শুক্রবার, ০১ জুলাই, ২০১৬, ১০:৩১:৫০

অবর্ণনীয় সমস্যার মধ্যেও রমজানে রোজা রাখছেন জার্মান মুসলমানরা

অবর্ণনীয় সমস্যার মধ্যেও রমজানে রোজা রাখছেন জার্মান মুসলমানরা

ইসলাম ডেস্ক : জার্মানিতে বসবাসরত মুসলমানদের বড় একটা অংশও পবিত্র রমজানে রোজা রাখেন। ওপরের ছবিতে ঘরোয়া পরিবেশে একটি ইন্দোনেশীয় পরিবারের ইফতার করার দৃশ্য। উপযুক্ত পরিবেশের অভাব সহ নানা কারণে জার্মানিতে মুসলিমদের জন্য রোজা রাখা বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।

এবার দেখা যাক রমজান মাসে কি ধরণের সমস্যায় পড়েন মুসলমানরা:
জার্মানি সহ পশ্চিমা দেশগুলিতে সংখ্যালঘু সম্প্রদায় হিসেবে মুসলিমদের জন্য রমজান মাসের পরিবেশ একেবারেই আলাদা৷ একমাত্র মসজিদে গেলেই মানুষ পরস্পরের সঙ্গে একাত্ম হয়ে উঠতে পারেন, রোজার শেষে একসঙ্গে ইফতারি করতে পারেন৷ জার্মানিতে মুসলিমদের সংখ্যা প্রায় ৪০ লক্ষ৷ তাঁদের মধ্যে অনেকেই রোজা রাখেন৷ কিন্তু কাজটা মোটেই সহজ নয় – যেমনটা বললেন আজিমা মুস্তফা ও হায়দার ওমর৷ তাঁরা প্রায় ১৩ বছর আগে সিরিয়া থেকে এসেছিলেন৷ এখন পাকাপাকিভাবে জার্মানিতে বসবাস করেন।

আজিমা বললেন, ‘‘সিরিয়ায় প্রতি বছর আমি রোজা রাখতাম৷ কিন্তু গত বছর প্রথম বারের মতো আমি একটানা রোজা রাখতে পারি নি৷ কয়েক দিন রোজা রাখার পর সেটা আর সম্ভব হয় নি৷ সূর্যাস্ত হয়েছে অনেক দেরিতে৷ সেইসঙ্গে গরমও কম ছিল না৷ আমার আবার হাঁপানির সমস্যা রয়েছে৷ ফলে রমজান মাসের পুরোটা সময় জুড়ে রোজা রাখতে পারি নি৷''

হায়দারের অভিজ্ঞতাও খুব একটা আলাদা নয়৷ তিনি বললেন, ‘‘সিরিয়ায় থাকলে আমি অবশ্যই রোজা রাখি৷ কিন্তু এখানে রাখতে পারি না৷ খুব ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠি৷ আটটা থেকে নটার মধ্যে কাজে যেতে হয়৷ বেশ কঠিন জীবন৷ কনস্ট্রাকশন সাইটে কাজ করি, বেশ পরিশ্রম করতে হয়৷ থেকে থেকেই তেষ্টা পায়৷ তখন পানি খেতে হয়৷ রোজা রাখতে হলে আমাকে সারাদিন বাড়িতে থাকতে হতো৷ কিন্তু সেটা তো আর সম্ভব নয়৷''

জার্মানির দৈনন্দিন জীবনযাত্রায় এক মাসের জন্য কোনো ব্যতিক্রম ঘটানো মোটেই সহজ নয়৷ হায়দার যে সংস্থায় কাজ করেন, তার মালিক নির্মাণ কাজ চলার সময় এক মাসের জন্য কোনো কর্মীকে ছাড়তে পারেন না৷ হায়দারের স্ত্রী আজিমা কোলোন শহরে ছোট্ট একটি কাপড়ের দোকান চালান৷ তাঁকেই সব কাজ করতে হয়, কোনো কর্মী রাখার সামর্থ্য তাঁর নেই৷ ফলে সারাদিন ধরে তাঁকে পরিশ্রম করতে হয়৷ এই অবস্থায় খাওয়া দাওয়া বন্ধ রাখা কঠিন৷ তাছাড়া এমন বিচ্ছিন্নভাবে রোজা রাখতে হলে মনের জোরও কমে যায়৷ সিরিয়ায় থাকতে সবাই মিলে যখন রোজা রাখতেন, তখন আজিমার পক্ষে সারাদিন খাওয়া-দাওয়া না করে থাকতে অসুবিধা হতো না৷

রমজান মাসে মসজিদই হয়ে ওঠে জার্মানিতে বসবাসরত মুসলিমদের মিলনক্ষেত্র৷ ক্রেফেল্ড শহরের মসজিদের ইমাম আবদেল ওয়াহাব আলুই মনে করেন, এবছরেও তার কোনো ব্যতিক্রম ঘটবে না৷ তখন মসজিদে এমন সব মানুষকে দেখা যাবে, যাদের সারা বছর দেখা যায় না৷

তাঁর ভাষায়, ‘‘রমজান মাসে মসজিদে মানুষের ঢল নামে, যেমনটা বছরের বাকি সময় দেখা যায় না৷ নারী-পুরুষ, ছোট-বড় – সবাই মসজিদে আসে৷ রোজা রাখার সঙ্গে সঙ্গে অন্যান্য ধর্মীয় দায়িত্বের কথাও মনে করিয়ে দেওয়া হয়, যা সারা বছর ধরেই পালন করা উচিত৷

রমজান আসলে একটা স্কুলের মতো, যেখানে শেখানো হয় – কীভাবে সারা বছর সাচ্চা মুসলিম থাকা যায়৷ এর মধ্যে রয়েছে অন্যদের গালি না দেওয়া, মিথ্যা কথা না বলা, চুরি না করা – এমন সব শিক্ষা৷ বাকি মানুষের ধর্ম যাই হোক না কেন, প্রত্যেক মুসলিমের সর্বদা এই শিক্ষা মেনে চলা উচিত৷''

হায়দার ও তাঁর স্ত্রী আজিমা শারীরিক কারণে রোজা রাখতে পারেন না৷ কিন্তু মহম্মদ আল ইব্রাহিম অত সহজে দমে যাবার পাত্র নন৷ তিনি রমজান শুরু হওয়ার কয়েক সপ্তাহ আগেই মানসিক প্রস্তুতি শুরু করে দেন৷ ৪২ বছর বয়স্ক এই ডাক্তার প্রায় ২ দশক ধরে কোলোন শহরে বসবাস করছেন৷

প্রতি বছর তিনি রোজা রাখেন৷ তিনি বললেন, ‘‘চারিদিকে আমি মানুষজনকে দেখতে পাই, যারা খাওয়া-দাওয়া করছে৷ কোনো খাবারের দোকানের পাশ দিয়ে যাবার সময়ে খাবারের সুগন্ধ নাকে আসে৷ স্বাভাবিক কারণেই তখন আমার খেতে ইচ্ছে করে৷ রমজানের সময় আরেকটা সমস্যাও হয়৷ বিশেষ করে গ্রীষ্মকালে জার্মানিতে রাস্তাঘাটে নারীদের যে অবস্থায় দেখা যায়, তার ফলে সংযম বজায় রাখা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়ে৷''

মুসলিম হিসেবে রমজানের সময় রোজা না রাখা অনেকেই ভালো চোখে দেখে না৷ জার্মানিতে তুর্কি বংশোদ্ভূত মানুষদের মধ্যে প্রায় ৭৩ শতাংশ রোজা রাখেন বলে এক সমীক্ষায় জানা গেছে৷ তবে রমজান মাসে যাকাত দেওয়ার মতো বাকি কর্তব্যগুলি কতটা পালন করা হয়, সেবিষয়ে কোনো তথ্য জানা নেই৷ তথ্য সূত্র: ডিডাব্লিউ
০১ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪.কম/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে