প্রশ্ন: জুমার খুতবার সময় হাতে লাঠি রাখা কি সুন্নত? অনেক মসজিদের খতিবকে দেখা যায় জুমার খুতবার সময় হাতে লাঠি রাখেন, অনেক মসজিদের খতিব আবার হাতে লাঠি রাখেন না, কোন আমলটি সঠিক?
উত্তর: কিছু হাদিসে এসেছে, জুমার খুতবা দেয়ার সময় মহানবীর (সা.) হাতে অনেক সময় লাঠি বা ধনুক ছিল। তাই কোনো কোনো ফকিহ জুমার খুতবার সময় হাতে লাঠি রাখাকে মুস্তাহাব বলেছেন। তবে খুতবার সময় হাতে লাঠি রাখা সুন্নত নয়, জরুরিও নয়। কেউ চাইলে খুতবার সময় হাতে লাঠি রাখতে পারে, না রাখলেও সমস্যা নেই।
অনেকের মতে মহানবী (সা.) জুমার খুতবায় লাঠি বা ধনুকে ভর করে দাঁড়াতেন মদিনার মসজিদে মিম্বর স্থাপিত হওয়ার আগে। এ ছাড়া যখন তিনি সফরে বা যুদ্ধের ময়দানে মিম্বর ছাড়া খুতবা দিতেন, তখন লাঠিতে ভর করে দাঁড়াতেন। মিম্বরে দাঁড়িয়ে খুতবা দেওয়ার সময় তিনি হাতে লাঠি বা ধনুক রাখতেন না। ইবনুল কায়্যিম যাওজী (রহ.) বলেন, মিম্বর স্থাপনের পর রাসুল (সা.) তরবারি, ধনুক বা অন্য কিছু নিয়ে মিম্বরে উঠতেন এ রকম কোনো বর্ণনা পাওয়া যায় না। মিম্বর স্থাপনের আগে তিনি লাঠি বা ধনুকে ভর করে দাঁড়াতেন। (যাদুল মাআদ: ১/৪২৯)
জুমার নামাজ শুদ্ধ হওয়ার জন্য খুতবা অপরিহার্য। খুতবা ছাড়া জুমার নামাজ আদায় হয় না। জুমার জামাতে ইমাম যদি খুতবা না দিয়ে জুমার নামাজ পড়ান, তাহলে জুমার নামায আদায় হবে না। এ রকম ভুল হয়ে গেলে এবং জুমা পুনরায় পড়া না হলে পরবর্তীতে ওই দিনের জোহরের নামাজ কাজা পড়ে নিতে হবে।
জুমআর খুতবা দাঁড়িয়ে দেওয়া সুন্নত। তবে ইমাম যদি কোনো ওজরের কারণে দাঁড়িয়ে খুতবা দিতে না পারেন, তাহলে বসে খুতবা দেওয়ারও অবকাশ আছে। হজরত ওসমান (রা.) ও হজরত মুআবিয়া (রা.) শেষ বয়সে বসে খুতবা দিতেন বলে বর্ণিত রয়েছে। তাই ইমাম বসে খুতবা দিলেও জুমার নামাজ শুদ্ধ হবে। কিন্তু ওজর ছাড়া বসে খুতবা দেওয়া সুন্নত পরিপন্থী ও মাকরুহ।
জুমার দিন খুতবার আগেই মসজিদে চলে যাওয়া আবশ্যক। জুমার আজানের পর দুনিয়াবি কাজকর্ম করার ব্যাপারে কোরআনে নিষেধাজ্ঞা এসেছে। দ্রুত মসজিদে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ বলেন, হে মুমিনগণ, যখন জুমার দিনে সালাতের জন্য আহবান করা হয়, তখন তোমরা আল্লাহর স্মরণের দিকে ধাবিত হও আর বেচা-কেনা বর্জন কর। এটাই তোমাদের জন্য সর্বোত্তম, যদি তোমরা জানতে। (সুরা জুমা: ৯)
সুতরাং জুমার আজান হয়ে গেলে মসজিদে চলে যাওয়া, সব দুনিয়াবি কাজ বন্ধ করে দেওয়া কোরআনের সরাসরি নির্দেশে ওয়াজিব বা অবশ্য কর্তব্য। এরপরও কখনও কোনো ব্যস্ততার কারনে দেরি হয়ে গেলে, জুমার খুতবা না শুনতে পারলে জুমা আদায় হয়ে যাবে। তবে খুতবা শোনার ওয়াজিব কাজটি ছুটে যাওয়ায় জুমার নামাজের পূর্ণ সওয়াব পাওয়া যাবে না।