আশ্চর্য করে দিল। পরে আমি সে যা করেছে তা রাসুলুল্লাহ (সা.)-এর সমীপে আলোচনা করলাম। তিনি বলেন, আল্লাহ তাআলা এ কারণে তার জন্য জান্নাত আবশ্যক করে দিয়েছেন অথবা তিনি তাকে এ কারণে জাহান্নাম থেকে মুক্তি দিয়েছেন। (মুসলিম, হাদিস : ৬৫৮৮)
এর বিপরীতে যারা মানুষকে ভালোবাসে না, মানুষের প্রতি দয়া করে না, মহান আল্লাহও তাদের ভালোবাসেন না এবং তাদের প্রতি রহম করেন না। জারির ইবনে আবদুল্লাহ (রা.) বলেন, রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, আল্লাহ তার প্রতি রহম করেন না, যে মানুষের প্রতি রহম করে না। (বুখারি, হাদিস : ৭৩৭৬)
তাই আমাদের উচিত, মা-বাবা, সন্তান-সন্ততি থেকে শুরু করে প্রত্যেক মুমিনকে ভালোবাসা। অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়ানোর চেষ্টা করা। হয়তো এর বিনিময়েও মহান আল্লাহ আমাদের ক্ষমা করে দিতে পারেন।