ইসলাম ডেস্ক : তার দিকে আঙুল তুলেছে বাংলাদেশ। গুলশনে জঙ্গি হামলার পেছনে তার ভূমিকা খতিয়ে দেখা হোক, দাবি ঢাকার। নড়চড়ে বসেছে নয়াদিল্লি।
বার্তা চলে গেছে মুম্বাইয়ে। মহারাষ্ট্র সরকার জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। কিন্তু ইসলামী প্রচারক জাকির নায়েক এখন এসব কিছু থেকে কয়েক হাজার কিলোমিটার দূরে। তিনি এখন মক্কায়।
ধর্মীয় সফরে মক্কা গিয়েছেন তিনি, জানাচ্ছে তার অফিস। তদন্তকারীরা জানাচ্ছেন, ঢাকায় হামলা হতেই মুম্বাই থেকে মক্কায় চলে যান জাকির নায়েক।
জাকির নায়েক অত্যন্ত পরিচিত ধর্ম প্রচারক। ইসলামের প্রচার ও প্রসারের জন্য তিনি টেলিভিশন চ্যানেলও খুলেছেন— পিস টিভি। তবে মুম্বাইয়ের বাসিন্দা জাকির নায়েকের পিস টিভি ভারতে নিষিদ্ধ।
ওই টেলিভিশন চ্যানেলে অত্যন্ত আপত্তিকর বক্তব্য সম্প্রচারিত হয় বলে অভিযোগ ওঠার পরই তা ভারতে নিষিদ্ধ হয়েছে। তবে বাংলাদেশসহ পৃথিবীর বিভিন্ন ইসলামী রাষ্ট্রে পিস টিভির দর্শক সংখ্যা নেহাত কম নয়।
তাই জাকির নায়েকের প্রতিপত্তিও খুব কম নয়। ঢাকায় জঙ্গি হানার পর বাংলাদেশের গোয়েন্দারা জাকির নায়েকের যোগসূত্রের বিভিন্ন প্রমাণ পেয়েছেন বলে খবর। বিশদে তা জানানো হয়েছে নয়াদিল্লিকে।
বাংলাদেশের দাবি, যে জঙ্গিরা গুলশানের রেস্তোরাঁয় হামলা চালিয়েছিল, তাদের মধ্যে অন্তত দু’জনকে সন্ত্রাসবাদী কার্যকলাপে যোগ দিতে উদ্বুদ্ধ করেছেন জাকির নায়েক।
পিস টিভিতে সম্প্রচারিত বক্তব্য এবং জাকির নায়েকের বিভিন্ন ভাষণ যথেষ্ট বিদ্বেষমূলক বলে বাংলাদেশও এখন মনে করছে।
জাকির অবশ্য ঢাকার জঙ্গি হামলার সঙ্গে তার যোগ থাকার অভিযোগ সম্পূর্ণ নস্যাৎ করেছেন। তিনি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠানো এক ভিডিও বার্তায় দাবি করেছেন, বাংলাদেশে ৯০ শতাংশ মানুষ তাকে চেনেন এবং ৫০ শতাংশ তার অনুগামী।
তাই ঢাকার রেস্তোরাঁয় হামলাকারী জঙ্গিরা যদি সোশ্যাল মিডিয়ায় তার নামে জয়ধ্বনি দিয়ে থাকে, তাহলে তাতে আশ্চর্য হওয়ার কিছু নেই।
জাকির নায়েক এও বলেছেন, ‘আমি যা বলি, আমার প্রত্যেক অনুগামী তা মেনে চলতে নাও পারেন।’ ঢাকায় জঙ্গি হামলার চালাতে তিনি কাউকে উৎসাহিত করেছেন, এমন অভিযোগ জাকির নায়েক উড়িয়ে দিয়েছেন।
তিনি বলেছেন, ‘নিরীহ মানুষকে হত্যা করতে আমি উৎসাহিত করেছি, এ অভিযোগ আমি অস্বীকার করছি।’
জাকির নাইক যা-ই বলুন, তার ভূমিকা কিন্তু এখন প্রবল ভাবে সংশয়ের মুখে। ভারত সরকার জাকিরের বিরুদ্ধে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছে। আগে থেকেই ভারতে তার টিভি চ্যানেলের সম্প্রচার নিষিদ্ধ।
তার সংস্থা ‘ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন’-এর দফতরে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে সমস্ত গতিবিধি নজরে রাখার জন্য।
এত কিছুর পরও জাকির নায়েক মক্কা থেকে ফিরছেন না। কবে ফিরবেন তাও স্পষ্ট করে জানাচ্ছেন না।
ব্রিটেন, কানাডার মতো বেশ কয়েকটি দেশে জাকির নায়েকের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
বিভিন্ন ধর্মীয় সভায় এবং টিভি চ্যানেলে জাকির যে সব বক্তব্য রাখেন তা অত্যন্ত আপত্তিকর বলে মনে করে ওই সব দেশের সরকার। তাই এ নিষেধাজ্ঞা।
ভারত সরকার এতদিন জাকির নায়েকের বিষয়ে কেন সতর্ক হয়নি তা নিয়েই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
এর মধ্যেই বিতর্কে জড়িয়েছেন কংগ্রেস নেতা দিগ্বিজয় সিংহ।
২০১২ সালে একটি ধর্মীয় কর্মসূচিতে জাকির নায়েকের সঙ্গে একই মঞ্চে দেখা গিয়েছিল দিগ্বিজয়কে। সেই মঞ্চ থেকে দিগ্বিজয় জাকির নায়েকের প্রশংসাও করেন।
সেই ভিডিও তুলে ধরে কংগ্রেসকে তীব্র আক্রমণ করেছে বিজেপি। দিগ্বিজয় অবশ্য নতুন করে জাকির নায়েকের পক্ষে মুখ খোলেননি।
তিনি বৃহস্পতিবার বলেন, ‘জাকির নায়েকের বিরুদ্ধে যদি প্রমাণ থাকে তাহলে সরকারের উচিত তার বিরুদ্ধে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেয়া। সূত্র : আনন্দ বাজার
৭ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম