সোমবার, ২৭ জুন, ২০১৬, ০৫:১৮:২৮

সব নবী একত্ববাদের বাণী প্রচার করেছেন

সব নবী একত্ববাদের বাণী প্রচার করেছেন

ইসলাম ডেস্ক :২৫. নিশ্চয়ই আমি নুহকে তার সম্প্রদায়ের কাছে পাঠিয়েছিলাম। সে বলেছিল, আমি তোমাদের জন্য প্রকাশ্য সতর্ককারী।

২৬. যাতে তোমরা আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো উপাসনা না করো। আমি তোমাদের জন্য এক যন্ত্রণাদায়ক দিনের শাস্তির আশঙ্কা করি। (সুরা : হুদ, আয়াত : ২৬)

তাফসির : আগের আয়াতগুলোতে বিশ্বাসী ও অবিশ্বাসীদের পরিণতি সম্পর্কে বর্ণনা করা হয়েছিল। এই আয়াত থেকে বিভিন্ন নবীর ইতিহাস তুলে ধরা হচ্ছে। শুরুতেই হজরত নুহ (আ.) ও তাঁর জাতির প্রসঙ্গ উল্লেখ করা হয়েছে। কেননা তাঁর ঘটনা ব্যাপকভাবে শিক্ষণীয়। হজরত নুহ (আ.) তাওহিদ বা একত্ববাদের দাওয়াত নিয়ে তাঁর উম্মতের কাছে এসেছিলেন। তিনি মূর্তি পূজার বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছিলেন। কিন্তু যুগের পর যুগ অতিক্রান্ত হলেও খুব অল্পসংখ্যক মানুষ তাঁর ডাকে সাড়া দিয়েছিল। একপর্যায়ে তিনি সত্যবিমুখ ওই সব মানুষের শাস্তি কামনা করে আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করেন। তাঁর প্রার্থনায় দুনিয়াজুড়ে মহাপ্লাবন শুরু হয়ে যায়। ওই প্লাবনে হজরত নুহ (আ.)-এর অনুসারী মুমিনরা ছাড়া বাদবাকি সব মানুষ ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়।

তাওহিদের বিশ্বাস সৃষ্টি ও স্রষ্টার মধ্যে সুদৃঢ় সম্পর্ক তৈরি করে। ফলে বান্দা সব বৈষয়িক প্রাপ্তির কথা ভুলে যায়। শুধু প্রভুর সন্তুষ্টিতে নিজের সর্বস্ব উজাড় করে দেওয়ার মধ্যেই জীবনের সার্থকতা খুঁজে পায়। তাওহিদের বাণী প্রচারের জন্যই মহান আল্লাহ যুগে যুগে অসংখ্য নবী ও রাসুল প্রেরণ করেছেন। পবিত্র কোরআনের বহু আয়াতে এ বিষয়ে বর্ণনা করা হয়েছে। এক আয়াতে এসেছে : ‘তোমার আগে আমি যত রাসুল প্রেরণ করেছি, তাদের সবার ওপরই আমার এই মর্মে নির্দেশ ছিল যে আমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই। সুতরাং তোমরা আমারই ইবাদত করো।’ (সুরা : আম্বিয়া, আয়াত : ২৫)

অন্য আয়াতে ইরশাদ হয়েছে, “বলে দাও, ‘হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের সবার কাছে আল্লাহর প্রেরিত রাসুল। আসমান ও জমিনে একমাত্র তাঁরই আধিপত্য। তিনি ছাড়া আর কোনো ইলাহ (উপাস্য) নেই। তিনি জীবন দান করেন ও মৃত্যু ঘটান।’” (সুরা : আরাফ, আয়াত : ১৫৮)

তাওহিদের বিশ্বাসই ইসলামের মূল বুনিয়াদ। আত্মার পূর্ণতা ও পরিতৃপ্তি এ বিশ্বাসের পথ ধরেই অর্জিত হতে পারে। হজরত মুহাম্মদ (সা.) যখন তাওহিদের দাওয়াত নিয়ে হাজির হলেন তখন ইহুদি, নাসারা, মাজুসি ও মুশরিক—এ চারটি ধর্মীয় সম্প্রদায় ছিল। ইহুদিদের আকিদা ছিল উজায়ের আল্লাহর পুত্র এবং তারা তাঁর পূজা করত। নাসারাদের বিশ্বাস ছিল, ঈসা (আ.) আল্লাহর পুত্র। ইহুদি ও খ্রিস্টানরা আদিতে একত্ববাদে বিশ্বাসী ছিল; কিন্তু পরে তাদের ধর্মবিশ্বাস ও কর্মকাণ্ডের মধ্যে অনেক বিভ্রান্তি ও বিচ্যুতি ঢুকে পড়েছিল। মাজুসিরা চন্দ্র ও সূর্যের পূজা করত। আর মুশরিকরা বিভিন্ন দেব-দেবীর পূজা-অর্চনার মাধ্যমে তাদের বিশ্বাসের চর্চা করত।

হজরত ঈসা (আ.)-এর পর দীর্ঘ সাড়ে পাঁচ শ বছর ধরাপৃষ্ঠে তাওহিদের মশালবাহী কেউ ছিল না। তাই মুহাম্মদ (সা.) তাওহিদের দাওয়াত পেশ করলে স্বাভাবিকভাবে তাদের পক্ষে সেটা গ্রহণ করা সম্ভব হয়নি। তারা রাসুল (সা.)-এর তাওহিদের দাওয়াত বন্ধ করার জন্য সব ধরনের চেষ্টা করেছে। তারা ভয়ভীতি দেখিয়ে তাঁকে নিবৃত্ত করার চেষ্টা করেছে, ঐশ্বর্য-নেতৃত্ব ও রমণীর মোহে মোহাবিষ্ট করে তাঁকে কর্তব্য থেকে বিরত রাখার চেষ্টা করেছে। এসবে ব্যর্থ হয়ে শেষ পর্যন্ত তারা তাঁকে হত্যা করে তাওহিদের মিশন চিরতরে বন্ধ করার ষড়যন্ত্র করেছে। ফলে তিনি মক্কা থেকে হিজরত করে মদিনায় চলে যান। সেখানে গিয়ে তাওহিদের আওয়াজ সারা পৃথিবীতে ছড়িয়ে দেন।

গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ।-কালের কন্ঠ


২৭জুন২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/এআর

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে