শুক্রবার, ২৯ এপ্রিল, ২০১৬, ০৪:৩৭:৪০

যারা আল্লাহকে ভালোবাসেন তারা নামাজকেও ভালোবাসেন (১০ম পর্ব)

যারা আল্লাহকে ভালোবাসেন তারা নামাজকেও ভালোবাসেন (১০ম পর্ব)

ইসলাম ডেস্ক : পাঠক! নামাজ বিশ্লেষণমূলক ধারাবাহিক এই আলোচনায় আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আজকের আসরে আমরা নামাজের দিকে মানুষকে আহ্বানের বিষয় নিয়ে কথা বলার চেষ্টা করবো। যে কাজ বা বিষয় সুন্দর, সে কাজের দিকে আহ্বানও সুন্দর। বাংলাদেশের মহাকবি কায়কোবাদ নামাজের দিকে আহ্বান তথা সর্বশ্রেষ্ঠ এবাদতের দিকে আহ্বানের নজিরবিহীন মাধ্যম- আযানের মধুর ধ্বনি বা হৃদয়ে গেঁথে যাওয়া বেহেশতী সূরের প্রশংসা করে লিখেছেন,
কে ঐ শোনালো মোরে আযানের ধ্বনি
মর্মে মর্মে সেই সূর বাজিল কি সুমধুর
আকুল হইল প্রাণ নাচিল ধমনী
কে ঐ শোনালো মোরে আযানের ধ্বনি।

নামাজ প্রার্থনা বা এবাদতের সুন্দরতম রীতি। পবিত্র হৃদয়ের অধিকারী মানুষের অন্তরের অন্তঃস্থল থেকে উৎসারিত খোদাপ্রেমের সুন্দরতম প্রতিফলন বা প্রতিচ্ছবি এই নামাজ। একজন নামাজী যুবক তার জীবনের প্রথম নামাজের স্মৃতি তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, যখনই মহান আল্লাহর একত্ববাদের সাক্ষ্যযুক্ত আযানের প্রাণ-সঞ্চারী বাণী শুনতাম তখনই কিছুক্ষণের জন্য উৎফুল্ল হয়ে উঠতাম। আযানের ধ্বনি খুবই আনন্দদায়ক ও হৃদয়-স্পর্শী। কিন্তু খুব দ্রুত আমার মন ভেঙ্গে যেত, আমি দুঃখিত হয়ে পড়তাম। কারণ, মানুষ কিভাবে নামাজ আদায় করে তা আমি দেখতে পেতাম না। আমার চোখ কখনও আলো দেখে নি। কারণ, আমি অন্ধ হয়েই জন্ম নিয়েছি। তাই অন্য সবাই যেভাবে বিশ্বকে দেখে আমি কখনো সেভাবে দেখতে পারি নি। আমার এ দুঃখ ও বেদনার সময় পাশে এসে দাঁড়ালেন আমার জননী।

তিনি আমায় শেখাতে লাগলেন নামাজ পড়ার রীতি। প্রথম দিকে কঠিন লাগছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে এই নামাজ সহজ ও মধুরতর হয়ে উঠলো। আপনারা হয়তো বিশ্বাস করবেন না, যখন জীবনের প্রথম নামাজ পড়লাম, তখন যেন আলোয় ভরা এক জগতে ঢুকলাম। তার আগ পর্যন্ত নিকষ অন্ধকারের কালিমা ছাড়া আর কিছুই দেখি নি, কিন্তু যখন নামাজে দাঁড়ালাম, বিমুগ্ধকর আলো আমার দৃষ্টি আকৃষ্ট করলো। এ এমন এক আলো যা অনেক দূর থেকে এসে আমার মধ্যে প্রবেশ করতো এবং ছড়িয়ে পড়তো। আমি সেই সময় পর্যন্ত কখনও আলো দেখিনি। কিন্তু আলো আমার কাছে এখন এক বাস্তবতা। অন্ধ হয়েও আমি আলোকে চিনি। এ ঘটনা পরম করুণাময় ও অনন্ত দাতা আল্লাহর একটি অনুগ্রহ যা আমাকে তাঁর প্রতি আকৃষ্ট করেছে।

এই স্মৃতি-কথা অন্তঃহীন এমন এক অসীম সত্তার সাথে মানুষের গভীর সম্পর্কের প্রকাশ যে সত্তা হিসেব-নিকেশের উর্দ্ধে। মানুষের আত্মা উন্নত শ্রেণীর সত্তা। তাই মহান আল্লাহর সাথে সংযোগ বা সম্পর্ক স্থাপনের যোগ্যতা তার রয়েছে এবং এ ব্যাপারে মানুষের জ্ঞান বৃদ্ধির পাশপাশি তার অগ্রগতি ঘটতে থাকে। এ প্রসঙ্গে আমিরুল মুমিনীন হযরত আলী- আঃ বলেছেন, মানুষ যত বেশী আল্লাহ সম্পর্কে জানতে পারে, ততই তার ঈমান উন্নততর হতে থাকে।

তাই নামাজী যখন তার নামাজে আল্লাহর শ্রেষ্ঠত্ব ও মহত্ত্বকে স্বীকার করে এবং তাঁর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে তখন সে খোদায়ী গুণ ও বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হয়। এ অবস্থায় তার আত্মা হয় উন্নততর। তাই বিধাতার সবচেয়ে সুন্দর উপহার ও সবচেয়ে মূল্যবান সম্পদ হল নামাজ। নামাজ রাসূলের (সাঃ) ধর্মের ভিত্তি। পবিত্র কোরআনের ভাষায় নামাজ দয়া ও অনুগ্রহের উৎস।

মানুষের মধ্যে যেসব অভ্যন্তরীণ প্রবণতা ও শক্তি রয়েছে সেগুলোকে সঠিক পথে পরিচালিত না করা হলে মানুষ অন্যায়, দূর্নীতি ও বিচ্যুতির শিকার হয়। যেমন, লোভ-লালসা মানুষকে বাড়াবাড়িতে লিপ্ত করে এবং এই অনন্ত ক্ষুধা বা চির-অতৃপ্ত লিপ্সা কখনও কখনও মানুষকে ধ্বংস করে দেয়। অন্যদিকে লোভ-লালসার প্রবৃত্তিকে যদি জ্ঞান অর্জনের কাজে লাগিয়ে দেয়া হয় তাহলে তা হয় পূর্ণতা অর্জন বা আদর্শ মানুষ হবার মাধ্যম। তাই লোভ-লালসার প্রবৃত্তিকে সঠিক পথে পরিচালিত না করলে মানুষ এই লোভ-লালসার দাস হয়ে পড়ে।

পবিত্র কোরআন মানুষের লোভ, ধৈর্যহীনতা বা অসহিষ্ণুতার কথা স্মরণ করিয়ে দিয়েছে। মানুষ যখন বিপদ বা কঠিন অবস্থার সম্মুখীন হয়, তখন সে ধৈর্যহীন হয়ে পড়ে। অন্যদিকে মানুষ যখন সম্পদ ও প্রাচুর্যের অধিকারী হয় তখন সে কৃপণ ও রক্ষণশীল হয়ে পড়ে। পবিত্র কোরআন'র সূরা মাআরিজের ১৯- ২৩ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, মানুষ তো স্বভাবতই অতি অস্থিরচিত্ত। সে বিপদগ্রস্ত হলে হা-হুতাশ করতে থাকে এবং ঐশ্বর্যশালী হলে কৃপণ হয়ে পড়ে, তবে তারা নয় যারা নামাজ আদায় করে এবং নামাজে সদা-নিষ্ঠাবান।

প্রকৃত নামাজী সমস্ত সৌন্দয্য ও পূর্ণতার উৎসের সাথে স্থায়ী সম্পর্কের কারণে খোদায়ী গুণাবলীতে বিভুষিত হয় এবং খোদায়ী রং অর্জন করে। ধীরে ধীরে তার স্বভাব থেকে অসঙ্গতি ও খারাপ অভ্যাসগুলো বিদায় নিতে থাকে। মহান আল্লাহর স্মরণ ও ভালবাসা বা খোদা-প্রেম মানুষকে জীবনের সঠিক পথে এবং সৌভাগ্যের দিকে নিয়ে যায়। আর এ কারণেই নামাজী সংকট ও ব্যর্থতার সময় অধৈর্য হয়ে উঠে না এবং সম্পদের অধিকারী হলে অন্যদের ভুলে যায় না।
 
অন্য কথায় নামাজ মানুষের আত্মার শক্তি বৃদ্ধি করে এবং সংকট ও দুঃখ-কষ্টের মোকাবেলায় মানুষকে সহিষ্ণু ও শক্তিশালী করে। নামাজের সংস্কৃতিতে বেড়ে ওঠা বা প্রশিক্ষিত মানুষ সুখের সময় নিজেকে গুটিয়ে নেয় না, বরং অন্যদেরকেও নিজের আনন্দের সাথে শরীক করার চেষ্টা চালায়। অবশ্য নামাজী তখনই এই গুণ অর্জন করে যখন সে নিয়মিত ও নির্দিষ্ট সময়ে নামাজ আদায় করে এবং নামাজের অন্তর্নিহিত তাৎপর্যগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখে।

মানুষের ব্যক্তিত্বের ও চরিত্রের ওপর নামাজের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের কারণে মহান আল্লাহ মানুষকে আল্লাহর স্মরণ ও জিকিরের মাধ্যমে পার্থিব লোভ-লালসা থেকে নিজেদের পবিত্র করতে বলেছেন এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী হতে বলেছেন। পবিত্র কোরআন আয়-উপার্জনকে ভালো ও কল্যাণকর কাজ বলে অভিহিত করেছে। একইসাথে এটাও বলেছে যে আয়-উপার্জন প্রকৃত নামাজীকে আল্লাহর স্মরণ থেকে বিচ্যুত বা উদাসীন করে না। কারণ মহান আল্লাহর স্মরণ কল্যাণের পথে মানুষের সবচেয়ে বড় পৃষ্ঠপোষক ও সবচেয়ে বড় আশ্রয়স্থল।
২৯ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে