মঙ্গলবার, ২১ জুন, ২০১৬, ০৪:৩২:৪১

পবিত্র মাহে রমজানের উপহার

পবিত্র মাহে রমজানের উপহার

ইসলাম ডেস্ক : আবারো ঘুরে এসেছে বছরের সেরা মাস রমজান। মহান আল্লাহর কাছে অশেষ কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি যে তিনি আমাদেরকে আরও একবার পবিত্র রমজান নামক তাঁর মহান রহমত, বরকত ও ক্ষমা তথা মাগফিরাতের এক অসীম মহাসাগরের তীরে উপস্থিত হওয়ার সৌভাগ্য দান করেছেন।

পবিত্র রমজানের প্রেমময় এই মহাসাগরে ভ্রমণ এবং এই মহাসাগরের মনি-মুক্তা ও অন্য সব দামী সম্পদ আহরণের জন্য যোগ্যতা অর্জন জরুরি। ইহলোক ও পরলোক মিলে যে অসীম জীবন- রমজানেই তার পাথেয় সংগ্রহ করে নেয়ার এমন মহাসুযোগকে যাতে যথাযথভাবে কাজে লাগানো যায় সে জন্য জরুরি জ্ঞান ও সচেতনতা অর্জনে মহান আল্লাহর কাছেই তৌফিক কামনা করছি।

রমজান ও চরম সৌভাগ্য সংক্রান্ত ইসলামী নানা বর্ণনা আর সেসবের ব্যাখ্যা থেকে আমরা যেন প্রকৃত শিক্ষা নিয়ে আত্ম-সংশোধন, আত্ম-গঠন, ও আত্ম-উন্নয়নের মাধ্যমে মহান আল্লাহর প্রিয়পাত্রে পরিণত হতে পারি সেটাই যেন হয় রমজানে আমাদের এ আলোচনাসহ অন্য সব তৎপরতার পরিণতি- হে পরম করুণাময়, এটাই আমাদের সব সময়ের ও বিশেষ করে এ সময়ের আকুল মিনতি।

পবিত্র রমজান মহান আল্লাহর প্রেমে বিভোর হওয়ার প্রশিক্ষণের মাস। প্রকৃত খোদা-প্রেমিক তার অন্তর থেকে দ্বীন-দুনিয়ার সব আশা ছেড়ে দিয়ে কেবলই আল্লাহর দিদার বা সাক্ষাতের জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকেন। তাই প্রকৃত খোদা-প্রেমিকরা বেহেশতের আশায় বা দোযখের ভয়ে ইবাদত করেন না। রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্যই হল এরকম গভীর খোদাপ্রেম অর্জন করা। যে প্রতিটি মুহূর্তে খোদার দিদার বা সাক্ষাত নিয়ে ব্যাকুল থাকে তার মনে কোনো ধরণের পার্থিব আশা ও পরকালীন সুখের লোভ তো দূরের কথা মহান আল্লাহর চিন্তা ছাড়া অন্য কোনো স্বার্থ বা শক্তির চিন্তাও মাথায় আসে না বলে তাদের মনে কোনো ভয়ও থাকে না।

রোজার বাহ্যিক লাভ হল, এর ফলে মানুষ গরীব-দুঃখী ও নিঃস্বদের দুঃখ-ব্যথা ভালোভাবে বুঝতে পারে। দরিদ্র ও ক্ষুধার্ত মানুষের বেদনা যখন মানুষ বুঝতে পারে তখন সে তার প্রতি সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়।

রমজানের রমজ শব্দটির অর্থ হল দাহন। মানব জীবনে কুপ্রবৃত্তির বিনাশ বা দাহন জরুরি। আর এর ফলেই মানব সমাজে সংহতি, প্রেম ও একতা সৃষ্টি হয়। অন্যদিকে কুপ্রবৃত্তিগুলো মানুষকে সমাজ থেকে বিচ্ছিন্ন ও অসহায় করে মানব জীবনকে অন্ধকারের অতল তলে তলিয়ে দেয় এবং মানব জীবনের মহৎ উদ্দেশ্য সাধনকে অসম্ভব করে তুলে। কামপ্রবৃত্তির অসংযত চর্চা মানুষকে পশুত্বের স্তরে নামিয়ে দেয়। ক্রোধ মানুষকে করে জ্ঞানশূন্য। লোভ, মোহ, মদ ও মাৎসর্য সামাজিক জীবনে বিশৃঙ্খলা বয়ে আনে। এসবের চর্চা মানুষের আত্মাকে করে কলুষিত ও আত্মিক উন্নতিকে করে ব্যাহত। সোনা যেমন আগুনে পুড়ে খাঁটি হয় তেমনি রোজাও কুপ্রবৃত্তিগুলোকে পুড়িয়ে মানুষকে করে খাঁটি মানুষ। ফলে সে হতে পারে আল্লাহর প্রতিনিধি এবং মহান আল্লাহর সার্বভৌমত্ব প্রতিষ্ঠার যোগ্য বান্দা। আর আত্মিক উন্নতির মাধ্যমে সে পেতে পারে মহান আল্লাহর সাক্ষাত বা নৈকট্য।

রোজা বা সওম-এর অর্থ হল কোনো কিছু থেকে বিরত থাকা বা সংযম সাধনা। কুরআনের সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে সিয়াম (সওমের বহুবচন) সম্পর্কে বলা হয়েছে: 'হে ঈমানদারগণ! তোমাদের উপর রোজা ফরয করা হয়েছে, যেরূপ ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তী লোকদের উপর, যেন তোমরা খোদাভীতি বা তাকওয়া অর্জন করতে পার।' (২:১৮৩)

পরের দুই আয়াতে এসেছে: 'রোজা কয়েকটি নির্দিষ্ট দিনের জন্য। অতঃপর তোমাদের মধ্যে যে, অসুস্থ থাকবে অথবা সফরে থাকবে, তার পক্ষে অন্য সময়ে সে রোজা পূরণ করে নিতে হবে। আর এটি যাদের জন্য অত্যন্ত কষ্ট দায়ক হয়, তারা এর পরিবর্তে একজন মিসকিনকে খাদ্যদান করবে। যে ব্যক্তি খুশি-মনে সৎকর্ম করে, তা তার জন্য বেশি কল্যাণকর হয়। আর যদি রোজা রাখ, তবে তা-ই তোমাদের জন্যে বিশেষ কল্যাণকর, যদি তোমরা বুঝতে পার। রমযান মাসই হল সে মাস, যাতে নাযিল করা হয়েছে কোরআন, যা মানুষের জন্য হেদায়েত এবং সত্যপথ যাত্রীদের জন্য সুস্পষ্ট পথ নির্দেশ আর ন্যায় ও অন্যায়ের মাঝে পার্থক্য বিধানকারী। কাজেই তোমাদের মধ্যে যে লোক এ মাসটি পাবে, সে এ মাসের রোজা রাখবে। আর যে লোক অসুস্থ কিংবা মুসাফির অবস্থায় থাকবে সে অন্য দিনে গণনা পূরণ করবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান; তোমাদের জন্য জটিলতা কামনা করেন না যাতে তোমরা গণনা পূরণ কর এবং তোমাদের হেদায়েত দান করার দরুন আল্লাহ তা’আলার মহত্ত্ব বর্ণনা কর, যাতে তোমরা কৃতজ্ঞতা স্বীকার কর।'

সুরা বাকারার ১৮৭ নম্বর আয়াতে মহান আল্লাহ রোজা প্রসঙ্গে আরও বলেছেন: 'রোজার রাতে তোমাদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস করা তোমাদের জন্য হালাল করা হয়েছে। তারা তোমাদের পরিচ্ছদ এবং তোমরা তাদের পরিচ্ছদ। আল্লাহ জানেন যে, তোমরা আত্নপ্রতারণা করছিলে, সুতরাং তিনি তোমাদেরকে ক্ষমা করেছেন এবং তোমাদের অব্যাহতি দিয়েছেন। অতঃপর তোমরা নিজেদের স্ত্রীদের সাথে সহবাস কর এবং যা কিছু তোমাদের জন্য আল্লাহ দান করেছেন, তা আহরণ কর। আর পানাহার কর যতক্ষণ না কাল রেখা থেকে ভোরের শুভ্র রেখা পরিষ্কার দেখা যায়। অতঃপর রোজা পূর্ণ কর রাত পর্যন্ত। আর যতক্ষণ তোমরা এতেকাফ অবস্থায় মসজিদে অবস্থান কর, ততক্ষণ পর্যন্ত স্ত্রীদের সাথে মিশো না। এই হলো আল্লাহর বেঁধে দেয়া সীমানা। অতএব, এর কাছেও যেও না। এমনিভাবে বর্ণনা করেন আল্লাহ নিজের নিদর্শনগুলো বা আয়াত মানুষের জন্য, যাতে তারা বাঁচতে পারে।'

রমজানের পনের তম রোজার দোয়া ও তার অর্থ :

اَللّـهُمَّ اجْعَلْ صِیامی فیهِ صِیامَ الصّائِمینَ، وَقِیامی فیهِ قیامَ الْقائِمینَ، وَنَبِّهْنی فیهِ عَنْ نَوْمَةِ الْغافِلینَ، وَهَبْ لى جُرْمی فیهِ یا اِلـهَ الْعالَمینَ، وَاعْفُ عَنّی یا عافِیاً عَنْ الُْمجْرِمینَ .

হে আল্লাহ! আমার আজকের রোজাকে প্রকৃত রোজাদারদের রোজা হিসেবে গ্রহণ কর। আমার নামাজকে কবুল কর প্রকৃত নামাজীদের নামাজ হিসেবে। আমাকে জাগিয়ে তোলো গাফিলতির ঘুম থেকে। হে জগত সমূহের প্রতিপালক! এদিনে আমার সব গুনাহ মাফ করে দাও। ক্ষমা করে দাও আমার যাবতীয় অপরাধ। হে অপরাধীদের অপরাধ ক্ষমাকারী।
২১ জুন, ২০১৬ এমটিনিউজ২৪/জহির/মো:জই

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে