শুক্রবার, ১২ আগস্ট, ২০১৬, ০৩:০৮:২৫

কোথাও নেই সেই সংস্কারপন্থিরা, সন্তোষ বাড়ছে বিএনপিতে

কোথাও নেই সেই সংস্কারপন্থিরা, সন্তোষ বাড়ছে বিএনপিতে

ঢাকা : এবারও বিএনপির নির্বাহী কমিটিতে জায়গা হলো না বিএনপির সেই সংস্কারপন্থি নেতাদের। ওয়ান-ইলেভেন-পরবর্তী কাউন্সিলের পর নির্বাহী কমিটিতে সংস্কারপন্থি বেশ কিছু নেতার জায়গা হয়। ওই সময় দল থেকে ছিটকে পড়েন অর্ধশত সাবেক এমপি ও প্রভাবশালী নেতা।

এর পর থেকে অপেক্ষায় তারা। কিন্তু তাদের সেই অপেক্ষার প্রহর শেষ হচ্ছে না। ওইসব নেতার এবারও ঠাঁই হলো না বিএনপিতে। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ আর হতাশায় সেই নেতারা। তারা এখন একজোট হয়ে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার কাছে চিঠি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। চিঠির উত্তর পাওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন। নইলে বিকল্প পথ খুঁজে নেবেন তারা।

তবে ভবিষ্যতে দল ভাঙনের শঙ্কা থেকেই বিএনপির নীতিনির্ধারকরা আলোচিত সেই নেতাদের কমিটিতে যুক্ত করেননি বলে সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্রে জানা গেছে। সংস্কারপন্থি বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ওইসব নেতা আরও কিছুদিন অপেক্ষা করার চিন্তাভাবনা করছেন। সামনে কমিটি পুনর্গঠন পর্যন্ত চেষ্টা চালাবেন।

তাদের একটি তালিকা তৈরি করে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার হাতে পৌঁছাবেন। সেই পর্যন্ত অপেক্ষাও করবেন এসব নেতা। কোনো সবুজ সংকেত না পেলে বিকল্প কোনো কিছু করার ইঙ্গিত দিয়েছেন কোনো কোনো নেতা। এ নিয়ে তারা নিজেদের মধ্যে যোগাযোগ করছেন। সংস্কারপন্থি একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে।

তবে বিএনপির একাধিক সিনিয়র নেতা জানান, ‘সংস্কারপন্থিদের দলে নেওয়ার প্রয়োজনীয়তা ফুরিয়ে গেছে। তাদের দলের ভিতরে-বাইরে আর কোনো প্রভাব নেই। তারা যা খুশি তাই করতে পারেন। বিএনপিতে এখন ছাত্রদল, যুবদলসহ অঙ্গসংগঠন থেকে নতুন একঝাঁক নেতা তৈরি হয়েছে। তাদেরই ঠিকমতো কমিটিতে জায়গা দেওয়া যাচ্ছে না। কারণ, এখনো বিএনপিতে দল ভাঙার ষড়যন্ত্র চলছে। ওইসব নেতাকে নিলে যে কোনো সময় দল ভেঙে যেতে পারে।’

অবশ্য এ প্রসঙ্গে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আ স ম হান্নান শাহ জানান, ‘ওয়ান-ইলেভেনের সেই সংস্কারপন্থি নেতাদের নেওয়ার ব্যাপারে দলের মধ্যেও আলোচনা ছিল। কিন্তু কেন তাদের নেওয়া হলো না, তা আমার জানা নেই।’

কমিটি প্রসঙ্গে সাবেক এমপি জহির উদ্দিন স্বপন বলেন, ‘কমিটি ঘোষণা হলেও নাম না থাকায় আমরা ক্ষুব্ধ ও হতাশ। জাতীয় ঐক্যপ্রেমী তৃণমূলের লাখ লাখ নেতা-কর্মীও হতাশ হয়েছেন। শুধু আমরাই নই, বিএনপির অনেক নেতাই ক্ষুব্ধ। আমাদের ক্ষুব্ধ মনোভাব লিখিত আকারে বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়াকে জানানো হবে। দলীয় ঐক্য না হলে জাতীয় ঐক্যেও বাধা সৃষ্টি হবে বলেও  মনে করি।’

ওয়ান-ইলেভেনের পরই নেতা-কর্মীদের থেকে প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন সংস্কারপন্থিরা। এক পর্যায়ে বৃহত্তর জাতীয় ঐক্যের স্বার্থে সবাইকে নিয়েই রাজনীতি করার ঘোষণা দেন বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া। এরপর ওই নেতারা বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতার সঙ্গে যোগাযোগও করেন। বিএনপির পক্ষ থেকে তাদের অপেক্ষাও করতে বলা হয়। এরই অংশ হিসেবে সংস্কারপন্থি বেশ কয়েকজন নেতা নিজ নিজ এলাকায় যাতায়াত বাড়িয়ে দেন।

সর্বশেষ ইউপি নির্বাচনেও তাদের মনোনীত প্রার্থীকে দলীয় প্রতীক দেওয়া হয়। সেই নেতারা অপেক্ষায় ছিলেন, এবার অন্তত তাদের কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করে বিএনপিতে রাজনৈতিক সুযোগ দেওয়া হবে। সেই আশায় সংস্কারপন্থিদের গুড়ে বালি। কমিটির বাইরে থাকা বিএনপি নেতার মধ্যে রয়েছেন— চেয়ারপারসনের সাবেক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল জেড এ খান (অব.), সাবেক সচিব মোফাজ্জল করীম, সাবেক যুগ্ম-মহাসচিব আশরাফ হোসেন, সাবেক প্রতিমন্ত্রী আলমগীর কবীর, আনোয়ার তালুকদার, শাহ মোহাম্মদ আবুল হোসাইন, সাবেক হুইপ ও পিরোজপুর জেলার সাবেক সভাপতি সৈয়দ শহীদুল হক জামাল, সাবেক দফতর সম্পাদক মফিকুল হাসান তৃপ্তি, সাবেক তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক জহির উদ্দিন স্বপন, সাবেক এমপি ও সুনামগঞ্জ জেলার সাবেক সভাপতি নজির হোসেন, সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুল, চাঁদপুর জেলার সাবেক সভাপতি এস এ সুলতান টিটু ও সাবেক সাধারণ সম্পাদক আলমগীর হায়দার খান, সাবেক এমপি ইঞ্জিনিয়ার শহিদুজ্জামান, বরগুনার সাবেক জেলা সভাপতি নূরুল ইসলাম মণি, সাবেক এমপি শামীম কায়সার লিঙ্কন, বগুড়ার সাবেক এমপি ডা. জিয়াউল হক মোল্লা ও জি এম সিরাজ, সাবেক এমপি এম এম শাহীন, সাবেক হুইপ খলিলুর রহমান, সাবেক এমপি আবদুল করীম আব্বাসী, সাবেক এমপি শাম্মী শের, সাবেক এমপি আনোয়ার হোসেন, সাবেক এমপি আবদুল গনি, সাবেক এমপি দেলোয়ার হোসেন দুলু প্রমুখ।

সংস্কারপন্থি হিসেবে না থাকলেও এবারও কমিটির বাইরে রয়েছেন বিএনপির সাবেক নেতা ও সাবেক স্থানীয় সরকার প্রতিমন্ত্রী জিয়াউল হক জিয়া, সাবেক এমপি মেজর আখতারুজ্জামান (অব.) ও সাবেক এমপি আবু হেনা। ঝালকাঠির সাবেক এমপি ইলেন ভুট্টোকেও রাখা হয়নি কমিটিতে। পদবঞ্চিত সংস্কারপন্থি নেতা সাবেক এমপি নজির হোসেন বলেন, ‘কমিটিতে সাবেক এমপিদের মধ্যে প্রায় ৪০ জন বাদ পড়েছি। এ তালিকা সবার কাছেই আছে। আমরা অপেক্ষায় ছিলাম, এখনো আছি। কারণ, রাজনীতিতে শেষ বলতে কিছু নেই। বিএনপির নীতিনির্ধারকরাও আমাদের আবারও অপেক্ষা করতে বলছেন। আছি, দেখা যাক কী হয়।’

সাবেক এমপি সরদার সাখাওয়াত হোসেন বকুলের বক্তব্য হলো, ‘দল প্রয়োজন মনে করেনি, কমিটিতে জায়গা হয়নি। প্রত্যাশায় ছিলাম, এবার হয়তো কমিটিতে থাকব। কিন্তু আশাহত হয়েছি। আশা করেছিলাম, কমিটির মাধ্যমে বিএনপি বৃহত্তর ঐক্য প্রতিষ্ঠা করবে। শুধু আমরাই নই, বিএনপির তৃণমূল পর্যায়েও কমিটি নিয়ে ক্ষোভ-বিক্ষোভ বাড়ছে। এখন দেখি, সময়ই সব বলে দেবে।’

অসন্তোষ বাড়ছে বিএনপিতে : নির্বাহী কমিটি ঘোষণা হওয়ার পর অসন্তোষ বাড়ছে বিএনপিতে। এরই মধ্যে চারজন পদত্যাগও করেছেন। সর্বশেষ গতকাল পদত্যাগ করেন পরিতোষ চক্রবর্তী নামে রংপুরে বিএনপির সাবেক এক এমপি। এদিকে অবমূল্যায়িত সিনিয়র বেশ কয়েকজন নেতা ডিওএইচএস বারিধারার একটি বাসায় নিয়মিত বৈঠকও করছেন বলে জানা গেছে। তারা যে কোনো সময় যে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারেন।

সম্প্রতি বেগম জিয়ার সঙ্গে দেখা করেছেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মেজর হাফিজউদ্দিন আহমদ (অব.) বীরবিক্রম। কমিটিতে স্থায়ী কমিটির প্রত্যাশী ছিলেন তিনি। গতকাল জানান, ‘আমি পদের রাজনীতি করি না। প্রত্যাশা মানুষের থাকেই। শহীদ জিয়ার দল করছি। শেষ পর্যন্ত বিএনপিই আমার ঠিকানা।’ এদিকে পদোন্নতি না হওয়ায় হতাশ অ্যাডভোকেট শাহানা আক্তার শানু, মেজর হানিফ (অব.), মেজর মিজান (অব.)সহ নির্বাহী কমিটির বেশ কয়েকজন নেতা।

এ প্রসঙ্গে শাহানা আক্তার শানু জানান, ‘আমার সঙ্গে যারা রাজনীতি করেছেন, তাদের সবাই এখন সম্পাদক ও সহসম্পাদক। আমাকে অবমূল্যায়িত করা হয়েছে। আশা করছি, দল সামনে পুনর্গঠনের সময় মূল্যায়ন করবে।’ মেজর হানিফ জানান, ‘দলের দুঃসময়ে আমরা চেয়ারপারসনের পাশে ছিলাম। আশা করছিলাম, আমাদের মূল্যায়ন হবে। কিন্তু হয়নি। এটা আমাকে হতাশ করেছে।’

কমিটিতে অবমূল্যায়নের শিকার হয়েছেন মেজর মিজান (অব.)ও। বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়ার দুঃসময়ে পাশে থেকে কাজ করেছেন। তিনি আগের কমিটিতে কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ছিলেন। এবারও একই পদে রয়েছেন। অবশ্য অবমূল্যায়িত হলেও বিএনপিই তার শেষ ঠিকানা বলে জানিয়েছেন।

তিনি বলেন, ‘পদ কোনো বিষয় নয়। দলের জন্য কাজ করেছি। ভবিষ্যতেও করব।’ যুবদলের সহ-সভাপতি প্যাস্ট্রিক ডি কস্তাসহ সহ-সভাপতি পর্যায়ের বেশ কয়েকজন নেতা যুবদল থেকে পদত্যাগের চিন্তাভাবনা করছেন। ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সিনিয়র নেতারাও।

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে