লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.) : প্রথমেই বলে নেয়া ভালো, আমি বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িয়ে আছি এবং আগামীতেও জড়িয়ে থাকার আকাঙ্ক্ষা পোষণ করি। প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের আদর্শ এবং এই রাষ্ট্রকে একটি আধুনিক রাষ্ট্র হিসেবে গড়ে তোলার ক্ষেত্রে তার যে ত্যাগ-তিতিক্ষা, তা আমাকে আকৃষ্ট করেছিল, যার পরিণতিতে আমি বিএনপির সঙ্গে যুক্ত হয়েছি। এই দলটিকে আমি শক্তিশালী দেখতে চাই। জিয়াউর রহমানের আদর্শ এবং বর্তমান চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার রূপকল্প বাস্তবায়নের জন্য বিএনপি যতদিন কাজ করে যাবে, ততদিন আমিও তাদের সঙ্গে থাকব।
তবে এ কথা ঠিক, দলটির বর্তমান কমিটি নিয়ে দেশে কিছু বিভ্রান্তি রয়েছে, কিছু সমালোচনাও আছে, যেগুলোর কিছু আবার যৌক্তিকও বটে। প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় সেসব নিয়ে আলোচনাও হচ্ছে। আমি বলব, বহুল প্রত্যাশিত ও দীর্ঘ প্রতীক্ষিত এই কমিটির অনেক সীমাবদ্ধতা থাকলেও একে চূড়ান্ত বিচারে ভালোই বলা যাবে। সীমাবদ্ধতাগুলোর একটি হল বিএনপির কাউন্সিলে কেন্দ্রীয় কমিটি গঠনের সম্পূর্ণ ক্ষমতা বেগম খালেদা জিয়ার ওপর অর্পণ করা হয়েছে।
বিএনপির কাউন্সিলে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরকে ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে মহাসচিব পদে উন্নীত করা হতো যুক্তিযুক্ত। কিন্তু তা হয়নি। একটা দীর্ঘ সময় পর মহাসচিব ও সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যানের নাম ঘোষিত হল। তখন মনে হয়েছিল, অতি অল্প সময়ের মধ্যেই বুঝি পূর্ণাঙ্গ কমিটি আমরা দেখতে পাব। কিন্তু আমাদের অপেক্ষা করতে হল প্রায় চার মাস। নতুন কমিটি নিয়ে অনেক অবজারভেশন রয়েছে। তবে বেগম জিয়াকে যেহেতু কমিটি নির্বাচনের সর্বময় ক্ষমতা দেয়া হয়েছিল, সেহেতু তার দ্বারা নির্বাচিত কমিটি নিয়ে বড় ধরনের প্রশ্ন তোলা যৌক্তিক হবে না।
হ্যাঁ, নতুন কমিটি নিয়ে কিছু ক্ষোভ, কিছু অসন্তুষ্টির জায়গা আছে অবশ্য। এবং এই ক্ষোভ ও অসন্তুষ্টির প্রকাশও ঘটেছে। ভাইস চেয়ারম্যান হিসেবে নিযুক্ত মোসাদ্দেক হোসেন ফালু পদত্যাগ করেছেন। ওদিকে সহদফতর সম্পাদক শামিমুর রহমানও পদত্যাগ করেছেন। তিনি দীর্ঘদিন বিএনপির সহপ্রচার সম্পাদক ছিলেন। এই যোগ্য ও নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তি এবার আরও বড় দায়িত্ব পাবেন, তেমনটাই আশা করেছিলেন অনেকে। কিন্তু ‘সহ’-তেই থেকে গেলেন। শুনতে পাচ্ছি- বিএনপির রাজনীতিতে পরীক্ষিত এবং যোগ্যতার দিক থেকে অনেকের চেয়ে উপরে থাকা আবদুল্লাহ আল নোমানও পদত্যাগ করবেন। কারণ তিনি দলের স্থায়ী কমিটিতে স্থান পাননি। নোমানকে কেন স্থায়ী কমিটিতে রাখা হল না সেটা আমার কাছেও এক বড় প্রশ্ন। কারণ আমাকে স্থায়ী কমিটিতে রাখা হয়েছে, আমার অনেক আগেই রাজনীতিতে আসা পোড় খাওয়া তাকে রাখা হয়নি।
চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া কাউন্সিলে দল ও জাতির সামনে যে রূপকল্প হাজির করেছেন, তা বহুলভাবে প্রশংসিত হয়েছে। এই রূপকল্প বাস্তবায়িত হলে বাংলাদেশ একটি আধুনিক কল্যাণকর রাষ্ট্রে পরিণত হবে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি দলকে সংহত রাখা। যেসব বিভ্রান্তি অথবা অনুযোগ রয়েছে নেতাকর্মীদের মধ্যে, সেগুলোরও মীমাংসা হওয়া দরকার। কারণ আমরা একটা বড় ধরনের চ্যালেঞ্জের মধ্য দিয়ে যাচ্ছি। একটি গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায় সুশাসন দ্বারা পরিচালিত হওয়ার আকাক্সক্ষা আমাদের সবার। আমি মনে করি, এই আকাক্সক্ষা পূরণে শুধু সরকার নয়, বিরোধী দলেরও অনেক কিছু করার আছে। একটি সুসংগঠিত ও যোগ্য নেতৃত্ব দ্বারা সমৃদ্ধ দলই পারে সেই দায়িত্ব পালন করতে। বিএনপির প্রতি সেই আস্থা আমার আছে।
লেখক : লে. জেনারেল মাহবুবুর রহমান (অব.) : সাবেক সেনাপ্রধান; বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য - যুগান্তর
১০ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস