জামালপুর: করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে ফের ঢাকা, চট্টগ্রাম, গাজীপুর, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলা করোনার রেড জোনে ভাগ করে লকডাউন কার্যকর করায় বিপা'কে পড়েছেন পোশাক কারখানাসহ বিভিন্ন কলকারখানার শ্রমিক-কর্মচারী ও নিম্ন আয়ের মানুষেরা। অনেকেই ভাড়াবাসা ছেড়ে দিয়ে গ্রামের বাড়িতে ছুটছেন আসবাবপত্রসহ সপরিবারে। প্রতি রাতেই পিকআপ ও ছোট ট্রাক ভরে সংসারের সব আসবাবপত্রসহ অনেক পরিবারই জামালপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় গ্রামের বাড়িতে ছুটছেন। এতে করে জেলার বিভিন্ন উপজেলার প্রত্যন্ত গ্রামেও করোনাভাইরাস সং'ক্রমণের ঝুঁ'কি আরো বাড়ার শ'ঙ্কা রয়েছে।
গতকাল বৃহস্পতিবার (১১ জুন) দিবাগত রাত ৩টার দিকে জামালপুর শহরের প্রধান সড়কের রেলগেট এলাকায় দেখা যায়, একটি ছোট পিকআপভরা খাট-চেয়ার-টেবিলসহ সংসারের বিভিন্ন আসবাব ও তৈজসপত্র নিয়ে সপরিবারে জেলার মেলান্দহ উপজেলার হাজরাবাড়ী পৌরসভা এলাকায় নিজের বাড়িতে যাচ্ছেন মো. বাবুল (৩০)। ছোট ওই পিকআপটিতে তার স্ত্রী ও তার বড়ভাইয়ের স্ত্রী ও সন্তানেরাও রয়েছেন।
তাদের সাথে কথা বলে জানা গেল, বাবুল ও তার ভাই সাভারের আশুলিয়ায় একটি পোশাককারখানার কর্মচারী। একদিকে পোশাককারখানায় বেতন পাননি। অন্যদিকে করোনার কারণে ওই এলাকায় পুনরায় লকডাউন শুরু হওয়ায় ভাড়াবাসায় ছেড়ে দিয়ে চলে এসেছেন তারা।
রেলগেট এলাকার রাত্রিকালীন সিএনজি অটোরিকশাচালক ও স্থানীয় নৈশপ্রহরীরা জানালেন, বৃহস্পতিবার রাত ১২টার পর থেকে রাত ৩টা পর্যন্ত এমন বাসাবাড়ির আসবাবপত্র, অন্যান্য মালামাল ও সাত-আটজনের যাত্রীসহ অন্তত ১৬টি পিকআপ যেতে দেখেছেন তারা। গত কয়েকদিন ধরে ভোররাত পর্যন্ত এভাবেই অনেকেই অধিকহারে করোনা সং'ক্রমিত এলাকা থেকে জামালপুর জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাড়িতে চলে আসছেন।
স্বাস্থ্য বিভাগ সূত্র জানায়, জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার ঘোষেরপাড়া ইউনিয়নে গত ৫ এপ্রিল প্রথম এক যুবকের করোনা শনা'ক্ত হয়। ওই যুবক ঢাকায় বনানীর একটি প্লাস্টিক কারখানায় কর্মচারী হিসেবে সেখানেই করোনার উপসর্গ দেখা দিলে গ্রামে বাড়িতে এসেছিলেন। এরপর থেকেই গত দুই মাসে গত বৃহস্পতিবার পর্যন্ত জামালপুর জেলার সাতটি উপজেলায় ৩৮৫ জন করোনার রোগী শনা'ক্ত হয়েছেন।
রেড জোন বা অধিক সং'ক্রমণ জেলা বা এলাকা থেকে এখন যেভাবে লোকজন আবার জামালপুরে আসতে শুরু করেছে, তাদেরকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা না করে বা কোয়ারেন্টিনে না রাখা হলে জামালপুর জেলায় করোনাভাইরাসে সং'ক্রমিত রোগীর সংখ্যা দ্রুত বাড়তে পারে বলে মনে করছেন জেলার সিভিল সার্জন।
সিভিল সার্জন ডা. প্রণয় কান্তি দাস কালের কণ্ঠকে বলেন, বাইরের জেলা বিশেষ করে করোনায় অধিক সং'ক্রমিত এলাকা থেকে যদি এভাবে অবাধে লোকজন চলে আসে তাহলে জেলায় করোনার রোগী আরো বাড়তে পারে। তখন সবারই খুব সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে। বাইরে থেকে যারা আসতেছেন তাদের শারীরিক লক্ষণ ও অন্যান্য তথ্য সংগ্রহসহ উপসর্গ পাওয়া গেলে কোয়ারেন্টিনে রাখা বা নমুনা সংগ্রহ করা, এসব কার্যক্রম পরিচালনা করা খুবই জরুরি। আইন প্রয়োগকারী সংস্থা এ ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে পারে। প্রয়োজনে স্বাস্থ্যবিভাগের পক্ষ থেকেও এ ব্যাপারে তাদেরকে সহযোগিতা করা হবে।
জামালপুর সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. সালেমুজ্জামান কালের কণ্ঠকে বলেন, ঢাকা, চট্টগ্রাম, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, সাভার, আশুলিয়াসহ অধিকহারে করোনা সংক্রমিত জেলা বা এলাকা থেকে যে সমস্ত লোকজন পিকআপ বা ট্রাকে করে জামালপুর জেলায় ঢুকছে তাদের ফিরিয়ে দেওয়ার জন্য আপাতত আমাদের কাছে সরকারি কোন নির্দেশনা নেই। সরকারি কোনো নির্দেশনা পেলে পুলিশ তখন জেলার বাইরে থেকে কাউকে ঢুকতে দিবে না।-কালের কণ্ঠ