বুধবার, ২৩ সেপ্টেম্বর, ২০১৫, ০৪:০০:২৩

২১টি কারণে আপনাকে অবশ্যই জিকির করা উচিত

২১টি কারণে আপনাকে অবশ্যই জিকির করা উচিত

ইসলাম ডেস্ক: মহান আল্লাহ তায়ালার সন্তুষ্টি অর্জনের জন্য অনেক মুসলমান ভাই ফরয ইবাদত শেষ করে অতিরিক্ত আমল করার জন্য জিকির করে থাকেন। কিন্তু আপনি জানেন কি জিকির করলে আপনার অন্তরে কোন উপকারগুলো হয়?

প্রখ্যাত হাদিসবেত্তা হাফেজ ইবনে কায়্যিম জিকিরের উপকারিতা বিষয়ে রচিত তার ”আল ওয়াবিলুছ ছায়্যিব ” নামক গ্রন্থে সবিস্তার আলোচনা করেছেন।লিখেছেন।জিকিরের মধ্যে রয়েছে একশতটিরও বেশী উপকারিতা।সেখান থেকে ২১টি উপকারিতার কথা উল্লেখ করা হচ্ছে-

১। আল্লাহর জিকির শয়তানকে তাড়িয়ে দেয় ও তার শক্তি খর্ব করে। জিকির আল্লাহর পরিতোষ লাভের উপায়। হ্রদয়ে বা মনের বিষন্নতা দুর করে। মনে আনে আনন্দ, উজ্জীবিত ও প্রফুল্ল রাখে হ্রদয় বা মন ও শরীরকে। চেহারা ও অন্তরকে করে জ্যোতির্ময়। উত্তম রিজিক আকর্ষন করে।

২।জিকিরকারীকে প্রভাব ও প্রশান্তির পোশাক পরানো হয়।তাকে দেখলে সমীহবোধ যেমন জাগে,তেমনি জাগে ভালোবাসা। হ্রদয় বা মন ভরে দেয় আল্লাহর ভালবাসায়।জিকিরের দ্বারা লাভ হয় মোরাক্বাবা(ধ্যনমগ্নতা) যা পৌছে দেয় এহসানের স্তরে। সকল বিষয়ে আল্লাহই হন একমাত্র আশ্রয়স্হল। লাভ হয় আল্লাহর নৈকট্য। খুলে যায় মারেফাতের দরজা। অর্জিত হয় আল্লাহর ভয়। আল্লাহ তাকে স্বরন করেন।(তোমরা আমাকে স্বরন কর , আমিও তোমাদেরকে স্মরন করবো-সুরা বাকারা-১৫২ ) ।দিলকে জিন্দা করে।

৩।জিকির হচ্ছে ক্বলব(মন) ও রুহের(আত্না) আহার। ক্বলবের মরিচা দুর করে। দুর করে দেয় ত্রুটি-বিচ্যুতি ও ভুলভ্রান্তি। দুর করে দেয় গাফিলতি বা অমনোযোগিতা। বান্দা যে জিকির আজকার করে, তা আরশের চতুর্দিকে ওই বান্দার জিকির করে ঘুরতে থাকে। সুখের সময় যে আল্লাহর জিকির করে ,তার দুঃখের সময় আল্লাহ তাকে স্মরন করে।

৪।জিকির আল্লাহর আযাব থেকে নাজাতের ওসিলা। জিকিরের কারনে সাকিনা অবতীর্ন হয়। জিকিরের বরকতে জবান,গীবত,চোগলখুরী,অসত্য ও অনর্থক কথা থেকে নিরাপদ থাকে। জিকিরের মজলিস হচ্ছে ফেরেশতাদের মজলিস। জিকিরের বদৌলতে জিকিরকারীর সঙ্গীসাথিরাও সৌভাগ্যবান হয়। কিয়ামতের দিন জিকিরকারীদের কোন আক্ষেপ থাকবে না।

৫।ক্রন্দনকারী -জিকিরকারী কিয়ামতের দিনে আল্লাহর আরসের ছায়ায় আশ্রয়লাভ করবে। দোয়াকারীগনের চেয়ে জিকিরকারীদের অধিক প্রাপ্তি হবে।
হাদিসে কুদসিতে বর্নিত হয়েছে,আল্লাহ সুবহানাহুতাআলা এরশাদ করেন,আমার জিকিরের কারনে যে দোয়া করার ফুসরত পায় না,আমি তাকে দোয়াকারীদের চেয়ে বেশী দান করি। সবচেয়ে সহজ এবাদৎ হওয়া সত্বেও জিকির সকল এবাদতের চেয়ে উ্ত্তম। জিকির জান্নাতের ছায়াগাছ।

৬। জিকিরের জন্য যে প্রতিদান ও পুরুস্কারের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে,অন্যকোন আমলের জন্য সেরকম প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়নি।হাদিস শরীফে বলা হয়েছে ‘লাইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা শারিকালাহু লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদু ইউহয়ী ওয়া ইউমিতু ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শায়্যিন কাদির’, এই দোয়া যদি কেউ দিনে একশতবার পাঠ করে,তবে তাকে দেয়া হয় দশজন কৃতদাস মুক্ত করে দেয়ার সওয়াব,তার আমলনামায় লিখে দেয়া হয় একশত নেকি এবং গুনা মাফ করে দেয়া হয় একশতটি।আর সন্ধা পর্যন্ত সে শয়তানের আক্রমন থেকে হেফাজতে থাকে।

৭।নিজের কল্যানের কথা ভুলে যাওয়ার বিপদ থেকে রক্ষা করে।রোধকরে ক্বলবের মৃত্যুকে। জিকির মানুষের অশেষ উন্নতি সাধন করে।যার ক্বলব জিকিরে জাগ্রত,তার নিদ্রিত অবস্হাও গাফেল রাত্রী জাগরনকারীর চেয়ে উত্তম। জিকিরের নুর দুনিয়ায় সঙ্গে থাকে, সঙ্গে থাকে কবরেও।আর পুলসিরাতে চলতে থাকবে আগে আগে।রসুল পাক সাঃ এই নুরের জন্যই প্রার্থনা করতেন এভাবে, – হে আমার আল্লাহর! আমার মাংশ অস্হিতে, চর্মে, পশমে, কানে, চোখে, উপরে, নিচে, ডানে, বামে,সন্মুখে , পশ্চাতে নুর দান কর।আরো বলতেন,আমার আপাদমস্তক নুরে ভরপুর করে দাও।

৮।জিকির তাসাউফ শাস্রের মৌলিক বিষয় গুলির মুল।সকল তরিকার পীর মুর্শিদগন এব্যাপারে একমত।যার জন্য জিকিরের দার উন্মুক্ত হয়েছে,তার জন্য খুলে গিয়েছে মারেফাতের পথ। মানুষের অন্তরে এমন একটি কোন আছে,যা জিকির ছাড়া অন্য কোন কিছু দ্বারা পুর্ন করা যায় না।হ্রদয়ের পুর্ন পরিসর যখন জিকিরে ভরে যায়,তখন ঐ বিশেষ কোনটিও ভরপুর হয়ে যায় জিকিরের নুরে।তখন জিকিরকারী সম্পদ ব্যতিরেকেই হয়ে যায় সম্পদশালী।আত্নীয়স্বজন ও জনবল ছাড়াই লাভ করে প্রভুত সম্মান।সাম্রাজ্য ছাড়াই হয়ে যায় সম্রাট।আর যে জিকির করে না,সে আত্নীয়পরিজন,বিত্তসম্পদ ও রাজত্ব থাকা সত্বেও হয় লান্চিত ও অপদস্ত।

৯।যিকির বিক্ষিপ্ত বিষয়াবলীকে একত্র করে,একত্র করে বিক্ষিপ্ত।দুরবর্তীকে করে নিকটবর্তী, আর নিকটবর্তীকে ঠেলে দেয় দুরে।অর্থাৎ হ্রদয়ের সকল অসৎ ভাবনাকে দুরে ঠেলে দিয়ে অন্তরে আনে শান্তি ও আল্লাহর প্রেম।দুর্ভাগ্যকে করে দুরবতী,আর নিকটে এনে দেয় সকল সৌভাগ্যকে। জিকির হ্রদয়ের ঘুম ভাঙ্গায়।সতর্ক করে।

১০। জিকির এমন একটি বৃক্ষ,যাতে ফল ধরে মারেফাতের।সুফিয়ায়েকেরাম ঐ ফলকে বলেন হাল ও মাকামের ফল।জিকির যত গভীর হবে,ঐ বৃক্ষের শিকড় হবে তত সুদৃর।ফলও ধরবে বেশী। জিকিরকারী আল্লাহপাকের সঙ্গী। জিকির ক্রীতদাস মুক্ত করে দেয়ার সমতুল্য।আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় তুল্য।আল্লাহর রাস্তায় জেহাদ করার সমান।

১১। জিকির শোকরের মুল।যে ব্যক্তি আল্লাহর জিকির করে না ,সে আল্লাহর শোকর আদায় করে না। পরহেজগারদের মাঝে আল্লাহর কাছে তারাই অধিক সন্মানিত যারা সব সময় জিকিরে মসগুল থাকে।কেননা তাকওয়ার শেষ ফল জান্নাত ।আর জিকিরের শেষফল আল্লাহর নৈকট্য। দিলের মধ্যে এমন এক ধরনের কাঠিন্য আছে, যা জিকির ছাড়া অন্য কিছুতে নম্র হয় না।

১২। জিকির সকল রোগের চিকিৎসা। আল্লাহর সঙ্গে বন্ধুত্বের মুল হচ্ছে জিকির।আর তার সাথে শত্রুতার মুল হচ্ছে- গাফলত। জিকিরের মত নেয়ামত আকর্ষনকারী ও আযাব দুরকারী কিছু নেই। জিকিরকারীদের সাথে আল্লাহর রহমত ও ফেরেশতাদের দোয়া থাকে। জিকিরের জলসা সমুহ জান্নাতের বাগান। জিকিরের জলসা ফেরেসতাদের জলসা। আল্লাহপাক তার জিকিরকারীদের বিষয়ে ফেরেশতাদের সমাবেশে গর্ব প্রকাশ করেন। সর্বদা জিকিরকারী হাসতে হাসতে জান্নাতে প্রবেশ করবে। যাবতীয় আমলের নির্দেশ দেয়া হয়েছে জিকিরের জন্যই। সেই আমলই সর্বোত্তম,যার মধ্যে আল্লাহর স্বরন থাকে।

১৩।জিকিরের কারনে সকল কষ্টদায়ক কাজ সহজসাধ্য হয়ে যায়।সকল মুসিবত দুর হয়ে যায়। যত জিকির করবে,ততই মন থেকে ভয়ভীতি দুর হয়ে যাবে।মনে আসবে শান্তি।

১৪।হযরত ফাতেমাতুজ্জাহরা রাঃ আটাপেশা, কুয়া থেকে পানি তোলা – এসকল কষ্টকর গৃহকর্ম করতেন।তিনি রসুল পাক সাঃ এর কাছে এসকল কাজের জন্য একজন পরিচারক চেয়েছিলেন।তিনি সাঃ তাকে রাতে সজ্জা গ্রহনের পুর্বে ৩৩ বার সোবহানআল্লাহ,৩৩বার আলহামদুলিল্লাহ এবং ৩৪ বার আল্লাহুআকবার পাঠ করার নির্দেশ দিয়ে বলেছিলেন এই আমল খাদেম লাভ করার চেয়ে উ্ত্তম।

১৫।পরবর্তী পৃথিবির কল্যানের জন্য শ্রম স্বীকারকারী সকলেই দৌড়াচ্ছে।তাদের মধ্যে জিকিরকারীগন রয়েছেন সবার সামনে। জিকিরকারীদেরকে আল্লাহপাক ‘সত্যবাদী’ বলেন।আর যাদেরকে আল্লাহপাক সত্যবাদী বলেন,মিথ্যাবাদীদের সঙ্গে কখনই তাদের হাশর হতে পারে না।

১৬।জিকির দ্বারা জান্নতে গৃহ নির্মান করা হয়।বান্দা যখন জিকির বন্ধ করে দেয়,তখন ফেরাশতাদের নির্মানকর্মও বন্ধ থাকে।তাদেরকে এর কারন জিজ্ঙেস করলে তারা বলে,নির্মান কাজের খরচ এখনো এসে পৌছেনি। হাদিসে এসেছে , যে ব্যক্তি ”সোবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি সোবহানাল্লাহিল আজীম” সাতবার পাঠ করে, বেহেশতে তার জন্য একটি সবুজ গম্বুজ তৈরী হয়ে যায়।

১৭। যিকির দোজখের দিকের প্রাচীর।কোন খারাপ আমলের কারনে দোজখ নির্ধারিত হলেও যিকির মাঝখানে প্রচির হয়ে দারায়।
৬৬।ফেরেশতারা জিকিরকারীদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করে।হযরত আমর ইবনে আস রাঃ কতৃক বর্নীত হয়েছে,বন্দা যখন    ”সোবহানাল্লাহি ওয়াবিহামদিহি” বলে অথবা বলে ”আলহামদুলিল্লাহি রাব্বিলালামিন” তখন ফেরেশতারা বলে,হে আল্লাহ! এলোকটিকে মাফ করে দাও।

১৮। কোন পাহাড়ে বা প্রান্তরে আল্লাহর জিকির করা হলে তারা গর্ববোধ করে। এক পাহাড় অন্য পাহাড়কে ডেকে বকে,াজ তোমার উপর দিয়ে কোন জিকিরকারী পথ অতিক্রম করেছি কি ? পাহাড়টি হে বললে প্রশ্নকারী পাহাড়টি আনন্দিত হয়।

১৯। অত্যধিক জিকির মোনাফেকি থেকে মোক্তি প্রদায়ক।আল্লাহ পাক মোনাফিকদের সম্পর্কে বলেন, ”আল্লাহকে তারা অল্পই স্বরন করে।” (সুরা নিসা -১৪২)।হযরত কাব আহবার রাঃ বলেন, যে বেশী বেশী জিকির করে সে  মোনাফেকি থেকে মোক্ত।

২০। জিকিরের  সতন্ত্র স্বাদ আছে,যা অন্যকোন আমলে নেই। অন্য কোন ফজিলত যদি নাও থাকতো,তবুও জিকির ঐ আস্বাদের কারনে হতো অনন্য। পৃথিবী ও পরবর্তী  পৃথিবি – উভয় স্হানে জিকির কারীদের চেহারায় জল জল করে নুর।
২১। যে ব্যক্তি পথে ঘাটে ঘরে বাইরে দেশে বিদেশে অত্যধিক জিকির করবে, কিয়ামত দিবসে তার পক্ষে সাক্ষ্যপ্রদানকারীদের সংখ্যা হবে অনেক বেশী। আল্লাহ পাক এরশাদ করেন, সেই দিন পৃথিবি তাহার বৃত্তান্ত বর্ননা করবে।” (সুরা যিলযাল-৪)।
২৩ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে