জামালপুর : বর্তমানে জামালপুরে জলে-স্থলে ভারতীয় হাতি আতঙ্ক বিরাজ করছে। ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র স্রোতের পানিতে ভেসে আসে প্রায় পাঁচটন ওজনের একটি ভারতীয় বন্যহাতি। এ হাতির উপদ্রবে এলাকার মানুষ আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। এ ছাড়া সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে আসা বন্যহাতির আতঙ্কে দিন কাটাচ্ছে ওই এলাকার অন্তত ১৫হাজার মানুষ।
গত ২৭ জুন হাতির পাল থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে ভারতের আসাম থেকে একটি বন্যহাতি ব্রহ্মপুত্র নদের স্রোতে ভেসে উত্তরাঞ্চলের চার জেলা ঘুরে এখন জামালপুরের সরিষাবাড়ীতে অবস্থান করছে। ভেসে আসা ওই বন্যহাতিটি দীর্ঘপ্রায় দুই মাস ধরে পানিতে ছুটাছুটি করছে।
এদিকে ভেসে আসা হাতি উদ্ধারে জামালপুরে চলছে নানা আয়োজন। বাংলাদেশের ১৭সদস্যের একটি উদ্ধারকারী দল হাতি উদ্ধারে নেমেছে। পাশাপাশি গত ৪ আগস্ট ভারত থেকে তিন সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল ১৭ জনের সঙ্গে যোগ দেন। হাতি উদ্ধার প্রক্রিয়াগুলোর মধ্যে ছিল হাতি দিয়ে হাতি উদ্ধার, ট্রাঙ্কুলাইজ গান (চেতনানাশক ঔষধ) দিয়ে গুলি ছোড়া, ক্রেন ব্যবহার, ঢাক ঢোল পেটানো ইত্যাদি। কিন্তু এসব উদ্যোগের সবই ব্যর্থ হয়েছে। চারদিন অব্যাহত চেষ্টার পর বন্যহাতিটি উদ্ধারে ব্যর্থ হয়ে ফিরে যান দেশটির তিন হাতি বিশেষজ্ঞ। গত ৯ আগস্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যা সাড়ে সাতটায় তারা ঢাকা ত্যাগ করেন।
বাংলাদেশ ছাড়ার আগে ভারতীয় দলের তিন সদস্যের মধ্যে আসামের সাবেক প্রধান বন কর্মকর্তা রীতেশ ভট্টচার্য বলেন ‘বন্যা পরিস্থিতির কারণে হাতিটি উদ্ধারে আমরা ব্যর্থ হয়েছি। আমরা ফিরে যাচ্ছি, তবে আবারো পুর্ণ প্রস্তুতি নিয়ে আসব।’
তিনি বলেন, ‘হাতিটি উদ্ধারে আসাম থেকে একটি কুনি হাতি ও মাহুত নিয়ে আসতে হবে। এজন্য লোকজনের ভিসা ও অন্যান্য বিষয়াদি নিয়ে ঢাকার ভারতীয় হাইকমিশনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক করেছি। তারা এ বিষয়ে আশ্বাস দিয়েছেন।’
হাতি উদ্ধারে আসা ভারতীয় দলের প্রধান ড. কুশল কুনওয়ার শর্মা বলেন, ‘হাতিটি উদ্ধার করতে পারিনি মানে আমরা ব্যর্থ। আবার এটিকে পুরোপুরি ব্যর্থও বলাও যাবে না। কারণ, সরিষাবাড়ির যে এলাকাটিতে হাতিটি রয়েছে, সেখানে বেশিরভাগই বন্যার পানি রয়েছে। কিছু জায়গা শুকনো রয়েছে। এরমধ্যে আবার প্রচুর মানুষ। এ পরিস্থিতিতে ট্রাঙ্কুলাইজ করতে গেলে হাতিটি মারা যেতে পারে। এ জন্য আমরা ঝুঁকি নেয়নি।’
তিনি বলেন, ‘এ পরিস্থিতির কারণে আমাদের ফিরে যেতে হচ্ছে। আমি বাংলাদেশের ডাক্তারদের প্রাথমিক প্রশিক্ষণ দিয়েছি। তারা চেষ্টা অব্যাহত রাখবেন।’
ভারতীয় প্রতিনিধি দল ফিরে যাওয়ার পর বর্তমানে বাংলাদেশের ১৭ সদস্যের দল হাতি উদ্ধারে মাঠে নেমেছেন। তারা গত ৯ আগস্ট থেকে হাতি উদ্ধার অভিযান চালাচ্ছেন। এর মধ্যে বুধবার (১০আগস্ট) ট্রাঙ্কুলাইজার গান দিয়ে প্লাস্টিক ডার্ট নিক্ষেপ করা হয়। কিন্তু হাতিটি অচেতন না হয়ে বরং আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ছুটাছুটি শুরু করে। অতপর সে প্রক্রিয়াটিও মূলত অকার্যকর হয়েছে। এনিয়ে মোট তিনবার ট্রাঙ্কুলাইজার গান ব্যবহার করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন, সুটার ভেটেনারী সার্জন ডাক্তার মোস্তাফিজুর রহমান।
তিনি জানান, মোটা চামড়ার কারণে ট্রাঙ্কুলাইজার গান দিয়ে প্লাস্টিক ডার্ট নিক্ষেপ অকার্যকর হয়।
এদিকে বুধবার (১০ আগস্ট) দুপুর পর্যন্ত হাতিটি সরিষাবাড়ী উপজেলার কামারাবাদ ইউনিয়নের সৈয়দপুর গ্রামে প্রবেশ করে।
হাতি উদ্ধার কাজে নিয়োজিত বন্যপ্রাণী পরিদর্শক অসিম মল্লিক জানান, হাতি উদ্ধারে ট্রাঙ্কুলাইজার গান প্লাস্টিক ডার্ট নিক্ষেপ প্রক্রিয়াটি মূলত কাজে আসছে না। তাই হাতি উদ্ধারের জন্য মেটাল ডার্ট ব্যবহার করতে হবে। মেটাল ডার্ট আছে কিনা জানতে চাইলে অসিম মল্লিক জানান, ১৯৮৮ সালে কেনা একটি পুরনো মেটাল ডার্ট তাদের কাছে রয়েছে।
সরিষাবাড়ীর কামরাবাদ ইউপি চেয়ারম্যান মুনছর আহমেদ জানান, প্রায় ১২দিন ধরে হাতিটি এ ইউনিয়নের আশপাশ এলাকায় ছুটাছুটি করছে। কৃষকদের পাট ক্ষেত, কলা গাছসহ নানা ফসল খেয়ে মাড়িয়ে নষ্ট করছে। এলাকার লোকজনের মধ্যে চরম আতঙ্ক বিরাজ করছে। স্থানীয়রা হাতি আক্রমণের ভয়ে রাত জেগে মশাল জ্বালিয়ে পাহারা দিচ্ছেন। তাছাড়া হাতি উদ্ধারকারী দলের সদস্যরা হাতিটি উদ্ধার করতে গিয়ে বার বার আঘাত করায় হাতিটি ক্ষেপে আছে। এতে মানুষের ওপর হাতির আক্রমণের আশঙ্কা দিন দিন বাড়ছে।
এদিকে জামালপুরের বকশীগঞ্জের সীমান্ত এলাকায় ভারতীয় বন্য হাতির আতঙ্কে বসবাস করছেন ১৫ হাজার মানুষ। হাতি দ্বারা প্রাণহানি ও ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির মুখোমুখি এসে পড়েছেন সীমান্তবর্তী এলাকার হাজার হাজার নারী পুরুষ। তাই হাতির সাথে মুখোমুখি যুদ্ধে লিপ্ত হয়ে পড়েছেন গ্রামবাসী।
সর্বশেষ গত মঙ্গলবার (৯ আগস্ট) দিবাগত গভীর রাতে সীমান্তের কাঁটাতারের বেড়া অতিক্রম করে বন্যহাতির দল বকশীগঞ্জ উপজেলার ধানুয়াকামালপুর ইউনিয়নের যদুরচর এলাকায় তান্ডব চালায়। উক্ত তান্ডবে প্রায় ২০টি বসতঘর, আসবাবপত্র,গাছপালা তছনছ ও ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করেছে।
জামালপুরের জেলা প্রশাসক মো. শাহাবুদ্দিন খান জানান, ভেসে আসা হাতি উদ্ধারে সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। পাশাপাশি সীমান্তবর্তী গ্রামগুলোতে বন্যহাতির বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। -দ্য রিপোর্ট
১১ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম