মঙ্গলবার, ২৮ জুন, ২০১৬, ০২:১০:৪৭

কোন নিদর্শন দেখে বুঝবেন যে আজ কদরের সেই মহিমান্বিত রজনী

কোন নিদর্শন দেখে বুঝবেন যে আজ কদরের সেই মহিমান্বিত রজনী

মুনিরুল ইসলাম মাহদী : পবত্রি রমজানের অন্যতম শ্রেষ্ঠ রাত হল লাইলাতুল কদর বা মহিমান্বিত রজনী। এই রাতকে কেন্দ্র করে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে একটি স্বতন্ত্র সূরা নাযিল হয়েছে। لَيْلَةُ الْقَدْرِ خَيْرٌ مِّنْ أَلْفِ شَهْرٍ অর্থাৎ লাইলাতুল কদর হল এক হাজার মাস অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ। আর এই রাত রমজানের শেষ দশক তথা নাজাতের যে কোন এক বিজোর রাতে হয়ে থাকে। এখন প্রশ্ন হল এই মহিমান্বিত রজনী কোনটি তা আপনি বুঝবেন কিভাবে?

১. রাত হবে সাদা-উজ্জ্বল, নাতিশীতোষ্ণ
ক. হযরত জাবের (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
«إِنِّي كُنْتُ أُريتُ لَيْلَةَ القَدْرِ ثُم نَسيتُهَا وَهِيَ في العَشْرِ الأَوَاخِرِ، وَهِيَ طَلْقَةٌ بَلْجَةٌ لا حَارَّةٌ ولا بَارِدَةٌ، كَأَنَّ فيهَا قَمَراً يَفْضَحُ كَوَاكِبَهَا لا يَخْرُجُ شَيْطَانُها حَتى يَخْرُجَ فَجْرُهَا».

অর্থ: আমাকে লাইলাতুল কদর দেখানো হয়েছিল, অতঃপর তা ভুলিয়ে দেয়া হয়েছে, আর তা হচ্ছে শেষ দশকে। সে রাত হবে সাদা-উজ্জ্বল, নাতিশীতোষ্ণ হবে- না-গরম, না-ঠাণ্ডা, যেন আলোকিত চাঁদ নক্ষত্রগুলোকে আড়াল করে আছে, ফজর উদিত হওয়ার আগ পর্যন্ত সে রাতের শয়তান বের হতে পারে না। (ইব্‌ন খুযাইমাহ: ২১৯০; ইব্‌ন হিব্বান: ৩৬৮৮; ফাওয়েদ আবু মুহাম্মাদ আল ফাকী।)

খ. হযরত উবাদা ইব্‌ন সামেত (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
«إِنَّ أَمَارَةَ لَيْلَةِ القَدْرِ أَنَّها صَافِيَةٌ بَلْجَةٌ - أَيْ مُسْفِرَةٌ مُشْرِقَةٌ- كَأَنَّ فِيهَا قَمَراً سَاطِعاً، سَاكِنَةٌ سَاجِيَةٌ - أَيْ فيهَا سُكُونٌ-    لا بَرْدَ فيهَا وَلا حَرَّ، وَلا يَحِلُّ لِكَوْكَبٍ أَنْ يُرْمَى به فيهَا حَتى يُصْبِحَ، وإِنَّ أَمَارَتَها أَنَّ الشَّمْسَ صَبيحَتَهَا تَخْرُجُ مُسْتَويَةً لَيسَ لها شُعَاعٌ مِثْلَ القَمَرِ لَيْلَةَ الْبَدْرِ، لا يَحِلُّ لِلشَّيْطَانِ أَنْ يَخْرُجَ مَعَهَا يَوْمَئِذٍ» رواه أحمد.

অর্থ : নিশ্চয় লাইলাতুল কবদরের আলামত, তা হবে সাদা ও উজ্জ্বল, যেন তাতে আলোকিত চাঁদ রয়েছে, সে রাত হবে স্থির, তাতে  ঠাণ্ডা বা গরম থাকবে না, তাতে সকাল পর্যন্ত কোন তারকা দ্বারা ঢিল ছোঁড়া হবে না। এ রজনীর আরো আলামত হলোঃ সেদিন সকালে সূর্য উদিত হবে সমানভাবে, চৌদ্দ তারিখের চাঁদের ন্যায়, তার কোন কিরণ থাকবে না, সেদিন শয়তানের পক্ষে এর সাথে বের হওয়া সম্ভব নয়। (আহমদ: ৫/৩২৪; তাবরানি ফি মুসনাদিশ শামিয়্যিন: ১১১৯; দিয়া ফিল মুখতারাহ: ৩৪২; হায়সামি ফিয যাওয়ায়েদ: ৩/১৭৫)

গ. হযরত ইব্‌ন আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন:
«لَيْلَةٌ طَلْقَةٌ لا حَارَّةٌ ولا بَارِدَةٌ تُصْبِحَ الشَّمْسُ يَوْمَهَا حَمْرَاءُ ضَعِيفَة»

অর্থ : লাইলাতুল ক্বদর সাদা-উজ্জ্বল, না গরম না ঠাণ্ডা, সে দিন ভোরে সূর্য উদিত হবে দুর্বল রক্তিম আভা নিয়ে। (ইব্‌ন খুযাইমাহ; ফাতহুল বারী)

২. সকালে শুভ্রতা নিয়ে সূর্য উদিত হবে:
تَطْلُعُ الشَّمْسُ غَدَاةَ إِذْ صَافِيَةً لَيْسِ لها شُعَاعٌ، قَالَ ابنُ مَسْعُودٍ: فَنَظَرْتُ إِلَيها فَوَجَدْتُها كَما قَالَ رَسُولُ الله ﷺ».
সেদিন সকালে শুভ্রতা নিয়ে সূর্য উদিত হবে, তার মধ্যে কোন কিরণ থাকবে না।

হযরত ইব্‌ন মাসউদ বলেন: আমি সূর্যের দিকে তাকিয়ে সেরূপ দেখেছি, যেরূপ রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন (মুসলিম, তিরমিযি, আহমাদ, সুনানে কোবরা, ইবনে খুজাইমা, মুজামুল আওসাত, আবু দাউদ, মুসান্নাফ)

 صُبْحَةَ لَيْلَةِ الْقَدْرِ تَطْلُعُ الشَّمْسُ لَا شُعَاعَ لَهَا كَأَنَّهَا طَسْتٌ حَتَّى تَرْتَفِعَ  
কবদরের রজনীর সকাল হবে এমন, সেদিন সূর্য উদিত হবে গামলার ন্যায়। কিন্তু তার মধ্যে কোন কিরণ থাকবে না। (মুসলিম, তিরমিযি, আহমাদ, সুনানে কোবরা, ইবনে খুজাইমা, মুজামুল আওসাত, আবু দাউদ, মুসান্নাফ)

লেখকঃ ইসলামী ব্যাংকার ও শরীয়াহ বিশেষজ্ঞ
২৮ জুন, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে