সোমবার, ১৬ মে, ২০১৬, ১১:২২:০৭

সুবহানাল্লাহ, মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ২৫ জন নবীর নাম ও পরিচয়

সুবহানাল্লাহ, মহাগ্রন্থ পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ২৫ জন নবীর নাম ও পরিচয়

মোঃ জহিরুল ইসলাম : পবিত্র কুরআন মহান আল্লাহ তা'য়ালা মানব জাতীর হিদায়াতের জন্য নাজিল করেছেন। তাঁর প্রিয় বান্দাদের হিদায়াতের জন্য এই মহাগ্রন্থে মহান আল্লাহ ২৫ জন নবীর নাম উল্লেখ করে তাঁদের জীবনের অনেক ঘটনার বর্ণনা দিয়েছেন। তাঁদের কারো কারো আলোচনা বিভিন্ন সূরায় একাধিক জায়গায় স্থান পেয়েছে। আবার কারো কারো নামে সূরার নামকরণ করা হয়েছে। পবিত্র কোরআনে বর্ণিত ২৫ জন নবীর নাম ও তাঁদের সংক্ষিপ্ত পরিচিতি তুলে ধরা হলো।

১. হজরত আদম আলাইহিস সালাম। সৃষ্টির প্রথম মানব এবং প্রথম নবী। প্রবিত্র কোরআনের মহান আল্লাহ তা'য়ালা মোট ৯টি সূরার ২৫ জায়গায় এই নবীর নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি আমাদের অধিপিতা।

২. হজরত ইদরিস আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে পাকে মহান আল্লাহ তা'য়ালা দু’টি সূরায় দু’বার উল্লেখ করেছেন এই নবীর নাম। তিনি সর্বপ্রথম কলম দ্বারা লিখেছেন। আল্লাহতায়ালা তাঁকে সিদ্দিক হিসেবে কোরআনে পাকে আখ্যা দিয়েছেন এবং তিনি সর্বপ্রথম কাপড় সেলাই করে পরিধান করা শুরু করেন।

৩. হজরত নুহ আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা ২৮টি সূরায় ৪৩ বার এই নাবীর নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি নিজ জাতিকে সাড়ে ৯শ’ বছর এক আল্লাহর দাওয়াত দিয়েছেন। তাঁর ছেলে কেনানকে কুফরির কারণে আল্লাহতায়ালা মহাপ্লাবনে ডুবিয়ে মেরেছিলেন।

৪. হজরত হুদ আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা তিনটি সূরায় সাতবার এই নবীর নাম উল্লেখিত করেছেন। তাঁকে আদ জাতির নিকট প্রেরণ করা হয়েছিল। নূহ (আ.)-এর সম্প্রদায়কে প্লাবন দ্বারা ধ্বংস করার পর সর্বপ্রথম তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা মূর্তিপূজায় লিপ্ত হয় এবং আল্লাহ তাদেরকে প্রচন্ড ঝড় দ্বারা ধ্বংস করে দেন।

৫. হজরত সালেহ আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা এই নবীর নাম চারটি সূরায় ৯টি স্থানে উল্লেখ করেছেন। তাঁকে ছামূদ জাতির নিকট প্রেরণ করা হয়। সালেহ (আ.)-এর মুজেযা ছিল উটনির পেট থেকে বাচ্চা জন্ম দেয়ানো।

৬. হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা ২৫ সূরায় ৬৯ বার উল্লেখ করেছেন। তিনি ইরাকে জন্মগ্রহণ করেন ও ফিলিস্তিনে বসতি স্থাপন করেন। পরে আল্লাহতায়ালার হুকুমে স্ত্রী ও শিশু সন্তান ইসমাঈলকে জনমানবহীন মক্কায় রেখে আসেন। মহান আল্লাহ তা'য়ালা তাঁকে অনেক পরিক্ষা করেছেন। আর তিনি সব ধরনের পরিক্ষায় পাস করেছেন। হজরত ইবরাহিম আলাইহিস সালামকে আবুল আম্বিয়া বা নবীদের পিতা বলা হয়। তিনি ছেলে ইসমাঈলকে সঙ্গে নিয়ে কাবা ঘর নির্মাণ করেন ও সর্বপ্রথম মানুষকে বায়তুল্লাহর হজ করার জন্য আহ্বান করেন। তিনি মুসলিম জাতীর পিতা।

