মুফতি আবদুল্লাহ তামিম : স্বপ্ন দেখা একটি স্বাভাবিক বিষয়। মানুষ অনেক সময় নিজের চিন্তার বিষয়েও স্বপ্ন দেখে। অনেক সময় স্বপ্ন দেখে এর ব্যাখ্যা জানতে অস্থির হয়ে যায়।
এটা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। ঘুম হলো মানুষের ছোট মৃত্যু। ঘুমন্ত অবস্থাতেই সাধারণত আমরা স্বপ্ন দেখি। অনেক সময় স্বপ্নের বিষয়ে ভয়ও পেয়ে বসি আমরা। আজ কথা বলবো স্বপ্নে মাছ দেখলে কী হয়।
বিখ্যাত হাদিস বিশারদ ইবনে হাজার আসকালানি রহ. বলেন, ‘মানুষ যত স্বপ্ন দেখে তা মূলত দুই ধরনের হয়ে থাকে। সত্য স্বপ্ন। অসত্য স্বপ্ন। সত্য স্বপ্ন নবীদের ও তাদের অনুসারী নেককার লোকদের স্বপ্ন। দ্বিতীয় প্রকার হলো মিশ্র ধরনের মিথ্যা স্বপ্ন, যা কোনো ব্যাপারে সতর্ক করে। যেমন, শয়তানের খেলা যা দিয়ে কাউকে ভারাক্রান্ত করে তোলে। ফলে সে দেখে যে তার মাথা কেটে ফেলা হয়েছে।
সে সেই কাটা মাথার অনুসরণ করছে; অথবা সে এমন কোনো সংকটে পড়েছে যা থেকে উদ্ধার পাওয়ার জন্য কোনো সাহায্যকারী পাচ্ছে না। কিংবা সে দেখল যে, ফেরেশতারা তাকে কোনো হারাম কাজ করতে বলছে; অথবা এসব বিষয় যা সাধারণত অর্থহীন। এসব অর্থহীন স্বপ্ন। (ফাতহুল বারি ১২/৩৫২)
সত্য ও ভালো স্বপ্ন দেখলে আল্লাহর পক্ষ থেকে মনে করা ও আল্লাহর শুকরিয়া করা। আর মন্দ স্বপ্ন দেখলে শয়তান থেকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা। হজরত আবু সাঈদ খুদরি রা. বলেন, নবী করিম সা. বলেছেন, ‘তোমাদের কেউ যদি এমন কোনো স্বপ্ন দেখে, যা সে পছন্দ করে, তাহলে তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিত আল্লাহর প্রশংসা আদায় করা ও অন্যদের স্বপ্ন সম্পর্কে বলা।
কিন্তু সে যদি এমন স্বপ্ন দেখে যা সে অপছন্দ করে তাহলে তা শয়তানের পক্ষ থেকে। সুতরাং তার উচিত এর ক্ষতি থেকে আল্লাহর আশ্রয় চাওয়া। কাউকে এ স্বপ্ন সম্পর্কে না বলা। এমন করলে তার কোনো ক্ষতি হবে না।’ (বুখারি ৬৫৮৪; মুসলিম ৫৮৬২)
হজরত আয়শা রা. থেকে বর্ণিত। রাসুল সা. বলেন, ‘তিন ব্যক্তি থেকে (হিসাব-নিকাশের) কলম উঠিয়ে রাখা হয়েছে, ১. ঘুমন্ত ব্যক্তি যতক্ষণ-না সে জাগ্রত হয়। ২. নাবালেগ, যতক্ষণ-না সে বালেগ হয়। ৩. পাগল ব্যক্তি, যতক্ষণ-না সে সুস্থ হয়। (তাহাবি, হাদিস ৩০২৮, আবু দাউদ, হাদিস ৪৪০৫, তিরমিজি, হাদিস ১৪২৩, সুনানে দারা কুতনি, হাদিস ১৭৩, মুসনাদে আহমাদ, হাদিস ৯৪০)
হজরত কাতাদা রা. বলেন, রাসুল সা. বলেছেন, ‘ঘুমন্ত অবস্থার কোনো ভুল হলে এতে কোনো গুনাহ নেই, তবে সজাগ অবস্থায় হলে গুনাহ হবে। (মুসলিম, হাদিস ১৫৯৪, ইবনে খুজাইমা ৯৮৯, ইবনে হিব্বান, হাদিস ১৪৬০, তাহাবি, হাদিস ৯০২, আবু দাউদ, হাদিস ৪৪১)
স্বপ্নে মাছ দেখলে কী হয়
স্বপ্নে মাছ দেখা সম্পর্কে বিজ্ঞ আলেম, স্বপ্নের ব্যাখ্যাকারী ইবনে সিরি রহ. দৃষ্টিভঙ্গি অনুসারে সে ব্যক্তির জীবিকা, কল্যাণ ও অর্থ বৃদ্ধির প্রতি ইঙ্গিত দেয়। তবে অন্যদিকে, কিছু ক্ষেত্রে স্বপ্নে মাছ দুঃখ ও উদ্বেগের একটি সূচনা হতে পারে। স্বপ্নে মাছ দেখার অর্থ ও ব্যাখ্যা ব্যক্তি অনুসারে পরিবর্তিত হতে পারে।
স্বপ্নে মাছ যদি কোনো নারী দেখে, সে যদি মাছের সংখ্যা বলতে পারে, এক, দুই, তিন, বা চারটি মাছ। তবে স্বপ্ন দেখা ব্যক্তির সংখ্যা অনুযায়ী তার প্রাচুর্যবান হতে পারেন। আবার মাছের সংখ্যা যদি অজানা হয়, তার সংখ্যা চারের বেশি হয়, তবে এটির প্রচুর জীবিকা হতে পারে। স্বপ্ন দেখা ব্যক্তি যদি ব্যবসায়িক হয়, তাহলে বাণিজ্যে লাভবান হতে পারে বলে ধারণা করা হয়। এ স্বপ্ন স্বপ্নদ্রষ্টার জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে।
স্বপ্নে বড় মাছ দেখলে কী হয়
যদি স্বপ্নে দেখে তিনি শান্ত পানি থেকে মাছ ধরছেন, এটি ব্যবসা-বাণিজ্যের জন্য প্রচুর লাভের ইঙ্গিত দেয়। যদি মাছটি আকারে বড় হয়। স্বপ্নে মাছটি সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছ থেকে একটি সতর্কবাণী দিয়েছে। স্বপ্নদ্রষ্টাকে সঠিক পথে পরিচালিত করার জন্য সতর্ক বার্তা। সে যদি সুদি লেনদেন করে থাকে এগুলো থেকে বিরত না থাকলে তার বিপদ হতে পারে। তাকে অবশ্যই সঠিক পথে ফিরে আসতে হবে।
স্বপ্নে মৃত মাছ দেখলে কী হয়
যদি একজন ব্যক্তি স্বপ্নে মৃত মাছ দেখেন তবে এটি ইঙ্গিত দেয় যে তার অর্থ হারাম, এটি ব্যাখ্যা করা যেতে পারে যে তিনি তার লক্ষ্য অর্জনে সফল হননি। মাছটি যদি বাদামী রঙের হয় তবে এটি সাফল্য ও লক্ষ্যে পৌঁছানোর ইঙ্গিত দেয়। আল্লাহ তাআলাই ভালো জানেন।