বুধবার, ০৪ মে, ২০১৬, ০৪:৪৪:৩৭

'নামাজ মুমিন বান্দার জন্য মেরাজ স্বরূপ' (১৫তম পর্ব)

'নামাজ মুমিন বান্দার জন্য মেরাজ স্বরূপ' (১৫তম পর্ব)

ইসলাম ডেস্ক : প্রিয় পাঠক! নামাজের বিশ্লেষণমূলক ধারাবাহিক এই আলোচনায় আপনাদের স্বাগত জানাচ্ছি। নামাজ মহান আল্লাহর সান্নিধ্য লাভের উপায়-শীর্ষক ধারাবাহিক আলোচনার আজকের আসর থেকে আপনাদের জানাচ্ছি ইসলামী ভ্রাতৃত্বসহ অশেষ দোয়া, কল্যাণকামীতা, ভালোবাসা ও সহমর্মীতায় পরিপূর্ণ সালাম এবং অফুরন্ত উষ্ণ শুভেচ্ছা। আর সবার জন্য দয়াময় ও মহান আল্লাহর কাছে কামনা করছি রহমত ও বরকতের বেহেশতী সৌরভে সিক্ত পবিত্র রজব, শাবান এবং রমজান মাসের সমস্ত কল্যাণ। আশা করছি মহান আল্লাহ এইসব পবিত্র মাসে আমাদের সবার নামাজ-রোজা ও সৎকর্ম কবুল করবেন এবং আল্লাহর একান্ত সান্নিধ্য ও সন্তুষ্টি লাভের পথে এগিয়ে নেবেন।

নামাজ সম্পর্কে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের একটি কবিতার কিছু অংশ উদ্ধৃত করার পর শুরু করবো নামাজ সম্পর্কিত আজকের আলোচনার মূল পর্ব :
মসজিদে ঐ শোনরে আযান, চল নামাজে চল।
দুঃখে পাবি সান্ত্বনা তুই, বক্ষে পাবি বল।
ওরে চল নামাজে চল।।
তুই হাজার কাজের অসিলাতে নামাজ করিস কাজা,
খাজনা তারি দিলিনা, যে দ্বীন দুনিয়ার রাজা।
তারে পাঁচবার তুই করবি মনে তাতেও এত ছল।
ওরে চল নামাজে চল।

নামাজ মহান আল্লাহর প্রেমের সোপান। আল্লাহ ও বান্দার মধ্যে ভালবাসার সর্বোত্তম চালিকা শক্তি নামাজ। নামাজ অন্তরের আলো, আত্মার সংস্কারক এবং মানসিক প্রশান্তির মাধ্যম। এ এমন এক মাধ্যম যা মানুষকে আধ্যাত্মিক উর্ধ্বলোক বা বেহেশতী পরিবেশের সাথে সম্পর্কিত করে। আল্লাহর সাথে ঘনিষ্ঠতা সৃষ্টিতে নামাজের কার্যকারীতা অপরিসীম। আর এ জন্যই হাদীসে বলা হয়েছে, 'নামায মুমিনের জন্য মেরাজ স্বরূপ' অপর হাদীসে বলা হয়েছে, নামাজ বেহেশতের চাবিকাঠি। নামাজ ছাড়া মানুষের অস্তিত্বের আকর স্পন্দনহীন, নিস্প্রাণ বা বন্ধ্যা বিরাণভূমির মত, যাতে জন্ম নেয় না সৃষ্টিশীল কোনো কিছু, গজায় না কোনো বৃক্ষ এবং ফুল বা ফল তো দূরের কথা । যারা নামাজের সংস্কৃতি ও মূল্যবোধ সম্পর্কে অজ্ঞ তারা আধ্যাত্মিক শুন্যতার চরম শিকার।
 
মুসলমানরা সংখ্যালঘিষ্ঠ এমন দেশে বা অমুসলিম অধ্যুষিত কোনো দেশে কোনো মুসলমানের একনিষ্ঠ চিত্তের নামাজ আদায়ের দৃশ্য অনেক অমুসলমানের কাছে ইসলামের বাণীর মর্মকথা পৌঁছে দেয়। এক আল্লাহর এবাদতের এমন সুন্দর দৃশ্য দেখে অনেক অমুসলিম ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট হয়েছেন। তারা যখন দেখেন যে একজন মুসলমান বস্তুগত চাওয়া-পাওয়ার কোলাহলে পরিপূর্ণ এ বিশ্বে আল্লাহর সামনে সবচেয়ে বিনয়ী, নম্র ও ভীত-বিহ্বল এবং তারা এই নামাজে দাঁড়িয়ে সৎ ও কল্যাণকামী হবার মত গুণ বা যোগ্যতা অর্জনের প্রার্থনা করেন, তখন তারা বিস্মিত না হয়ে পারেন না। হয়তো এমনই মুহূর্তে তারা বলতে চান,
হে নামাজী, আমার ঘরে নামাজ পড় আজ
তব চরণতলে দিলাম পেতে হৃদয়-জায়নামাজ।

অনেকেই প্রশ্ন করেন নামাজের কি সামাজিক কোনো সুফল আছে অথবা নামাজ কি সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় অবদান রাখে? পবিত্র কোরআনে পাকে বলা হয়েছে, নামাজ মানুষকে মন্দ কাজ ও অশ্লীলতা থেকে দূরে রাখে। নামাজ মানুষকে এ কথা স্মরণ করিয়ে দেয় যে আল্লাহ সর্বত্র উপস্থিত রয়েছেন এবং তিনি মানুষের সব কাজ দেখছেন। আর যে ব্যক্তি এ কথা মনে রাখেন তিনি কোনো অন্যায়, অবিচার বা মন্দ কাজে জড়িত হতে পারেন না। অবশ্য যারা নামাজের তাৎপর্য ভালোভাবে উপলব্ধি করেন এবং যেভাবে নামাজ আদায় করা উচিত সেভাবে নামাজ আদায় করেন তারাই নামাজের সামাজিক সুফলগুলো পুরোপুরি ভোগ করতে পারেন। প্রকৃত নামাজী নিজে যেমন মিথ্যা কথা বলেন না, কারো ওপর জুলুম করেন না এবং কাউকে বিভ্রান্ত করেন না, তেমনি তিনি কারো ওপর জুলুমও সহ্য করেন না ও কারো প্রচারণায় বিভ্রান্তও হন না, কিংবা কারো মিথ্যা কথায় কান দেন না। বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মাদ (সাঃ) ও আমীরুল মুমিনীন হযরত আলী (আঃ)'র মত ব্যক্তিত্বরা ছিলেন শ্রেষ্ঠ নামাজী এবং আর এ কারণেই তাঁরা ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বেশী অবদান রেখে গেছেন।

আল্লাহর সন্তুষ্টি অর্জন নামাজের লক্ষ্য। মানুষ মহান আল্লাহর অসীম ক্ষমতার মোকাবেলায় পুরোপুরি অক্ষম, দূর্বল ও হীন দাসানুদাস। এ জন্যই নামাজী নামাজের মধ্যে বলেন, আমরা একমাত্র তোমারই এবাদত করি এবং একমাত্র তোমারই সাহায্য চাই। মানুষের যে কোনো ক্ষমতা নাই, যা কিছু আছে তা আল্লাহরই দেয়া, এ কথা স্বীকার করার মাধ্যমে নামাজী তার মধ্যে অহংকারের মূলগুলো উৎপাটন করেন। নামাজী নামাজে একথাও বলেন যে, সব কিছুর মালিক হলেন মহান আল্লাহ। এই উচ্চারণ নামাজীকে সব ধরনের আত্মকেন্দ্রীকতা, হিংসা, স্বার্থপরতা ও নিজেকে বড় ভাবার চিন্তা থেকে দূরে রাখে। ফলে মানুষ অন্যের অধিকার ক্ষুন্ন করা বা অন্যের ক্ষতি করা থেকে বিরত থাকেন।

মানব সমাজে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠার পথে বাধাগুলো হলো আত্মকেন্দ্রীকতা, হিংসা, স্বার্থপরতা ও নিজেকে বড় ভাবার চিন্তা, অজ্ঞতা, লোভ এবং অসহিষ্ণুতা বা অধৈর্য প্রভৃতি। নামাজ মানুষের এ ধরনের স্বভাবের বিরুদ্ধে সংগ্রামের মাধ্যম। নামাজ মানুষের মধ্যে ধৈর্য ও অন্যের অধিকার রক্ষা এবং অন্যের কল্যাণকামীতার গুণের মত বিভিন্ন মহৎ গুণের বিকাশ ঘটায়। আল্লাহ নিজে ন্যায় বিচারক এবং তিনি বিশ্বের সব কিছুই ন্যায়-বিচারের ভিত্তিতে গড়ে তুলেছেন। একই কারণে আল্লাহ ন্যায়বিচারকামীদের পছন্দ করেন। তাই নামাজীও জীবনের সবক্ষেত্রে ন্যায় বিচার এবং সামাজিক বিধি-বিধানের বাস্তবায়ন ও ভারসাম্য প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট হন।

নামাজ আদায়ের অন্যতম শর্ত হলো নামাজীর পোশাক ও নামাজ পড়ার স্থান বৈধ হতে হবে। চুরি করা বা অন্যের কাছ থেকে কেড়ে নেয়া পোশাক পরে বা অবৈধভাবে কুক্ষিগত করা স্থানে নামাজ পড়লে তা জায়েজ হবে না। এভাবে নামাজ অন্যের অধিকার রক্ষার গুরুত্ব তুলে ধরে এবং নামাজীকে জীবনের সবক্ষেত্রে ন্যায়বিচার চর্চায় অভ্যস্ত করে। এভাবে দেখা যায়, নামাজ আত্মশুদ্ধি তথা ব্যক্তিগত ক্ষেত্রসহ পরিবার ও রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে বা সামাজিক ক্ষেত্রেও ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় মানুষের মনের অভ্যন্তরীণ প্রেরণা বা চালিকাশক্তি হিসেবে ব্যাপক অবদান রাখে।-আইআরঅাইবি
৪ মে, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে