এমটিনিউজ২৪ ডেস্ক : মুসলিম স্থাপত্য ও সংস্কৃতির একটি বিশেষ অংশ হিসেবে মসজিদের মিনারগুলো সারা পৃথিবী জুড়ে বিস্ময়ের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে। ইসলামের আধ্যাত্মিকতার সঙ্গে স্থাপত্যশিল্পের মেলবন্ধন ঘিরে তৈরি হয় এ মিনার।
সৌন্দর্যের নিদর্শন হয়ে বিশ্বকে মুগ্ধ করে এগুলো। এ বিস্ময়কর নির্মাণকর্মগুলোর মধ্যে এক অন্যতম মসজিদের মিনার, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ স্থান পেয়েছে, তা হলো আলজেরিয়ায় অবস্থিত গ্রেট মস্ক অফ আলজিয়ার্সের মিনার।
আলজেরিয়ার রাজধানী আলজিয়ার্সে অবস্থিত গ্রেট মস্ক অফ আলজিয়ার্স। বিশ্বের সর্বোচ্চ মসজিদের মিনার নিয়ে গর্বিত আলজেরিয়া। ২০২০ সালে নির্মিত এই মসজিদটির মিনারের উচ্চতা প্রায় ২৬৫ মিটার বা ৮৭০ ফুট। এটি আফ্রিকার বৃহত্তম মসজিদ ও একইসাথে উচ্চতায় সারা বিশ্বের সমস্ত মসজিদের মিনারকে ছাড়িয়ে গেছে। এর উচ্চতা এতটাই বেশি যে এর চূড়া থেকে সরাসরি ভূমধ্যসাগরের দৃশ্য দেখা যায়।
মিনারের স্থাপত্যশৈলী ও বৈশিষ্ট্য
গ্রেট মস্ক অফ আলজিয়ার্সের মিনারটি আধুনিক প্রযুক্তি এবং ইসলামিক ঐতিহ্যের মিশ্রণ। মূলত, এর নির্মাণশৈলী এবং স্থাপত্যে আধুনিক আরব স্থাপত্যের ছোঁয়া থাকলেও এতে ঐতিহ্যবাহী ইসলামিক নকশার গভীরতা প্রতিফলিত হয়েছে। মিনারটি ৩৭ তলা বিশিষ্ট, এবং এর উপরের তলায় একটি পর্যবেক্ষণ ডেক রয়েছে, যা পর্যটকদের জন্য একটি আকর্ষণীয় স্থান। সেইসাথে, এই মসজিদের মিনারে একটি বৈজ্ঞানিক গবেষণাগার এবং একটি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রও রয়েছে, যা এটিকে অন্যান্য মসজিদের মিনারের থেকে আলাদা করে তোলে।
নির্মাণের খরচ ও সময়কাল
গ্রেট মস্ক অফ আলজিয়ার্স নির্মাণে ব্যয় হয়েছে প্রায় ১.৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলার, যা প্রায় ১২,৬০০ কোটি বাংলাদেশি টাকার সমান। এই প্রকল্পটি চীনা নির্মাণ প্রতিষ্ঠান চায়না স্টেট কন্সট্রাকশন ইঞ্জিনিয়ারিং কর্পোরেশন (CSCEC) দ্বারা পরিচালিত হয়। ২০১২ সালে নির্মাণকাজ শুরু হয়ে ২০১৯ সালে শেষ হয় এবং ২০২০ সালে মসজিদটি জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়। এই বিশাল মসজিদ কমপ্লেক্সে একটি বিশাল লাইব্রেরি, ইসলামিক আর্টস মিউজিয়াম, গবেষণাকেন্দ্র এবং সম্মেলন হলও রয়েছে।
মসজিদে একসাথে মুসল্লি ধারণক্ষমতা
গ্রেট মস্ক অফ আলজিয়ার্স মসজিদটি একসাথে প্রায় ১,২০,০০০ মুসল্লিকে নামাজের সুযোগ দেয়, যা এটিকে বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মসজিদ হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছে। এই মসজিদ কমপ্লেক্সটি শুধুমাত্র ধর্মীয় উপাসনালয় নয়, এটি একটি সামাজিক, শিক্ষা এবং সাংস্কৃতিক কেন্দ্র হিসেবেও ব্যবহৃত হয়। মুসলিম বিশ্বজুড়ে এটি ঐক্য ও সম্প্রীতির একটি প্রতীক হিসেবে কাজ করে।
দর্শনার্থীদের আকর্ষণ
বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে মানুষ এই বিশাল মিনার দেখতে আসে। পর্যটকরা মিনারের পর্যবেক্ষণ ডেক থেকে আলজিয়ার্স শহর ও আশেপাশের দৃশ্য উপভোগ করে থাকেন। বিশেষ করে রাতে আলোকসজ্জিত এই মিনার পর্যটকদের মনে আলাদা দাগ কাটে।
বিশ্বের সর্বোচ্চ মসজিদের মিনার হিসেবে আলজিয়ার্সের এই মিনারটি শুধু স্থাপত্যশৈলীর নিদর্শনই নয়, এটি মুসলিম ঐতিহ্য এবং আধুনিকতার এক অপূর্ব মিলন। আলজিয়ার্স মসজিদের এই মিনার বিশ্বব্যাপী মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য গর্বের প্রতীক।