৭. হজরত লুত আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা চৌদ্দটি সূরায় ২৭ বার উল্লেখ করেছেন এই নবীর নাম। তাঁর স্ত্রী কাফের ছিল। তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা সমকামিতার মতো পাপে লিপ্ত ছিলো। ফলে আল্লাহতায়ালা তাদের কঠোর শাস্তি প্রদান করেন।

৮. হজরত ইসমাঈল আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা আটটি সূরায় ১২টি স্থানে এই নবীর নাম উল্লেখ করেছেন। জন্মের পূর্বেই তাকে বিজ্ঞ বলে সুসংবাদ দেয়া হয়েছিল।

৯. হজরত ইসহাক আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা ১২টি সূরায় মোট ১৭ বার এই নবীর নাম আলোচনা করেছেন। তিনি ও ইসমাঈল আ. সম্পর্কে ভাই ছিলেন।

১০. হজরত ইয়াকুব আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা ১০টি সূরায় ১৬ বার এই নবীর নাম আলোচনা করেছেন। তার আরেক নাম হলো ইসরাইল। তার নামানুসারে বনী ইসরাঈল সম্প্রদায়ের নামকরণ করা হয়েছে।

১১. হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা তিনটি সূরায় ২৭ বার এই নবীর নাম উল্লেখ করেছেন। এ ছাড়া সূরা ইউসুফ নামে হজরত ইউসুফ আলাইহিস সালামের ঘটনা সম্বলিত একটি স্বতন্ত্র সূরা রয়েছে পবিত্র কোরআনে পাকে। তিনি নিজে নবী ছিলেন এবং তার পিতা ইয়াকুব (আ.), তার দাদা ইসহাক (আ.) ও পরদাদা ইবরাহীম (আ.) নবী ছিলেন।

১২. হজরত শোয়াইব আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা চারটি সূরায় ১১ বার এই নবীর নাম উল্লেখ করেছেন। তাঁর সম্প্রদায়ের লোকেরা মাপে বা ওজনে কম দেয়ার কারণে এই দুনিয়াতেই কঠিন আজাবপ্রাপ্ত হয়েছিল।

১৩. হজরত আইয়ুব আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা চারটি সূরার চার জায়গায় এই নবী সম্পর্কে আলোচনা করেছেন। আল্লাহ তা'য়ালা তাঁকে দীর্ঘকাল কঠিন অসুখ দিয়ে পরীক্ষা করেছিলেন। কিন্তু তিনি ধৈর্যধারণ করে ওই পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন।

১৪. হজরত যুলকিফল আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা দু‍’টি সূরায় দু’বার এই নবীর নাম আলোচনা করেছেন।

১৫. হজরত মূসা আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা সবচেয়ে বেশি বার এই নবীর নাম উল্লেখ করেছেন। ৩৪টি সূরায় ১৩৭ বার আলোচিত হয়েছেন তিনি। বনী ইসরাঈলের প্রথম নবী ছিলেন তিনি। জন্মের পর মূসা আলাইহিস সালামকে তার মা বাক্সে ভরে নীল নদে ভাসিয়ে দেন। আল্লাহর কুদরত হিসেবে পরে তিনি জালেম বাদশা ফেরাউনের বাড়িতে লালিত-পালিত হন। নবী মূসাকে আল্লাহতায়ালা অনেকগুলো মুজেযা দিয়েছিলেন। তন্মধ্যে একটি হলো মূসা (আ.) তার হাতের লাঠি মাটিতে রেখে দিলে তা বিশাল বড় সাপে পরিণত হতো। পরে তিনি সেটা হাতে নিলে আবার লাঠি হয়ে যেত।

১৬. হজরত হারুন আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা ১৩টি সূরায় ২০ বার এই নবীর নাম আলোচনা করেছেন। তিনি নবী মূসা (আ.)-এর ভাই ছিলেন। তিনি বাগ্মীতার পারদর্শী ছিলেন।

১৭. হজরত দাউদ আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা ৯টি সূরায় ১৬ বার এই সবীর নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি নিজে রোজগার করে সংসার চালাতেন। তাকে যাবুর কিতাব প্রদান করা হয়েছিল। তিনি প্রতি একদিন পর পর রোজা রাখতেন।

১৮. হজরত সোলায়মান আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা সাতটি সূরায় ১৭ বার উল্লেখ হয়েছেন এই নবীর নাম। তিনি সারা পৃথিবীর বাদশাহ ছিলেন। পশু-পাখীদের ভাষা বুঝাসহ মুজেযাস্বরূপ বাতাস নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা পেয়েছিলেন তিনি।

১৯. হজরত ইলিয়াস আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা দু’টি সূরায় তিনবার উল্লেখ করেছেন এই নবীর নাম।

২০. হজরত ইয়াসা আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা দু’টি সূরায় দু’বার আলোচনা করেছেন এই নবী প্রসঙ্গে।

২১. হজরত ইউনুস আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা দু’টি সূরায় দু’বার উল্লেখ করেছেন এই নবীরন নাম। তাকে মাছে গিলে ফেলেছিল। পরে তিনি দোয়া করার পর আল্লাহতায়ালা তাকে মুক্তি দিয়েছেন। তিনি নিনুওয়া এলাকার লোকদের নিকট প্রেরিত হয়েছিলেন। পূর্ববর্তী সমস্ত নবীর অধিকাংশ উম্মত তাদের সঙ্গে কুফরি করলেও ইউনুস (আ.)-এর সম্প্রদায়ের সবাই তার প্রতি ঈমান এনেছিলেন।

২২. হজরত জাকারিয়া আলাইহিস সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা চারটি সূরায় সাতবার এই নবীর নাম উল্লেখ করেছিলেন। তিনি পেশায় কাঠুরে ছিলেন।

২৩. হজরত ইয়াইয়া আলাইহিম সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা চারটি সূরায় পাঁচবার উল্লেখ করেছেন এই নবী প্রসঙ্গে। তাকে কিশোর অবস্থাতেই আল্লাহ জ্ঞানী করেছিলেন এবং তাকে তাওরাতের শিক্ষা দিয়েছিলেন।

২৪. হজরত ঈসা আলাইহি সালাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা ১১টি সূরায় ২৫ বার এই নবীর নাম উল্লেখ করেছেন। তিনি বনী ইসরাইল সম্প্রদায়ের সর্বশেষ নবী। তার আরেকটি নাম হলো মাসিহ।

২৫. হজরত মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম। পবিত্র কোরআনে মহান আল্লাহ তা'য়ালা চারটি সূরায় মাত্র চার জায়গায় আমাদের প্রিয় নবীজির কথা উল্লেখ করেছেন। পবিত্র কোরআনের অন্যান্য অনেক স্থানে মহান আল্লাহ তা'য়ালা তাঁর গুণবাচক নাম উল্লেখ করেছেন। অথবা আইয়ুহান নবী কিংবা আইয়ুহার রাসুল বলে সম্বোধন করা হয়েছে। এটা বিশ্বনবীর সম্মান ও মর্যাদার পরিচয় বহন করে। তিনি সর্বশেষ নবী তারপর আর কোনো নবী এই পৃথিবীতে আসবেন না। মুহাম্মদ (সা.)এর মাধ্যমেই নবুয়াতের দরজা বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কেয়ামতের দিন তিনি সকল নবীর সরদার হিবে দায়িত্ব পালন করবেন।
১৬ মে, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে