বৃহস্পতিবার, ০৪ জানুয়ারী, ২০২৪, ০৮:৪৬:৪২

আল্লাহর কাছে সহজেই প্রিয় করে তোলে এমন ৪টি গুণ

আল্লাহর কাছে সহজেই প্রিয় করে তোলে এমন ৪টি গুণ

নুরুদ্দীন তাসলিম: প্রতিদিন চলাফেরায় মানুষের সামনে খুশি হওয়ার মতো অনেক কিছু ঘটে। আবার অনেক সময় মন খারাপ করার মতো পরিস্থিতি বা বিপদাপদও ঘটে থাকে। 

কখনো কখনো আল্লাহর নাফরমানি হয়ে যায়, ছোট ছোট গুনাহেও লিপ্ত হয়ে পড়ে মানুষ। এইসব পরিস্থিতিতে খুব সহজেই একজন মুসলিম আল্লাহর কাছে প্রিয় হতে পারবেন সহজ কিছু গুণ ও আমলের মাধ্যমে। এই আমলগুলো করতে অতিরিক্ত কোনো পরিশ্রম করতে হবে না। শুধু একটু সদিচ্ছাই আল্লাহর প্রিয় করে তুলবে।

আল্লাহর কাছে সহজেই প্রিয় করে তোলে এমন ৪টি গুণ হলো-

শোকর (কৃতজ্ঞতা)।
সবর (ধৈর্য)।
 ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)।
ইস্তিআযাহ (আশ্রয় চাওয়া)।

শোকর
প্রতিদিন ঘুম থেকে উঠে একজন মুসলিমের সর্বপ্রথম আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করা উচিত। আল্লাহ তায়ালা সুস্থভাবে আবার জীবন দিয়েছেন, সুস্থ রেখেছেন দিনের শুরুতেই এই নেয়ামতের শুকরিয়া আদায় করা উচিত। এজন্য হাদিসে বর্ণিত ঘুম থেকে উঠার দোয়াটি পড়া যেতে পারে।

এর বাইরেও যেকোনো ভালো পরিস্থিতি, নেয়ামত লাভ বা অতীতে পাওয়া নেয়ামতের কথা স্মরণ করে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করা যেতে পারে

الحمد لله اللهم لك الحمد  ولك الشكر

সকল প্রশংসা আল্লাহর জন্য। হে আল্লাহ! আপনার জন্যই সকল প্রশংসা এবং আপনার জন্যই সকল কৃতজ্ঞতা।

সব কাজে আল্লাহ তায়ালার কৃতজ্ঞতা আদায়ের অভ্যাস গড়ে তুলতে পারলে তা নেয়ামত আরও বাড়িয়ে দেবেন। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত হয়েছে,‘...শিগগিরই আল্লাহ শোকর আদায়কারীদের প্রতিদান দেবেন।’ (সূরা আলে ইমরান, আয়াত, ১৪৪)

সবর বা ধৈর্য

সবর বা ধৈর্য একটি গুরুত্বপূর্ণ গুণ। প্রতিদিন মানুষ যেসব ঘটনা বা পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যায়, এতে এমন অনেক পরিস্থিতি আছে যা তার মনোপূত হয় না। তাকে কষ্ট দেয়। কখনো হয়তো কোনো প্রিয়জনের অসুস্থতা বা মৃত্যু সংবাদ শুনতে হয়, আবার কখনো আর্থিক লোকসানের কথাও শুনতে হয়।

পরিস্থিতি যেমনি হোক এ সময় আল্লাহ তায়ালার ওপর ভরসা রেখে ধৈর্যধারণ করতে হবে। তবে আল্লাহ তায়ালা সাহায্য করবেন। আর ধৈর্যশীলদের জন্য পবিত্র কোরআনে বিশেষ শান্ত্বনার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে, আল্লাহ তায়ালা নিজেই ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছে। বর্ণিত হয়েছে,  হে মুমিনগণ! তোমরা ধৈর্য ও নামাজের মাধ্যমে সাহায্য প্রার্থনা করো। নিশ্চয় আল্লাহ ধৈর্যশীলদের সঙ্গে রয়েছেন।’ (সূরা বাকারা, আয়াত, ১৫৩।

এক হাদিসে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, মুমিনের বিষয়টি বড় আশ্চর্য রকমের, বিপদে পড়লে এতে সে ধৈর্য ধরে আবার সুখে থাকলে আল্লাহ তায়ালার শুকরিয়া আদায় করে। তবে উভয় অবস্থাই তার জন্য কল্যাণকর। (সহিহ মুসলিম, হাদিস, ২৯৯৯)

ইস্তিগফার (ক্ষমা প্রার্থনা)
আল্লাহ তায়ালার কাছে প্রিয় হতে চাইলে ইস্তিগফার বা ক্ষমা প্রার্থনার বিকল্প নেই। প্রতিদিন মানুষ প্রবৃত্তির তাড়নায় জেনে-বুঝে ইচ্ছায় অনিচ্ছায় কত ধরনের গুনাহের কাজে জড়িয়ে পড়ে। তাই যেকোনো গুনাহে জড়িয়ে পড়লে তওবা করা উচিত। এবং আল্লাহর কাছে ক্ষমা চেয়ে ইস্তিগফার করা জরুরি।

ইস্তিগফারের প্রতি উদ্বুদ্ধ করে পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এবং আমি অবশ্যই ক্ষমাশীল তার প্রতি, যে তাওবা করে, ঈমান আনে, সৎকর্ম করে ও সৎপথে অবিচল থাকে।’ (সূরা ত্বহা, আয়াত, ৮২)

আরেক আয়াতে এসেছে, ‘যে ব্যক্তি কোনো মন্দ কাজ করে ফেলে বা নিজের প্রতি জুলুম করে বসে, তারপর আল্লাহর কাছে ক্ষমা চায়, সে অবশ্যই আল্লাহকে অতি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালুই পাবে।’ (সূরা নিসা, আয়াত, ১১০)

রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামের কোনো গুনাহ ছিল না। তিনি ছিলেন নিষ্পাপ। এরপরও তিনি দিনে-রাতে প্রচুর পরিমাণ ইস্তেগফার পাঠ করতেন। আল্লাহর কাছে কেঁদে কেঁদে দোয়া করতেন। 

হাদিসে এসেছে, হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু তায়ালা আনহু বর্ণনা করেন, আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহিস সালামকে বলতে শুনেছি, ‘আল্লাহর কসম! আমি প্রত্যহ আল্লাহর কাছে ৭০ বারেরও বেশি ইস্তেগফার ও তাওবা করে থাকি।’ (সহিহ বুখারি, হাদিস, ৬৩০৭)

ইস্তিআযাহ (আশ্রয় চাওয়া)
মানুষ বিপদাপদ, শয়তান ও প্রবৃত্তির প্রবঞ্চনা থেকে বেঁচে থাকার চেষ্টা করতে পারে। কিন্তু শত চেষ্টা করেও মানুষের পক্ষে তা করা সম্ভব হবে না এবং মানুষ বিপদ থেকে রক্ষা পাবে না যদি আল্লাহ তায়ালা তাকে সাহায্য না করেন। এজন্য প্রতি মুহুর্তে আল্লাহ তায়ালার কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে। এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করতে হবে।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে