ইসলাম ডেস্ক : মুম্বাইয়ের ইসলাম ধর্ম প্রচারক ও ‘পিস টিভি’র কর্ণধার ড. জাকির নায়েকের সঙ্গে ঢাকার গুলশানের হামলাকারীদের কোনো সম্পর্ক আছে কি-না তা তদন্ত করে দেখা হচ্ছে বলে ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আজ নিশ্চিত করে। ভারতে পুরোপুরি নিষিদ্ধ করারও দাবি তুলেছে সরকারের শরিক শিবসেনা।
জাকির নায়েক মক্কায় গেছেন উমরাহ করতে, সেখান থেকেই সোজাসুজি জানিয়ে দিয়েছেন, বাংলাদেশে আমাকে কোটি কোটি লোক চেনে। গুলশানের হামলাকারীরাও যদি আমাকে চেনে, তাতে অবাক হওয়ার কী আছে? ক্ষমতা থাকলে সরকার পিস টিভি বন্ধ করে দেখাক। সরকারকে কার্যত পাল্টা চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়েছেন তিনি।
ঢাকায় জঙ্গি হামলার সঙ্গে জাকির নায়েকের সম্পর্কের যোগসূত্র আসলে একটি ফেসবুক পোস্ট। গুলশানের হামলাকারীদের অন্যতম রোহান ইমতিয়াজের সোশ্যাল মিডিয়া ফুটপ্রিন্টস ট্রেস করতে গিয়ে দেখা গেছে, কিছুকাল আগে তিনি জাকির নায়েকের একটি বিতর্কিত মন্তব্য নিজের ওয়ালে পোস্ট করেছিলেন– যেখানে জাকির নায়েক বলেছিলেন, ‘বিশ্বের সব মুসলিমকেই আমি সন্ত্রাসবাদী হয়ে ওঠার আর্জি জানাই। এ
এ বক্তব্য নিয়ে তখন ভীষণ হইচই পড়েছিল। তবে জাকির নায়েকের বক্তব্য ছিল তিনি মুসলিমদের এর মাধ্যমে অস্ত্র ধরতে বলেননি, অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে বলেছিলেন।
কিন্তু এর সূত্র ধরেই বাংলাদেশে ও ভারতে গোয়েন্দারা এখন খতিয়ে দেখতে চাচ্ছেন, রোহান ইমতিয়াজ বা তার সঙ্গীদের র্যাডিক্যালাইজেশনের পেছনে জাকির নায়েকের ভূমিকা ঠিক কতটা ছিল বা আদৌ ছিল কি-না।
বিশ্বের অনেক দেশের মতো বাংলাদেশেও জাকির নায়েকের পিস টিভি অত্যন্ত জনপ্রিয়– এমনকি বাংলাদেশিদের কথা মাথায় রেখে বাংলায় ভাষান্তরিত করেও অনুষ্ঠানগুলো সম্প্রচার করা হয়।
এ কারণে জাকির নায়েক কীভাবে বাংলাদেশের যুবকদের প্রভাবিত করছেন, তার বক্তৃতায় আদৌ সহিংসতার উসকানি আছে কি-না তা এখন পর্যালোচনা করা হচ্ছে।
ভারতের স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজুকেও এদিন জাকির নায়েককে নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়তে হয়েছিল। তিনি স্বীকার করেছেন, ইসলাম ধর্ম প্রচারকের সঙ্গে গুলশানের হামলাকারীদের কোনো সম্পর্ক ছিল কিনা– তিনি তাদের অনুপ্রেরণাদাতা কি-না তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
এমন কী বাংলাদেশ চাইলে সে দেশে পিস টিভির সম্প্রচার বন্ধ করার বিষয়টিও ভারত বিবেচনা করতে পারে বলে জানিয়েছেন কিরেন রিজিজু।
মহারাষ্ট্রের হিন্দুত্ববাদী দল শিবসেনা দাবি তুলেছেন, জাকির নায়েককেই ভারতে নিষিদ্ধ করতে হবে। দলের নেতা অরবিন্দ সাওয়ান্ত এদিন মুম্বাইতে বলেছেন, আমাদের এ দাবি জানাতে হবে কেন? জাকির নায়েক যে ধরনের উসকানিমূলক কথাবার্তা বলেন, তাতে সরকারেরই তো উচিত প্রোঅ্যাক্টিভ হয়ে তার মুখ বন্ধ করার ব্যবস্থা নেয়া!
এ দাবির বিষয়টি নাকচ করে স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী কিরেন রিজিজু স্পষ্ট ভাষায় বলেছেন, একজন ব্যক্তিকে বা ভারতীয় নাগরিককে নিষিদ্ধ করা যায় না। নিষিদ্ধ করা যায় কোনো সংগঠন বা সংস্থাকে।
ফলে জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার অর্থ হলো তার পিস টিভিকে বন্ধ করা। জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে যদি জঙ্গিবাদে মদদ দেয়ার কোনও সাক্ষ্য-প্রমাণ মেলে তার বিচার হবে আদালতে।
জাকির নায়েককে ঘিরে ভারতে যখন তোলপাড় তিনি তখন মক্কায় উমরাহ করছেন। সেখান থেকেই টেলিফোনে ভারতের একটি পত্রিকাকে তিনি বলেছেন, ‘আমাকে নিষিদ্ধ করার দাবি তো নতুন নয়–হিন্দু মৌলবাদীরা থেকে থেকেই এ দাবি তোলেন।
আমি তো লোককে ইসলামের পথে টেনে আনি–কিন্তু তারা তা আরও অনেকের কথাই শোনে, অন্য কারও কথায় যদি তারা বিপথগামী হয় তাহলে আমার কী করার আছে?
‘আর বাংলাদেশের কথা বলছেন? জেনে রাখুন, আমার যে প্রায় দেড় কোটি ফেসবুক ফলোয়ার আছে তার বেশির ভাগই বাংলাদেশে। সে দেশের ৯০ শতাংশ লোক–যার মধ্যে রাজনীতিক, সমাজসেবী, ছাত্র-যুবক সবাই আছেন। তারা আমাকে চেনেন, বাংলাদেশের ৫০ শতাংশ লোক আমার ফ্যান। ফলে ঢাকার হামলাকারীরা যদি আমাকে চিনত তাতে কি আমি অবাক হবো? মোটেই না!’
জাকির নায়েক অবশ্য পাশাপাশি এটাও স্বীকার করেছেন, ঢাকার গুলশানের হামলাকারীরা যে পথ নিয়েছে তা তিনি কোনও মতেই সমর্থন করেন না। ‘কোরআন বলে একজন মানুষকেও যদি তুমি হত্যা কর– তা সে যে ধর্মেরই হোক না কেন তাহলে তুমি কিন্তু মানবতাকেই হত্যা করছো’, মন্তব্য করেছেন তিনি।
উল্লেখ্য, শুক্রবার গুলশানের হলি আর্টিজানে হামলা চালায় সন্ত্রাসীরা। গুলশান-২ এর ৭৯ নম্বর সড়কের ওই রেস্টুরেন্টে সন্ত্রাসীদের সঙ্গে পুলিশের গোলাগুলির ঘটনায় ডিবির সহকারী (এসি) রবিউল ইসলাম ও বনানী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সালাহউদ্দিন নিহত হন।
হামলাকারীরা রাতেই দেশি-বিদেশিসহ ২০ জনকে গলা কেটে হত্যা করে। শনিবার সকালে রেস্টুরেন্টটিতে কমান্ডো অভিযান চালানো হয়। অভিযানে ৬ হামলাকারী নিহত হয় বলে আইএসপিআইআরের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
আর্টিজানের মালিকের দাবি, ৬ জনের একজন সাইফুল চৌধুরী। তিনি আর্টিজানের কুক ছিলেন। এরই মধ্যে বাকি ৫ হামলাকারীর পরিচয় প্রকাশিত হয়েছে।
তারা হলেন নিব্রাস ইসলাম, রোহান ইমতিয়াজ, মীর সামিহ মোবাশ্বির, খায়রুল ইসলাম পায়েল এবং শফিকুল ইসলাম উজ্জ্বল। আত্মীয় ও পরিচিতজনরা তাদের ছবি দেখে শনাক্ত করেন।
৫ হামলাকারীর প্রত্যেকেই বেশ কিছুদিন আগে বাসা ছেড়ে হঠাৎ উধাও হয়ে যায়। এদের তিনজন রাজধানীর বিভিন্ন নামিদামি স্কুল-কলেজে পড়েছে বলে তাদেরই বন্ধুরা দাবি করেছে।
এদের মধ্যে দুজন মালয়েশিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করতো। তাদের দুজনের একজন নিব্রাস ইসলাম। নিব্রাস খুব একটা ধার্মিকও ছিল না।
৬ জুলাই, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম