ইসলাম ডেস্ক :১৭. তারা কি তাদের সমতুল্য, যারা তাদের প্রতিপালক-প্রেরিত স্পষ্ট প্রমাণের ওপর প্রতিষ্ঠিত, যারা অনুসরণ করে আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত সাক্ষীর এবং তার আগের মুসার গ্রন্থও এর সাক্ষী, যা ছিল পথনির্দেশক ও রহমতস্বরূপ? তারাই এতে (এই কোরআনে) বিশ্বাস স্থাপন করে। আর অন্যান্য দলের যারা (কোরআনকে) অস্বীকার করে, দোজখই হচ্ছে তাদের স্থান। সুতরাং তুমি তাতে সন্দিহান হয়ো না। নিঃসন্দেহে এটি তোমার প্রতিপালকের পক্ষ থেকে ধ্রুব সত্য। কিন্তু অনেকেই তা বিশ্বাস করে না। (সুরা : হুদ, আয়াত : ১৭)
তাফসির : আগের আয়াতে তাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছিল, যারা অসৎ উদ্দেশ্যে ভালো কাজ করে। আলোচ্য আয়াতে তাদের প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে, যারা ভালো কাজ করে এবং তাদের উদ্দেশ্যও সৎ। তারা হলো সাহাবায়ে কেরাম ও সব যুগে তাঁদের অনুসারীরা।
এই আয়াতের ব্যাখ্যায় আল্লামা ইবনে কাসির (রহ.) লিখেছেন, এই আয়াতে আল্লাহ তাআলা সেসব ইমানদারের অবস্থা বর্ণনা করেছেন, যারা স্বভাবজাত ধর্মের ওপর প্রতিষ্ঠিত। তারা এ কথা বিশ্বাস করে যে আল্লাহ ছাড়া অন্য কোনো উপাস্য নেই। আর আয়াতে যে সাক্ষীর কথা বলা হয়েছে, তা হলো ইসলামী শরিয়ত, যা আদম (আ.) থেকে শুরু হয়ে মুহাম্মদ (সা.) পর্যন্ত এসে শেষ হয়েছে। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, এই আয়াতে সাক্ষী বলতে জিব্রাইল (আ.)-কে বোঝানো হয়েছে। হজরত আলী (রা.) থেকে বর্ণিত, এ আয়াতে সাক্ষী বলতে মহানবী (সা.)-কে বোঝানো হয়েছে। (ইবনে কাসির)
মূলকথা হলো, ইমানদাররা সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পাশাপাশি তারা মহানবী (সা.)-এর নিয়ে আসা শরিয়তের অনুসরণ করে। আর যারা তাওরাতের প্রকৃত অনুসারী তারাও তাওরাতের মাধ্যমে কোরআনের ওপর ইমান আনার নির্দেশনা পেয়েছে। ইসলাম ও কোরআন আসার পর আগের সব ধর্মের কার্যকারিতা স্থগিত করা হয়েছে। তাই মহানবী (সা.)-এর আগমনের পর ইসলাম গ্রহণ ছাড়া কেউ পরকালে মুক্তি পাবে না।
ধর্মপ্রবণতা, ধর্মীয় অনুরাগ মানুষের জন্মগত বিষয়। সৃষ্টির আদিলগ্নে আল্লাহর সঙ্গে কৃত ইবাদতের অঙ্গীকার মানুষের মনে আল্লাহ পরিচিতির বীজ রোপণ করে দিয়েছে। এটি ব্যক্তির ভেতর ক্রমান্বয়ে লালিত হয়। এ বীজেরই ফুল-ফসল হলো, জগতের প্রত্যেক মানুষের মনেই ঐশী প্রেম ও মহত্ত্বের অস্তিত্ব বিদ্যমান। তবে হ্যাঁ, এর বিকাশ ও প্রকাশ একেক ধর্মে একেক রকম। কিন্তু গুটিকয়েক হতভাগ্য মানুষের কথা ভিন্ন, যাদের প্রকৃতি বিকৃত হয়ে গেছে; যাদের জ্ঞান ও রুচিবোধ বিনষ্ট হয়ে গেছে। তারা ছাড়া গোটা দুনিয়ার শত শত কোটি মানুষ আল্লাহর ধ্যান, কল্পনা ও মহিমান্বিত অস্তিত্বে বিশ্বাস রাখে। অবশ্য কেউ যদি জৈবিক কামনা-বাসনায় মোহিত হয়ে অথবা কোনো ভ্রষ্ট সমাজ-পরিবেশের কবলে পড়ে সেই অনুভূতির কথা ভুলে যায়, সেটি আলাদা কথা। মহানবী (সা.) ইরশাদ করেছেন, ‘প্রতিটি সন্তান স্বভাবধর্ম অর্থাৎ ইসলামের ওপরই জন্মগ্রহণ করে। পরে তার মা-বাবা তাকে ইহুদি, খ্রিস্টান বা মূর্তিপূজারি বানায়।’ (মুসলিম শরিফ)
হাদিসে কুদসিতে এসেছে : আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘আমি আমার বান্দাদের হানিফ তথা একজন স্রষ্টায় বিশ্বাসীরূপে সৃষ্টি করেছি। তারপর শয়তান তাদের পেছনে লেগে গেছে এবং তাদের সেই সঠিক পথ থেকে দূরে সরিয়ে নিয়েছে।’
গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ।-কালের কন্ঠ
২১জুন২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এআর/এমএম