জামালপুর থেকে : উত্তাল যমুনায় নৌকাডুবিতে ৭০ কিলোমিটার প্রচণ্ড স্রোতের মধ্যে নদীর পানিতে ভেসে অলৌকিকভাবে বেঁচে স্বজনদের কাছে ফিরেছে ছয় বছরের শিশু প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী মমতা বীথি ও আট বছরের নয়ন।
দেওয়ানগঞ্জ চুকাইবাড়ী ফুটানীবাজারঘাট থেকে ইঞ্জিনচালিত নৌকায় ভিজিএফের চাল এবং হাটবাজার করে গ্রামের বাড়ি যমুনার দুর্গম চরাঞ্চল হলকা হাবড়াবাড়ী ফেরার সময় ৭ আগস্ট রাত ৭টার দিকে ওই নৌকাডুবি ঘটনা ঘটে।
নৌকায় নারী-শিশুসহ প্রায় ২৮ যাত্রী ছিল। এ ঘটনায় তিনজনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এখনও দুজন নিখোঁজ রয়েছে। যমুনার দুর্গম চরাঞ্চল সরেজমিন ঘুরে মঙ্গলবার ওই সাহসী দুই শিশুসহ তাদের স্বজনদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তারা এখন মানসিক ট্রমায় ভোগছে।
মমতা বীথি ঠিকমতো কথা বলতে পারছে না। মানুষ দেখলে কান্না করে ওঠে। ঘর থেকে বের হতেও চায় না।
নৌকাডুবিতে কীভাবে বেঁচে ফিরল জিজ্ঞাসা করলে মমতা বলে, আইতের বেলা আন্দার নদীত বাতাস নাউ ডুবে গেলে কই যাইতাছি বুঝতেছিলাম না, সাঁতার জানি না, নদীর পানিতে কোনটা ধইরা ভাইসা গেছি।
মমতা দেওয়ানগঞ্জের চরহলকা হাবড়াবাড়ীর প্রথম শ্রেণির শিক্ষার্থী। এর পর কথা হয় পাশের বাড়ির আট বছরের শিশু নয়নের সঙ্গে। সেও মমতার মতোই জানায়, অন্ধকার রাতে নৌকাডুবির পর সারারাত আতঙ্কে চিৎকার করছিল। এভাবে ভেসে ভেসে অনেক দূর চলে যায়।
পর দিন সকালে পাট কাটার লোক এসে তাকে নদীতে ভাসতে দেখে তাদের নৌকায় তুলে উদ্ধার করে। কথা বলার সময় বারবার ভয়ে কেঁপে ওঠে নয়ন।
ঘটনার স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে আতঙ্কে ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিল না। ঘুমের মধ্যে প্রায়ই আঁতকে ওঠে বলে জানান তাদের স্বজনরা।
গত বৃহস্পতিবার ঘটনাস্থল থেকে যমুনার ভাটি এলাকা বগুড়ার সারিয়াকান্দির চন্দনবাইসার ঘুঘুমারী থেকে মমতা বীথি এবং পর দিন শুক্রবার নয়নকে সারিয়াকান্দি থেকে উদ্ধার করা হয়।
একই এলাকা থেকে রেজিয়া খাতুনের (৪৫) লাশ উদ্ধার করা হয়। চরহলকা হাবড়াবাড়ীতে নিখোঁজ এবং মৃতদের বাড়িতে চলছে শোকের মাতম।
চরহলকা হাবড়াবাড়ী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ফজলুল হক এবং ইমতিয়াজ বলেন, একেই বলে রাখে আল্লা মারে কে? নৌকাডুবিতে তিনজন মারা গেছে, এখনও দুজন নিখোঁজ রয়েছে এবং নিষ্পাপ দুটি শিশু জীবিত উদ্ধার হওয়ার ঘটনাটিকে অলৌকিক মনে করছেন তিনি।