ইসলাম ডেস্ক: মহান আল্লাহ তায়ালার অপরূপ সৃষ্টি বিভিন্ন প্রজাতির পাখি। আল্লাহ পাক মূলত প্রকৃতির সৌন্দর্য বাড়াতেই নানা জাতের পাখি সৃষ্টি করেছেন। রূপ ছড়িয়ে দিয়েছেন পাখির ডানায় ডানায়। শুধু স্রষ্টার আনুগত্যে নয়, পাখির সৌন্দর্যের কারণেই পাখির প্রতি মানুষের ভালোবাসা জন্মায়। শিশুর কোমল হৃদয়ে পাখির প্রতি ভালোবাসা, বাউলের গানে পাখির সুর, কবিতার পঙ্ক্তিমালাও পাখির উপমা। ভোরের আলো জেগে ওঠার সঙ্গে সঙ্গে যারা কর্মমুখর দিনকে স্বাগত জানায়, সেই প্রকৃতিবান্ধব পাখিদের প্রতি মানুষকে সহানুভূতিশীল করে তোলার জন্য পবিত্র কোরআনের বিভিন্ন স্থানে আল্লাহপাক পাখি প্রসঙ্গ টেনে এনেছেন। হজরত ইব্রাহিম, ইউসুফ, দাউদ, সোলায়মান এবং ঈসা [আ.]-এর কাহিনীতে পাখির বিবরণ রয়েছে। হুদহুদ নামের একটি পাখি ছিল হজরত সোলায়মান [আ.]-এর বিশ্বস্ত গুপ্তচর ও সংবাদবাহক। কোরআনে রয়েছে, সোলায়মান বিহঙ্গদলের সন্ধান নিয়ে বলল, ‘ব্যাপার কী! হুদহুদকে দেখছি না যে। সে অনুপস্থিত নাকি? সে উপযুক্ত কারণ না দর্শালে আমি অবশ্যই তাকে কঠিন শাস্তি দেব অথবা জবেহ করব। অবিলম্বে হুদহুদ এসে পড়ল এবং বলল, আপনি যা অবগত নন আমি তা অবগত হয়েছি এবং ‘সাবা’ থেকে সুনিশ্চিত সংবাদ নিয়ে এসেছি। আমি এক নারীকে দেখলাম ওদের ওপর রাজত্ব করছে। তাকে সবকিছু দেয়া হয়েছে এবং তার রয়েছে এক বিরাট সিংহাসন।’ [সূরা নামল, আয়াত ২০-২৩]।
পাখিদের থেকে শিক্ষাগ্রহণে আল্লাহতায়ালা বলেন, ‘তারা কি লক্ষ্য করে না আকাশের শূন্যগর্ভে নিয়ন্ত্রণাধীন বিহঙ্গের প্রতি? আল্লাহই ওদের স্থির রাখেন। অবশ্যই এতে নিদর্শন আছে মুমিন সম্প্রদায়ের জন্য’ [নাহল ৭৯]। এ প্রসঙ্গেই অন্য একটি সূরায় বলা হয়েছে, ‘তারা কি লক্ষ্য করে না তাদের ঊর্ধ্বদেশে বিহঙ্গকুলের প্রতি যারা পথ বিস্তার ও সঙ্কুচিত করে? দয়াময় আল্লাহই ওদের স্থির রাখেন। তিনি সর্ববিষয়ে সম্যক দ্রষ্টা।’ নবী [সা.] প্রকৃতির নন্দিত সন্তান পাখিদের অত্যন্ত ভালোবাসতেন। আল্লাহর এ অনুপম সুন্দর সৃষ্টির প্রতি ছিল তার গভীর আকর্ষণ এবং অনুকম্পা। শুধু তাই নয়, আল্লাহর প্রত্যেক সৃষ্টির প্রতি ছিল তার অগাধ প্রেম ও ভালোবাসা। একদিন আমাদের প্রিয় নবী [সা.] তাঁর সাহাবাদের নিয়ে বসে ইসলামকে মানবতার দুয়ারে পৌঁছে দেয়ার জন্য পরামর্শ করছিলেন। এমন সময় একজন সাহাবি একটি পাখির কয়েকটি বাচ্চা ধরে নিয়ে উপস্থিত হলেন। আর সেই সাহাবির মাথার ওপর দিয়ে নিরাপদ দূরত্ব বজায় রেখে মা পাখিটি কিচিরমিচির করতে করতে উড়ে আসছিল। নির্মম দৃশ্যটি সৃষ্টিকুলের মহান বন্ধু আল্লাহর নবী [সা.]-এর দৃষ্টিগোচর হতেই তাঁর অন্তর যেন অজানা ব্যথায় ব্যথিত হল। সন্তানহারা মা পাখিটির আহাজারি যেন নবীজীর কোমল হৃদয়ে বিষাক্ত তীরের মতো বিঁধল। নবী [সা.] সাহাবাকে একান্তভাবে কাছে ডেকে নিলেন, আন্তরিকতার সঙ্গে জিজ্ঞেস করে ঘটনাটা মনোযোগের সঙ্গে শুনলেন। তারপর সে সাহাবা দয়ার নবীর কষ্ট পাওয়া চেহারা দেখেই বিষয়টি আঁচ করেন। নবী [সা.] সাহাবাকে পাখিটি রেখে আসার কথা বলতেই সাহাবা দ্রুত হেঁটে স্বস্থানে পাখির বাচ্চাগুলো রেখে আসেন। হজরত আবু হুরাইরা [রা] বলেন, আমি নবী করিম [সা.]-কে বলতে শুনেছি, ‘হতভাগ্য খারাপ প্রকৃতির লোকের দিল থেকে দয়া-করুণা কেড়ে নেয়া হয়।’
পাখির প্রতি নবী [সা.]-এর এ দরদমাখা ভালোবাসা আমাদের কী শিক্ষা দেয়! ইদানীং বিশ্বব্যাপী পাখিপ্রেমীদের কর্মকাণ্ড নিরীহ এ জীবটির প্রতি মানুষের অনুরাগ বৃদ্ধিতে যথেষ্ট ভূমিকা রাখছে। পাখিদের প্রতি জনসাধারণের সচেতনতা বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে এদের বংশবৃদ্ধি এবং সংরক্ষণে সরকারের পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত প্রয়োজন। পাখিদের জন্য অভয়ারণ্য সৃষ্টি করে এদের হত্যা ও উত্ত্যক্তকারীদের যথাযথ শাস্তির বিধান কার্যকর করা এখন সময়ের দাবি। এই শীতের মৌসুমে দেখা যায় পৃথিবীর বিভিন্ন অঞ্চলে থাকার জন্য আসে, কিন্তু তাদের প্রতি প্রতিবেশী মানুষ চালায় নির্মম অত্যাচার আর এ কারণে কোনো পাখি প্রাণ হারায় আর কোনোটি চরম ভয় পেয়ে চলে যায় স্বদেশে যে কারণে প্রকৃতি হারায় তার সৌন্দর্য। যুগান্তর
২৬ সেপ্টেম্বর,২০১৫/এমটিনিউজ২৪/রাসেল/মাহমুদ