শনিবার, ০৭ মে, ২০১৬, ১০:৪৭:২৬

পানির প্রতিটি ফোটা আল্লাহর রহমত

পানির প্রতিটি ফোটা আল্লাহর রহমত

মুহাম্মাদ লুতফেরাব্বী : মানব জীবনে পানির গুরুত্ব অপরিসীম। আল্লাহ তায়ালা পবিত্র কুরআনে বলেন, ‘আমি পানি থেকে সবকিছুকে জীবন দান করেছি।’ জীব-তরুলতার অস্তিত্ব ও বিকাশে সর্বযুগেই পানি প্রধান উপকরণ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। মানবধর্মে যে চারটি জিনিস সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত ঘোষণা করা হয়েছে তার মধ্যে পানি অন্যতম। এজন্য নবিগণের আনীত শরিয়তসমূহেও পানির সদ্বব্যবহার ও অপচয়রোধের তাকিদ এসেছে। পাশাপাশি পানি পান করানো ও পানির মাধ্যমে জনসেবার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।

এক হাদিসে রাসুলুল্লাহ সা. ইরশাদ করেন, ‘যদি কোনো মুসলমান অন্য কোনো মুসলমানকে পিপাসার্ত অবস্থায় পানি পান করায় তাহলে আল্লাহ তাকে রাহিকুল মাখতুম (জান্নাতের বিশেষ পানীয়) থেকে পান করাবেন।’ আহমদ, আবু দাউদ
অন্য হাদিসে এসেছে, ‘বনি ইসরাইলের এক ব্যাভিচারিনী মহিলা এক কুকুরকে পানি পান করানোর বদলে আল্লাহর ক্ষমা লাভ করেছেন।’
ইসলামের শুরু যুগ থেকেই মুসলমানদের মাঝে পানি পান করানো ও সর্বসাধারণের জন্য পানিসেবা উন্মুক্ত করার রীতি চলে আসছে। মদিনায় হিজরতের পর যখন মুসলমানদের পানি সংকট দেখা দিল তখন হজরত উসমান রা. এক ইহুদির কাছ থেকে মিঠাপানির কূপ ‘বিরে রুমা’ কিনে মুসলমানদের জন্য ওয়াকফ করে দেন। ১৮৬ হিজরিতে খলিফা হারুনুর রশীদের স্ত্রী বিবি যুবায়দা হজ পালনকালে মক্কায় হাজিদের পানির কষ্ট দেখতে পান। তখন তিনি পাহাড়ের জলপ্রপাত থেকে মক্কা শহর পর্যন্ত খাল কাটার নির্দেশ দেন। তাঁর একক প্রচেষ্টায় ও ব্যক্তিগত খরচে প্রায় সাড়ে ষোল কিলোমিটার লম্বা খাল খনন করা হয় এবং সেখান থেকে বিভিন্ন পয়েন্টে হাজি ও মুসাফিরদের পানির যাবতীয় প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থা করা হয়। বলা হয়, মক্কা থেকে তায়েফমুখী এই খাল খননকার্যে বিবি যুবায়দা আনুমানিক ৫৯৫০ কিলোগ্রাম স্বর্ণ খরচ করেছিলেন। ইতিহাসে এটি ‘উয়ুন যুবায়দা’ বা ‘বিরকাতে যুবায়দা’ হিসেবে প্রসিদ্ধ এবং ১২০০ বছর পরও এখান থেকে সেচপ্রকল্প অব্যাহত রয়েছে।
জনগণের পানির চাহিদা মেটানোর মূল দায়িত্ব দেশের সরকারের এবং ইসলামি শরিয়তে পানিসংক্রান্ত বিধিমালা বিস্তারিত লিপিবদ্ধ রয়েছে। তবে ব্যক্তিগত উদ্যোগে বিভিন্ন প্রকল্পের প্রচলন রয়েছে অনেক দেশে। আরব দেশগুলোতে প্রায় মসজিদের সামনে পথচারীদের জন্য বিশুদ্ধ পানির পাকা কল বা কোল্ডার মেশিন দেখা যায়। এছাড়াও সেচকাজে মটর বিতরণ, গ্রামাঞ্চলে পানির লাইন পৌঁছানো ইত্যাদি কাজও অনেক হয়। এসব খাতে ওয়াকফ, সাধারণ দানের বাইরে জাকাতের অর্থও শর্তসাপেক্ষে ব্যবহারের অবকাশ রয়েছে। বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ হলেও বিভিন্ন মওসুমে নানা কারণে খরা দেখা দেয়। পানিস্বল্পতায় ব্যহত হয় কৃষিকাজ, ক্ষতিগ্রস্থ হয় কৃষক। এছাড়া গৃহাস্থলীর যাবতীয় কাজে সর্বদা পানির প্রয়োজন হলেও গ্রীষ্মকালে এর চাহিদা বেড়ে যায় বহুগুণে। গরমের তাপদাহে অতিষ্ট মানুষের পরম পাওয়া হলো এক চুমুক পানি। আসন্ন রমজানকে উপলক্ষ করে প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও সেবাসংস্থাগুলোর পক্ষ থেকে বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি বিতরণ ও মসজিদভিত্তিক ফিল্টার বা কোল্ডার মেশিন স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হোক এই প্রত্যাশা রইলো।-আমাদের সময় ডট কম
৭ মে,২০১৬/এমটিনিউজ২৪

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে