মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬, ০৬:১৮:০৬

অর্থসম্পদ ও সামাজিক প্রভাব মর্যাদার এক মাপকাঠি নয়

অর্থসম্পদ ও সামাজিক প্রভাব মর্যাদার এক মাপকাঠি নয়

ইসলাম ডেস্ক: ২৭. তার [নুহ (আ.)] সম্প্রদায়ের প্রধান ব্যক্তিরা—যারা ছিল অবিশ্বাসী, তারা বলল, ‘আমরা তোমাকে তো আমাদের মতোই একজন মানুষ দেখছি। আমরা দেখছি আমাদের মধ্যে যারা বাহ্য দৃষ্টিতে অধম, তারাই তোমাকে অনুসরণ করছে এবং আমরা আমাদের ওপর তোমাদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব দেখছি না; বরং আমরা তোমাদের মিথ্যাবাদী মনে করি।’ (সুরা : হুদ, আয়াত : ২৭)

তাফসির : আগের আয়াতে বলা হয়েছিল, হজরত নুহ (আ.) তাঁর জাতিকে তাওহিদ বা একত্ববাদের দাওয়াত দিয়েছেন। এই দাওয়াতের খুবই মন্দ প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিল তাঁর জাতি। নুহ (আ.)-কে অপমানিত, অপদস্থ করার জন্য তারা বিভিন্ন কথা বলে। দাওয়াত গ্রহণ না করার বিষয়ে তারা চারটি আপত্তি তোলে। তারা বলে—এক. তুমি তো আমাদের মতোই মানুষ। নবী হওয়ার কী যোগ্যতা তোমার আছে? তোমার কাছে কিভাবে ওহি আসে, তা আমাদের বোধগম্য নয়।

দুই. আমরা দেখছি আমাদের মধ্যে যারা অধম, তারাই তোমাকে অনুসরণ করছে। জোলা, তাঁতি ও ইতর শ্রেণির লোকেরাই তোমার অনুসারী। এরা না বুঝেই তোমাকে অনুসরণ করছে। নেতৃস্থানীয় কেউ তোমাকে মানছে না। তিন. আমাদের ওপর তোমাদের কোনো শ্রেষ্ঠত্ব নেই। সামাজিকভাবে আমরাই প্রভাবশালী, ক্ষমতাবান। চার. আমরা তোমাদের মিথ্যাবাদী মনে করি।

এই আয়াতের পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, পার্থিব জগতের প্রতি যার মোহ যত কম, সত্য দ্বীনের প্রতি তার আকর্ষণ তত বেশি।

পৃথিবীতে যত নবী-রাসুলের আগমন ঘটেছে, সবাই তত্কালীন সমাজের প্রতাপশালী ব্যক্তিদের বিরোধিতার সম্মুখীন হয়েছেন। সমাজের প্রতাপশালী ব্যক্তিরা সব সময় নবী-রাসুলদের নিজেদের একচ্ছত্র ক্ষমতার ব্যাপারে হুমকি মনে করেছে। মানুষ নবী-রাসুলদের আনুগত্য করলে সমাজে তাদের কর্তৃত্ব খর্ব হবে—এই ভেবে তাদের দুশ্চিন্তার অন্ত ছিল না। এ প্রসঙ্গে এখানে বলা হয়েছে, হজরত নুহ (আ.) ও তাঁর অনুসারীদের তুচ্ছ-তাচ্ছিল্য করে তত্কালীন সমাজের নেতারা সাধারণ মানুষকে আল্লাহর বিধান গ্রহণ করা থেকে বিরত রাখতে চেয়েছিল। অবিশ্বাসীরা হজরত নুহ (আ.)-এর অনুসারীদের হেয় করার জন্য বলত, ‘ওরা মূর্খ ও স্থূলবুদ্ধিসম্পন্ন মানুষ।’ তারা প্রচার করেছিল, নুহ (আ.) তো আমাদের মতোই একজন মানুষ। আমাদের ওপর তাঁর কি শ্রেষ্ঠত্ব্ব রয়েছে যে তাঁর আনুগত্য করতে হবে?

অথচ সব নবী-রাসুলই স্পষ্ট করে বলেছেন, আমরাও অন্যদের মতো মানুষ, ফেরেশতা নই। আমাদের সঙ্গে অন্যান্য মানুষের পার্থক্য হচ্ছে, আমাদের ওপর ওহি বা আল্লাহর প্রত্যাদেশ বাণী আসে, আর আমরা এই বাণী হুবহু মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব পালন করছি।

প্রকৃতপক্ষে অর্থসম্পদ ও সামাজিক প্রভাব মর্যাদার মাপকাঠি নয়। কেননা চূড়ান্ত বিচারে দেখা গেছে, হজরত নুহ (আ.)-এর ওপর যারা ইমান এনেছে তারাই দুনিয়ায় টিকে ছিল। তাঁর বিরোধিতাকারীরা মহাকালের গর্ভে হারিয়ে গেছে।

আল্লাহর কাছে শ্বেতাঙ্গ-কৃষ্ণাঙ্গ, ধনী-দরিদ্র, আরব-অনারব, প্রাচ্য-পাশ্চাত্যের ভিত্তিতে কারো মূল্যায়ন হয় না। মূল্যায়নের ভিত্তি হলো তাকওয়া। আল্লাহ তাআলা বলেন, ‘নিশ্চয়ই আল্লাহর কাছে সে-ই সর্বাধিক সম্মানিত, যে সবচেয়ে বেশি তাকওয়া অর্জনকারী।’ (সুরা : হুজরাত, আয়াত : ১৩)

তাকওয়া অর্থ বাঁচা, আত্মরক্ষা করা, নিষ্কৃতি লাভ করা, ভয় করা। অর্থাৎ আল্লাহর ভয় ও তাঁর সন্তুষ্টি লাভের আশায় অপরাধ, অন্যায় ও তাঁর অপছন্দনীয় কথা, কাজ থেকে নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার নাম তাকওয়া।

গ্রন্থনা : মাওলানা কাসেম শরীফ।-কালের কন্ঠ
২৮জুন২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে