শনিবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১৬, ০৪:২৭:৩৩

নামাজ হলো মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র মাধ্যম (৪র্থ পর্ব)

নামাজ হলো মহান আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপনের একমাত্র মাধ্যম (৪র্থ পর্ব)

ইসলাম ডেস্ক : পাঠক! নামাজ বিশ্লেষণমূলক ধারাবাহিক এই আলোচনায় আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। অসীম দয়ালু আল্লাহর সামনে মানুষ অক্ষম এবং অতিশয় ক্ষুদ্র। মহান স্রষ্টার সাথে এই ক্ষুদ্র সত্ত্বার সম্পর্ক যার মাধ্যমে স্থাপিত হয় তা হলো নামাজ। পরমাত্মার সামনে জীবত্মার বিনয় প্রকাশের মাধ্যম হলো নামাজ। মনের আকাশে যখন মেঘ জমে,তখন কেবল নামাজের স্নিগ্ধ শীতল মৃদুমন্দ প্রেমের মেহরাবে উপস্থিতিই মানুষকে হালকা করতে পারে এবং মনের বাগিচায় খোদার স্মরণের সুগন্ধি ফুল ঘ্রাণ ছড়ায়। নামাজের এই সুগন্ধি সবার অন্তরে ছড়িয়ে যাক, সবাই আল্লাহর সান্নিধ্য লাভে সচেতন হয়ে উঠুন-এই প্রত্যাশায় শুরু করছি আজকের আলোচনা।

নামাজ কেন পড়বো-এরকম একটি প্রশ্ন সবার মনেই জাগতে পারে। বহুক্ষেত্রেই দেখা যায় সাধারণত বস্তুবাদী জীবনের ব্যস্ততা ও সমস্যাই মানুষকে দুঃখ-কষ্টের দিকে নিয়ে যায়। মানুষ তখন এই দুঃখ-কষ্ট থেকে মুক্তি লাভের জন্যে দুশ্চিন্তাহীন একটা নিরাপদ জীবন প্রত্যাশা করে। এই প্রত্যাশা পূরণের জন্যে মানুষ যে-কোনো একটা কিছুর আশ্রয় নেয়। কেউ বই পড়ে,কেউ গান শোনে আবার কেউবা একাকীত্ব বেছে নেয়। কিন্তু এগুলোর কোনোটারই প্রভাব স্থায়ী নয়। জীবনের এরকম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা থেকে বেঁচে থাকার লক্ষ্যে ইসলাম স্থায়ীভাবে একটি স্বচ্ছ ঝর্ণাধারা আমাদের সামনে প্রবাহিত করে দিয়েছে। আমরা যদি আমাদের অন্তরগুলোকে ঐ ঝর্ণাধারায় ধুয়ে নিই তাহলে স্থায়ীভাবে আমরা পবিত্রতা ও নিরাপত্তা পেতে পারি। প্রাণদায়ী এই ঝর্ণাধারাটি হলো নামাজ। আর এর মাধ্যমে আল্লাহর সাথে সম্পর্ক স্থাপিত হয়।

অন্তত ১০ হাজর বিষাদগ্রস্ত লোকের ওপর গবেষণা চালানোর পর ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী হেনরি র্যা ঙ্ক বলেছেন,আমি এখন ধর্মীয় বিশ্বাসগুলোর গুরুত্ব খুব ভালোভাবেই উপলব্ধি করছি। সমস্ত পরীক্ষা-নিরীক্ষার মধ্যে গুরুত্বপূর্ণ এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছি যে,যে কেউ ধর্ম বা ধর্মীয় বিশ্বাস লালন করবে কিংবা যথাযথত নিয়মে প্রার্থনালয়ে উপস্থিত হবে,তারা উন্নত মানবীয় ব্যক্তিত্ব ও মর্যাদার অধিকারী হবে।

আমেরিকার স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ ডক্টর ফ্রেডরিক পাওয়ার্স বলেছেন, এমন এমন কিছু রোগী আমাদের কাছে এসেছে যাদের অবস্থার উন্নতির ব্যাপারে বড়ো বড়ো এবং অভিজ্ঞ ও দক্ষ ডাক্তারগণও খুব কমই আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। তবে তাদের অবস্থার উন্নতির ব্যাপারে যা তাদের ওপর প্রভাব ফেলেছিল,তাহলো আল্লাহর সাথে সম্পর্ক এবং মোনাজাতের মতো অলৌকিক বিষয়। ব্রিটিশ মনোবিজ্ঞানী সেরেল ব্রেতও বলেছেন,আমরা নামাজ এবং দোয়ার মাধ্যমে বুদ্ধিবৃত্তিক আনন্দের বৃহৎ সম্ভারে প্রবেশ করতে পারি,যেখানে সাধারণভাবে প্রবেশ করার কোনো সুযোগ নেই।

এ কারণেই যারা নামাজ পড়েন তাদের জন্যে এ বিষয়টি সুস্পষ্ট হয়ে গেছে যে,দৈনিক কয়েকবার নামাজ পড়া আন্তরিক প্রশান্তির জন্যে সর্বোৎকৃষ্ট কর্মসূচি ও অনুশীলন। নামাজ হলো মানুষের আধ্যাত্মিক চাহিদার যোগান। জ্ঞান-বুদ্ধির আলো যেভাবে মানুষের ব্যক্তিত্বকে বিকশিত করে তেমনিভাবে নামাজও মানুষকে বিকশিত করে। এ কারণেই নবী কারিম (সা) নামাজকে তাঁর নিজের চোখের আলো বলে উল্লেখ করে বলেছেন-প্রত্যেক বস্তুরই একটা চেহারা বা রূপ আছে আর ধর্মের রূপ বা চেহারা হলো নামাজ। অতএব এর চেহারাটার পরিপূর্ণ সৌন্দর্য রক্ষার চেষ্টা করো। হাদিসে এসেছে রাসূলে খোদা (সা) নামাজের সময় হলে বলতেন-হে বেলাল!নামাজের মাধ্যমে আমাদেরকে প্রশান্তির পর্যায়ে নিয়ে যাও! অন্য এক হাদিসে এসেছে যখনই ইসলামের নবী পরিশ্রান্ত হয়ে পড়তেন তখনই নামাজে দাঁড়াতেন এবং আল্লাহর কাছে সাহায্য প্রার্থনা করতেন।

নামাজ পড়ার মাধ্যমে অন্তর প্রশান্ত,পূণ্যময় ও সৌন্দর্যপূর্ণ হয় এবং আল্লাহর সান্নিধ্য লাভ করা যায়। আল্লাহর সাথে নামাজের মাধ্যমে যোগাযোগ বা সম্পর্ক স্থাপিত হয় এবং নামাজ আদায়কারীর অন্তরাত্মায় পবিত্রতার দিকে ছোটার স্পন্দন অনুভূত হয়। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে নামাজ মানুষকে সকল প্রকার অন্যায় ও মন্দকাজ থেকে দূরে রাখে। নামাজ পড়লে মানুষের মাঝে গুনাহের কাজে লিপ্ত হবার প্রবণতা হ্রাস পায়। এ কারণেই ধর্মীয় চিন্তাবিদগণ বলেছেন,নামাজ মনের কামনা-বাসনা চরিতার্থ করার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করার শক্তি বৃদ্ধি করে এবং ঈমানী শক্তি বৃদ্ধির প্রেরণার বৃহৎ একটি সম্ভার হলো নামাজ।

আসলে নামাজ মানুষের মাঝে বেশ কিছু গুণাবলী সৃষ্টি করে দেয়। যেমন পবিত্রতা ,ওজু করা এবং হাত-মুখ ধোয়া, মেসওয়াক করা,পরিচ্ছন্ন পোশাক পরা প্রভৃতি নেক গুণাবলি মানুষের মাঝে সৃষ্টি করে নামাজ। অবশ্য মানুষ নামাজের ভঙ্গি এবং শব্দগুলোর প্রতি যতো বেশি মনোযোগী হবে,ততো বেশি তার প্রভাব ও ঔজ্জ্বল্য বিকীর্ণ হবে তার অন্তরে।নামাজের বিস্ময়কর প্রভাবের গুরুত্বের ব্যাপারে জনগণ বিশেষ করে দায়িত্বশীলদের দৃষ্টি আকর্ষণ করে ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী বলেছেন-এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টির ক্ষেত্রে আমাদেরকে দায়িত্বশীল হতে হবে।

একজন মালির সার্থকতা হলো ফলের গুণমান এবং পরিমাণের মধ্যে,যা তার নিজের চেষ্টা-প্রচেষ্টায় অর্জিত হয়। এইসব অনুশীলন মানব জীবনে বহু ইতিবাচক ও সন্তোষজনক গুণাবলি এনে দেয়।
নামাজের আরো কিছু ইতিবাচক প্রভাব ও বৈশিষ্ট্য আছে। যেমন নামাজের স্থানটিকে পূত-পবিত্র হতে হবে,অপবিত্র হওয়া চলবে না।নামাজ আদায়কারীর পরিধানের বস্ত্র হতে হবে সুন্দর ও পরিচ্ছন্ন। সেইসাথে অপরের অধিকারের প্রতি মনোযোগী হওয়াটাও নামাজের আরেকটি শিক্ষা বা বৈশিষ্ট্য।

এ বৈশিষ্ট্যগুলো স্বাভাবিকভাবেই একটি মানুষকে অন্যায় বা অপরাধী কর্মকাণ্ড থেকে বিরত রাখে। ফলে মানুষের জীবনের বিভিন্ন ক্ষেত্রে ন্যায়নীতি এবং সামাজিক সম্পর্ক উন্নয়নে নামাজের প্রভাবশালী ভূমিকার বিষয়টি প্রমাণিত হয়। অপরদিকে নামাজের সময়-সচেতনতার বিষয়টিও মানুষের ব্যক্তিগত ও সামাজিক জীবনে নিয়ম-শৃঙ্খলার ওপর ধর্মীয় গুরুত্বের সুস্পষ্ট নিদর্শন। এইসব কারণেই ধর্মীয় গুরুত্বপূর্ণ হুকুম-আহকামগুলোর মধ্যে নামাজ অন্যতম। পরবর্তী আসরে এ সম্পর্কে আরো কথা বলার ইচ্ছে রইলো।
২৩ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে