শুক্রবার, ০৮ জুলাই, ২০১৬, ১০:০৩:৫১

ড. জাকির নায়েক কি জঙ্গিবাদের মদদদাতা?

ড. জাকির নায়েক কি জঙ্গিবাদের মদদদাতা?

ইসলাম ডেস্ক : ড. জাকির নায়েক আবার বিতর্কের কেন্দ্রবিন্দুতে৷ গুলশান ট্র্যাজেডির পর তার বিরুদ্ধে জঙ্গিবাদকে মদদ দেয়ার অভিযোগ উঠেছে৷ ভারতের মহারাষ্ট্রও শুরু হয়েছে তার বিরুদ্ধে তদন্ত৷ জাকির নায়েক কি সত্যিই জঙ্গিবাদের মদদদাতা?

গত কয়েকদিন ধরে আবার সারা বিশ্বেই আলোচনা-সমালোচনায় আছেন ভারতীয় ইসলামী চিন্তাবিদ ড. জাকির নায়েক৷ সর্বশেষ খবর, ভারতের মহারাষ্ট্র রাজ্য সরকার তার বিষয়ে তদন্ত শুরুর নির্দেশ দিয়েছে পুলিশকে৷

ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মুম্বাইয়ে জাকির নায়েকের ‘ইসলামিক রিসার্চ ফাউন্ডেশন'-এর অফিসের বাইরে এরই মধ্যে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে৷ ভারতের এনডিটিভি এবং হিন্দুস্থান টাইমস জানিয়েছে, বাংলাদেশ সরকারের দাবি পূরণ করতেই এ পদক্ষেপ নিয়েছে মহারাষ্ট্র সরকার৷

গত ১ জুলাই গুলশানের রেস্তোরাঁয় জঙ্গি হামলার পর জাকির নায়েকের নাম নতুন করে আলোচিত হতে থাকে বাংলাদেশে৷ নিহত জঙ্গিদের কেউ কেউ সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে নিয়মিত জাকির নায়েকের ‘উগ্র' বক্তব্য শেয়ার করতেন – এ বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পরই নতুন করে শুরু হয় জাকির নায়ককে নিয়ে বিতর্ক৷

তবে ড. জাকির নায়েককে নিয়ে বিতর্ক নতুন কিছু নয়৷ ভারতের মহারাষ্ট্রেই জন্ম নেয়া এই ইসলাম বিষয়ক বক্তা আগে নিষিদ্ধও হয়েছেন৷

গত বছর উসকানিমূলক কথাবার্তা বলার অভিযোগে ভারতের কর্নাটকা রাজ্যে তাকে নিষিদ্ধ করা হয়৷ শুধু তাকেই নয়, ভারতের মৌলবাদী হিন্দুদের দল আরএসএস-এর নেতা প্রবীণ টোগারিয়াকেও তখন নিষিদ্ধ করেছিল কর্ণাটকা সরকার৷

২০১০ সালে ব্রিটেনও জাকির নায়েককে নিষিদ্ধ করে৷ এর তিন বছর পর বিবিসিতেও একটি বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়৷ সেখানে বলা হয়, জাকির নায়েকের বক্তব্যে অনেক ‘অগ্রহণযোগ্য' উপাদান থাকায় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় তাকে নিষিদ্ধ করে, কিন্তু তারপরও ব্রিটেনের লাইব্রেরিতে তার বই রয়েছে৷

প্রতিবেদনে আরো দাবি করা হয়, লন্ডনের পাবলিক লাইব্রেরিতে অন্তত জাকির নায়েকের অন্তত এমন তিনটি বই রয়েছে, যেগুলোতে তিনি জঙ্গিবাদ, নারী এবং ইহুদিদের বিষয়ে চরম আপত্তিকর মন্তব্য করেছেন৷

প্রতিবেদক এড ডেভি দাবি জানান, উর্দুতে লেখা একটি বইতে জাকির নায়েক বলেছেন, তিনি ‘মৌলবাদী হতে পেরে গর্বিত'৷ প্রতিবেদকের আরো দাবি ছিল, জাকির নায়েক বলেছেন, ‘প্রত্যেক মুসলমানেরই জঙ্গি হওয়া উচিত৷'

ব্রিটেন ছাড়া যুক্তরাষ্ট্র এবং মালয়েশিয়াতেও ড. জাকির নায়েককে নিষিদ্ধ করা হয়েছে৷ তবে ড. জাকির নায়েক সবসময়ই উসকানিমূলক বক্তব্য দেয়া এবং তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস অথবা অন্য কোনো জঙ্গি সংগঠনকে সমর্থন দেয়ার অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করেছেন৷

কিন্তু গুলশান ট্র্যাজেডির পর আবার উঠেছে সেই প্রশ্ন৷ ড. জাকির নায়েক কি সত্যিই আইএসকে সমর্থন করেন? আইএস সম্পর্কে তার কী বক্তব্য?

এ নিয়ে সংশয় বা সন্দেহের অবকাশ জাকির নায়েকই রাখেননি৷ এক অনুষ্ঠানে আইএস সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে আইএসের অন্য নাম আইসিসের পূর্ণাঙ্গ রূপ ‘ইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া'কে বিকৃত করে ড. জাকির নায়েক বলেন, ‘আমি মনে করি, তারা আসলে অ্যান্টইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া৷' সঙ্গে সঙ্গেই উপস্থিত শ্রোতাদের কেউ কেউ হাততালি শুরু করেন৷

তখাকথিত ইসলামিক স্টেটকে ‘অ্যান্টইসলামিক', অর্থাৎ ইসলামবিরোধী বলার পক্ষে যুক্তি দেখাতে গিয়ে জাকির নায়েক বলেন, ‘আমি এমন মনে করি, কারণ, ইসলামপন্থি কোনো ব্যক্তি কখনোই কোনো নিরপরাধ মানুষকে হত্যা করতে পারে না৷'

পবিত্র কোরআনের আয়াত উদ্ধৃত করে তিনি বলেন, ‘কোরআনে বলা আছে, যদি কেউ কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করে তাহলে নিহত ব্যক্তি মুসলিম-অমুসলিম যা-ই হোন না কেন, সেই হত্যা পুরো মানবতাকেই হত্যার শামিল৷

একইভাবে কেউ যদি একজন মানুষকে রক্ষা করে, তাহলে সেটাও পুরো মানবতাকেই রক্ষা করার মতো৷ এখন এসব লোক, যারা নিজেদের ‘আইএস' বলে দাবি করে, তারা নিরপরাধ মানুষকেই তো হত্যা করছে৷ নিরপরাধ অমুসলিমদের হত্যা করার কথাও কোরআনে বলা নেই৷

তাই আমার মতে, তারা (আইসিস বা আইএসআইএস বা আইএস) মুসলমানই হতে পারে না৷ সে-ই মুসলমান, যে কি-না সর্বশক্তিমান আল্লাহর কাছে নিজেকে সমর্পণ করে৷ কোনো মুসলমান কখনোই কোনো নিরপরাধ ব্যক্তিকে হত্যা করবে না৷ তাই আমার মতে, তারা (আইএস) অ্যান্টিইসলামিক স্টেট অফ ইরাক অ্যান্ড সিরিয়া৷'

সুতরাং, আইএসের বিষয়ে ড. জাকির নায়েকের বক্তব্য মোটামুটি স্পষ্ট৷ তিনি মনে করেন, আইএস নিরীহ মানুষকে হত্যা করছে বলে তারা মুসলমানই নয়, তারা বরং ইসলামবিরোধী৷

কিন্তু এই বক্তব্যই কি তার জঙ্গিবাদবিরোধী অবস্থান স্পষ্ট করে?

ড. জাকের নায়েক জঙ্গিবাদবিরোধী কি-না সে সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে অন্তত আরেকটি ভিডিও সবারই দেখা দরকার৷ এই ভিডিওটি ২০০৬ সালের৷ তখন আরেক অনুষ্ঠানে আল কায়দা প্রধান ওসামা বিন লাদেন সম্পর্কে প্রশ্ন করেছিলেন এক তরুণ৷ জবাবে জাকির নায়েক কিন্তু লাদেনকে সমর্থনই করেছেন৷

ওপরের ভিডিওতেই রয়েছে লাদেন সম্পর্কে তার সম্পূর্ণ বক্তব্য৷ সেখানে তিনি বলেছেন, ‘একজন মুসলমান প্রশ্ন করেছেন, ওসামা বিন লাদেন যা করছেন, ঠিক করছেন কিনা৷ আপনি কি নিজে যাচাই করে দেখেছেন? নাইজেরিয়ায় বোমা বিস্ফোরণ৷ কে করেছে? ওসামা বিন লাদেন৷ হেডলাইন৷ তিনি করেছেন কিনা আমরা তা জানি না৷ তবে আমার মতামত জানতে চাইলে বলবো, যদি তিনি সত্যের পক্ষে থেকে থাকেন, তিনি যদি ইসলামের শত্রুর সঙ্গে লড়াই করেন, আমি তাঁর পক্ষে৷'

সেই অনুষ্ঠানে ড. জাকির নায়েক একটা কথাই বোঝানোর চেষ্টা করেছেন যে, লাদেন আদৌ খারাপ কোনো কাজ করছেন কি-না তা তিনি জানেন না৷

এমন অবস্থান থেকেই তিনি বলেন, ‘আমি জানি না তিনি (লাদেন) কী করছেন৷ আমি তার সংস্পর্শে নেই৷ ব্যক্তিগতভাবে আমি তাকে চিনি না৷ আমি শুধু খবরের কাগজ পড়ি৷ তিনি যদি সন্ত্রাসীদের সন্ত্রস্ত করেন, তিনি যদি সবচেয়ে বড় সন্ত্রাসী অামেরিকাকে সন্ত্রস্ত করে থাকেন, আমি তার পক্ষে আছি৷ প্রত্যেক মুসলমানেরই সন্ত্রাসী হওয়া উচিত৷

ব্যাপারটা হলো, তিনি (লাদেন) যদি সন্ত্রাসীদের মনে ত্রাস ছড়িয়ে থাকেন, তিনি তাহলে ইসলামই অনুসরণ করছেন৷ আসলে তিনি তা করছেন কি-না তা আমি জানি না৷'

ইসলামি চিন্তাবিদ হলেও নিজের বক্তব্যে ড. জাকির নায়েক কিন্তু বলেছেন, ওসামা বিন লাদেন কী করেছেন তা তিনি জানেন না৷ তিনি আরো বলেছেন, লাদেন যদি সন্ত্রাসীদের মনে ত্রাস ছড়িয়ে থাকেন তাহলে তিনি তার পক্ষে আছেন৷

প্রশ্ন হলো, নিরীহ মানুষ হত্যা করে বলে আইএসকে ‘ইসলামবিরোধী' বললেও, লাদেন সম্পর্কে জাকির নায়েকের এমন বক্তব্য জঙ্গিবাদকে উসকে দেয়ার মতো কি-না৷ আপনার কী মনে হয়? সূত্র : ডয়চে ভেলে
৮ জুলাই,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে