ইসলাম ডেস্ক : মৃত্যু প্রাণী জীবনের অবিচ্ছেদ্য সত্য। পৃথিবীর আলোয় চোখ মেলে জন্ম নিলে একদিন না একদিন তাকে মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতেই হবে। কেউ তা অস্বীকার করতে পারে না, এ সত্য থেকে কেউই পালাতে পারে না।
রাব্বুল আলামিন মহাগ্রন্থ আল কোরআনে ইরশাদ করেন, ‘প্রত্যেক প্রাণীকেই মৃত্যুর স্বাদ গ্রহণ করতে হবে এবং তোমরা নিজ নিজ কাজের প্রতিফল সম্পূর্ণভাবেই কিয়ামতের দিন পাবে।’ (সুরা আলে ইমরান : ১৮৫, সুরা আনকাবুত : ৫৭)
অর্থাৎ ধনী-গরিব, রাজা-প্রজা, শক্তিশালী-দুর্বল- সবার জন্যই মৃত্যু এক অনিবার্য গন্তব্য। আর আমরা যে দুনিয়ায় বাস করি, এটি সাময়িক। এখানে সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, আশা-হতাশা সবই অস্থায়ী। কিন্তু মানুষ ভুলে যায় মৃত্যুর কথা, মায়ার দুনিয়ার চাকচিক্যেই সে বেশি ডুবে থাকে। অথচ সুরা নাহলে আল্লাহ তায়ালা বলছেন, ‘অতঃপর নির্ধারিত সময়ে যখন তাদের মৃত্যু এসে যাবে, তখন এক মুহূর্তও বিলম্বিত কিংবা ত্বরান্বিত করতে পারবে না।’ (আয়াত : ৬১)
মৃত্যুকে ‘আলিঙ্গনের’ পর প্রত্যেকের কাছে তার চিরস্থায়ী আবাসস্থল তুলে ধরা হয়। হাদিসে রাসুল (সা.) বলেছেন, মারা যাওয়ার পর মৃত ব্যক্তির সামনে তার মূল বাসস্থানকে তুলে ধরা হবে। সে যদি জান্নাতি হয়, তবে জান্নাতের বাসস্থান আর যদি সে জাহান্নামী হয়, তবে জাহান্নামের বাসস্থান। পরে বলা হবে, এই তোমার স্থান। অবশেষে আল্লাহ তায়ালা তোমাকে কিয়ামতের দিন উত্থিত করবেন (তিরমিজি : ১০৭২)।
আর সেখানে বিচার প্রক্রিয়ার মাধ্যমে মানুষ তার নিজ নিজ গন্তব্যে যাবে (জান্নাত-জাহান্নাম)। এ ক্ষেত্রে অনেকে প্রশ্ন করেন,‘জান্নাতে স্বামী-স্ত্রী কি একসঙ্গে থাকবে? যদি তাদের একজন জাহান্নামি হন, তবে অপরজনের কী হবে?’
এ প্রসঙ্গে প্রখ্যাত ইসলামী স্কলার শায়খ আহমাদুল্লাহ তার ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলে এক আলোচনায় বলেন, ‘কোনো স্বামী-স্ত্রী, সন্তান বা বাবা-মামা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে জান্নাতে থাকবে কি না, এটা নির্ভর করে উভয় জান্নাতে যাওয়ার মতো আমল করেছেন কি না, তার ওপর।
ফেরাউন জাহান্নামে যাওয়ার মতো আমল করেছে, তাই সে জাহান্নামে যাবে। তার স্ত্রী হজরত আছিয়া জান্নাতে যাওয়ার মতো আমল করেছেন, এজন্য তিনি জান্নাতে যাবেন। কোরআনে আল্লাহ তায়ালা উভয়ের ঘোষণা আমাদের জানিয়ে দিয়েছেন। নুহ (আ.) ও লূত (আ.) দুজনই আল্লাহর নবী ছিলেন, তাই তারা জান্নাতে যাবেন। কিন্তু তাদের স্ত্রী তাদের প্রতি ইমান আনে নাই, তাই তারা জাহান্নামে যাবে।’
‘অতএব স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে একজন জান্নাতে গেলে বাই ডিফল্ট অপরজনও জান্নাতে যাবে, বিষয়টি আসলে এরকম না। বরং একজন জান্নাতে গেলে অপরজনের যদি পর্যাপ্ত ঈমান-আমল না থাকে, তাহলে তিনি জাহান্নামেও যেতে পারেন।’
এখন প্রশ্ন জাগতে পারে, জান্নাতিদের তো আল্লাহ কোনো কষ্ট পেতে দেবেন না। তাহলে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কেউ একজন যদি জাহান্নামি হন, তবে অপরজন কি কষ্ট পাবেন না?
এই প্রশ্নের উত্তরে শায়খ আহমাদুল্লাহ বলেন, ‘আখিরাতের জীবনকে দুনিয়ার জীবনের সঙ্গে তুলনা করা যাবে না। কারণ, স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে যখন কেউ জাহান্নামি হবে, তখন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন তার সঙ্গীর অন্তর থেকে তাকে মুছে দেবেন হয়তো। যে কোনোভাবে তার যাতে কষ্ট না হয়, সেই ব্যবস্থা আল্লাহ তায়ালা নেবেন।’