শনিবার, ৩০ এপ্রিল, ২০১৬, ০৪:১৯:২৭

ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ পরিত্যাগ করা কি কুফরির সামিল, কি বলছে ইসলাম? (১১তম পর্ব)

ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ পরিত্যাগ করা কি কুফরির সামিল, কি বলছে ইসলাম? (১১তম পর্ব)

ইসলাম ডেস্ক : প্রিয় পাঠক! নামাজ বিশ্লেষণমূলক ধারাবাহিক এই আলোচনায় আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। আজকের আসরে ইসলাম ধর্মের প্রধান ভিত্তি নামাজ সম্পর্কে আমরা আলোচনা করার চেষ্টা করবো। ইসলামের দৃষ্টিতে সৎকর্মশীলদের অন্যতম লক্ষণ হল- তারা নামাজ কায়েম করেন। নামাজের মাধ্যমে মানুষ পরিচিত হয় আধ্যাত্মিকতার সাথে এবং আস্বাদন করে খোদার স্মরণের মাধুর্য। রূকু ও সেজদায় আল্লাহর প্রশংসা জ্ঞাপনের পাশাপাশি নিজের বিনয়াবনত ভাব মানুষের মধ্যে এনে দেয় বেহেশতের সৌরভ এবং অনাবিল স্বর্গীয় প্রশান্তি। এভাবে নামাজ মানুষের মনকে করে প্রফুল্ল।
 
নামাজের কল্যাণ ও গুরুত্ব প্রসঙ্গে ইরানের সমসাময়িক যুগের কবি রেজা ইসমাঈলী লিখেছেন,
নামাজের নূরে কর সুন্দর মুখমন্ডলকে
কেবলার দরজাকে উন্মুক্ত কর তোমার দিকে।
যদি হারিয়ে থাকো নিজ আত্মাকে
প্রেমময় নামাজের দর্পনে খুঁজে পাবে হারানো আত্মাকে।

ইসলামী ইরানের সর্বোচ্চ নেতা হযরত আয়াতুল্লাহিল উজমা খামেনেয়ী নামাজের গুরুত্ব প্রসঙ্গে বলেছেন, নামাজ আধ্যাত্মিক পথ-পরিক্রমার প্রধান মাধ্যম বা আল্লাহর নৈকট্য অর্জনের প্রধান পথ। খোদায়ী ধর্মগুলো মানুষের জন্য নামাজের ব্যবস্থা করেছে যাতে এর মাধ্যমে তারা মানব-জীবনের চূড়ান্ত লক্ষ্য তথা ইহকাল ও পরকালে মুক্তি এবং সৌভাগ্য অর্জন করতে পারে। নামাজ মহান আল্লাহর দিকে অগ্রসর হবার প্রথম পদক্ষেপ বা ধাপ। কিন্তু এই ইবাদতের এতো শক্তি বা বরকত রয়েছে যে তা পূর্ণতার শিখরে ওঠা মানুষের জন্যেও বা স্বর্গীয় মানুষের জন্যেও আরো উচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হবার মাধ্যম হতে পারে।

এ কারণেই মানব-ইতিহাসের শ্রেষ্ঠতম মানুষ অর্থাৎ বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) বলেছেন, নামাজ আমার চোখের আলো। তিনি নামাজের সময় হলে নিজ মুয়াজ্জিন হযরত বেলাল (রাঃ)-কে আযান দিতে বলতেন যাতে তাঁর হৃদয় নিরাপত্তা ও প্রশান্তিতে ভরপুর হয়ে উঠে। তাই এটা বলা যেতে পারে যে সম্ভবতঃ অন্য কোনো এবাদতই মানুষের আধ্যাত্মিক পূর্ণতার প্রতিটি পর্যায়ে নামাজের মত এতটা সহায়ক, শক্তিদায়ক এবং অগ্রগতির চালিকা-শক্তি নয়।

কিন্তু মানুষের অন্তরে নামাজের প্রভাব ও সুফলগুলোকে বদ্ধ-মূল করার জন্য কিছু শর্ত পূরণ বা পরিবেশ সৃষ্টি জরুরী। এ প্রসঙ্গে ধর্ম বিষয়ক প্রখ্যাত গবেষক ডক্টর মীর বাকেরী বলেছেন, ইবাদত-বন্দেগী মানুষের সহজাত চাহিদা বা প্রকৃতিগত স্বভাব। মানুষের এই চাহিদা পূরণের শ্রেষ্ঠ সময় যৌবন। এ সময়েই মানুষের আত্ম-পরিচয় অর্জনের পিপাসা তীব্রতর থাকে। জীবনের এ পর্যায়ে শারীরীক পরিবর্তনের পাশাপাশি চিন্তা ও অনুভূতি বা আবেগের জগতেও অনেক পরিবর্তন ঘটে। এ বয়সে অর্থাৎ তারুণ্য ও যৌবনের পর্যায়ে মানুষ প্রচলিত ধারণা বা তথ্যগুলো সম্পর্কে সন্দিহান হয়ে উঠে এবং এসব তথ্য বা ধারণা ও নিজের কাঙ্ক্ষিত আদর্শের মধ্যে ব্যাপক ব্যবধান দেখতে পায়। বিশ্ব-জগতে বা সৃষ্টি জগতে নিরঙ্কুশ শক্তির অধিকারী কে - এই প্রশ্নই তার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ জিজ্ঞাসা হয়ে দেখা দেয়। অধিকাংশ চিন্তাবিদের মতে এই পর্যায়ে মানুষের আধ্যাত্মিক দিক জাগ্রত হয় এবং একমাত্র এই আধ্যাত্মিক দিকই মানুষের ধ্বংসাত্মক কূ-প্রবৃত্তির পাশাপাশি একটি নিয়ন্ত্রণকারী ও প্রশান্তিদায়ক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে।

মানুষের আত্মিক প্রবণতা তাকে দয়াময় ও মহানুভব আল্লাহমুখী করে। আল্লাহমুখী হওয়ার অর্থ অবিনশ্বর ও অসীম শক্তির শরণাপন্ন হওয়া। পবিত্র কোরআনের সূরা কাসাসের ৮৮ নম্বর আয়াতে এ প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, "তোমরা আল্লাহর সাথে অন্য কাউকে উপাস্য ডেকো না। তিনি ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। আল্লাহর সত্তা ব্যতীত সব কিছুই ধ্বংসশীল। বিধান তাঁরই। সব কিছু তাঁরই দিকে ফিরে আসবে।"

ঈমানের আলোয় আলোকিত ইরানের বর্তমান যুব প্রজন্মের এক সদস্য মিসেস মারজিয়া ইব্রাহিমী। তিনি নামাজ সম্পর্কিত এক নিবন্ধে নিজের অনুভূতি তুলে ধরতে গিয়ে বলেছেন, "মুয়াজ্জিন যখন আন্তরিক ও উদ্দীপ্ত বা প্রফুল্ল চিত্তে মানুষকে ইবাদতের দিকে আহ্বান জানায় এবং দূর্বল ও ক্ষুদ্র এক সৃষ্টি অসীম, অজর-অক্ষয় সত্তার সামনে দাঁড়ায় তখন সে দৃশ্য কতই না সুন্দর! প্রবৃত্তির কোলাহল বা হৈ-হল্লাতে ভরা জগত থেকে দূরে সরে গিয়ে একজন যুবক বা যুবতীর আত্মা যখন নির্জনতার জগতে পাখা মেলে দেয় এবং বিশ্ব-জগতের প্রতিপালকের সাথে কথোপকথনে লিপ্ত হয়, তখন সে দৃশ্য কতই না সুন্দর! নামাজ হল বিশ্ববাসীর প্রভুর সামনে দাসত্বের স্বীকারোক্তি। এই স্বীকারোক্তি মানুষের আত্মার গভীরে প্রবেশ করে তাকে উন্নত করে। "

বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) নামাজকে ধর্মের স্তম্ভ এবং ঈমান ও কুফরির সীমানা বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, ইচ্ছাকৃতভাবে নামাজ পরিত্যাগ করা হল বিশ্বাস ও অবিশ্বাস বা কুফরির মধ্যে ব্যবধান, কিংবা নামাজের ব্যাপারে কম আগ্রহী বা উদাসীন হওয়াটা কুফরি।

নামাজ সম্পর্কে জাহরা ফাতেমী নামের খোদাভীরু এক ইরানী তরুণী বলেছেন, যখন নামাজে দাঁড়াই তখন আল্লাহর প্রতি ভালবাসার সৌরভ বা সুঘ্রাণ আমার ক্লান্ত প্রাণ প্রশান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। নামাজের আলোয় আমার ক্ষুদ্র ও অন্ধকার মন আলোকিত হয়ে ওঠে। খোদা-প্রেমের আকুতি আমার কণ্ঠকে বাস্পরূদ্ধ করে এবং আমার সমগ্র সত্তায় আল্লাহর স্মরণ জাগ্রত হয়, আমি আল্লাহর মহত্ত ও অসীমত্বের সামনে আনত হই বা সিজদায় নিমগ্ন হই। নামাজের আধ্যাত্মিক সফর শেষ হলে আমি নতুন এক মানুষে পরিণত হই এবং আমি হয়ে উঠি আশান্বিত ও প্রাণবন্ত, প্রফুল্ল। এ সময় আমার মনে হয় খোদায়ী রহমতের বৃষ্টি আমার আত্মার সমস্ত রং ধুয়ে ফেলেছে এবং আমার দৃঢ় বিশ্বাস জন্মে যে মানুষের আত্মা ও মনের মুক্তির একমাত্র পথ নামাজ।

নামাজকে শ্রেষ্ঠ ইসলামী এবাদত বলা হয়। নবী হিসেবে মনোনীত হবার পর বিশ্বনবী (সাঃ)কে নামাজের বিধান দেয়া হয়। পবিত্র কোরআনও প্রকৃত নামাজীদেরকে চিরন্তন মুক্তি ও সৌভাগ্যের সুসংবাদ দেয়। এই মহাগ্রন্থের ভাষ্য অনুযায়ী নামাজীরা তাদের এই কারবার বা ব্যবসার জন্য কখনও ক্ষতিগ্রস্ত নন এবং প্রকৃত মুমিন তারাই যারা নামাজ আদায় করে, জাকাত দেয় ও পরকালে দৃঢ়-বিশ্বাসী। পবিত্র কোরআনে সূরা ত্বাহার ১৪ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ বলেছেন, আমিই এক আল্লাহ (একমাত্র প্রভু)। অতএব আমারই ইবাদত কর এবং আমার স্মরণার্থে ইবাদত কর।-আইআরআইবি
৩০ এপ্রিল, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে