নিউজ ডেস্ক: গত ৬ আগস্ট ঘোষিত কমিটি নিয়ে বিএনপিতে এখনো অস্থিরতা চলছে। বঞ্চিত নেতাকর্মীরা লন্ডনে বসবাসরত দলের সিনিয়র ভাইস চেয়ারম্যান তারেক রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছেন। জানাচ্ছেন নালিশ। তবে সবাইকে ধৈর্য ধরতে বলেছেন তারেক। পাশাপাশি কিছু কিছু ক্ষেত্রে কমিটি পুনর্বিন্যাসের আশ্বাসও তিনি দিয়েছেন বলে খবর পাওয়া গেছে।
এদিকে কমিটি গঠনের সঙ্গে যুক্ত নেতাদের বিরুদ্ধে বিস্তর অভিযোগ ওঠায় তাঁদের ওপর চটেছেন তারেক রহমান। এ ছাড়া দু-একটি ঘটনায় চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াও তাঁদের ওপর প্রচণ্ড ক্ষেপেছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার কাউকে কিছু না জানিয়ে কুমিল্লার উপজেলা পর্যায়ের নেতা মোবাশ্বের আলম ভূঁইয়াকে জাতীয় নির্বাহী কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত করার ঘটনায় খালেদা তাঁর বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস এবং দলের সহদপ্তর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপুর ওপর প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়েছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র মতে, মোবাশ্বেরের ঘটনায় শিমুল এবং টিপুর সংশ্লিষ্টতার অভিযোগ তুলেছেন বিএনপির অনেক নেতাকর্মী। এ ঘটনা জানতে পেরে শিমুলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে খালেদা জানতে চান, এত বড় জালিয়াতি সে কিভাবে করতে পারল! শুধু তাই নয়; কমিটি নিয়ে পত্র-পত্রিকায় প্রকাশিত খবর দেখে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহের জন্যও তিনি এক নেতাকে তাৎক্ষণিকভাবে নির্দেশ দেন। পাশাপাশি টিপুকে ডেকে খালেদা জিয়া বলেন, তাঁকে দল থেকে বের করে দেওয়া হবে।
কমিটি গঠনে প্রভাব বিস্তার ছাড়াও বিভিন্ন বিষয়ে কয়েকজনের বিরুদ্ধে এর আগে একাধিক অভিযোগ উঠলেও খালেদা জিয়া তা আমলে নেননি। তবে এই প্রথম কমিটির ব্যাপারে শিমুল-টিপুর সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি খালেদার কাছে ফাঁস হয়ে যায়।
টিপুর বিরুদ্ধে এর আগে আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগ উঠলেও শিমুলের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় তাঁর বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি।
খালেদা জিয়াকে না জানিয়ে কুমিল্লার নাঙ্গলকোট উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক মোবাশ্বের আলমকে নির্বাহী কমিটির ৫৫ নম্বর সদস্য করা হয়। শিমুলের নির্দেশে টিপু ওই নাম অন্তর্ভুক্ত করেন বলে অভিযোগ করা হয়েছে। এর ফলে গত ৬ আগস্ট বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের ঘোষিত ৫০২ সদস্যবিশিষ্ট কমিটি বেড়ে এখন ৫০৩ হয়ে গেছে। বিষয়টি নিয়ে বিএনপিতে তোলপাড় শুরু হয়। অনেক খোঁজ-খবর নেওয়ার পর অভিযোগের আঙুল যায় শিমুল বিশ্বাস ও টিপুর দিকে।
জানতে চাইলে বিএনপির স্থায়ী কমিটির প্রবীণ একজন নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে কালের কণ্ঠকে বলেন, শিমুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ এবং চেয়ারপারসনের তাঁকে ধমক দেওয়ার বিষয়টি সত্য। তিনি বলেন, শিমুলের অনিয়মের অনেক ঘটনা এখন চেয়ারপারসন জানতে পেরেছেন, যা আগে তিনি বিশ্বাস করতেন না। এখন দেখা যাক তাঁর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়।
এদিকে বঞ্চিতরা বিভিন্ন গ্রুপে বিভক্ত হয়ে নেতাদের বাসায় বাসায় ধরনা দিচ্ছেন। পরবর্তী করণীয় বিষয়ে ধারণা নিচ্ছেন তাঁরা। পাশাপাশি সাবেক ছাত্রনেতাদের বড় একটি অংশ নয়াপল্টন কার্যালয়ে মহড়া দিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া গেছে। সূত্র মতে, ওই অংশ কমিটি গঠনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে অভিযোগ ওঠা নেতাদের খুঁজতে নয়াপল্টনে যাচ্ছেন।
সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার সাবেক ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট আনোয়ারা শিখার নেতৃত্বে বঞ্চিত একদল মহিলা ছাত্রনেতা নয়াপল্টনে গিয়ে একজনের খোঁজ করেন। ওই দলে মিলি জাকারিয়া, জিনাত রেহানা, বিথী ও সাথী আক্তারসহ অন্তত ২০ জন ছিলেন। একই সময়ে ছাত্রদলের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আনিসুর রহমান তালুকদার খোকনের নেতৃত্বে বঞ্চিত ছাত্রনেতাদের আরেকটি গ্রুপ নয়াপল্টন কার্যালয়ে মহড়া দেয়। সূত্রের দাবি, খোকনের নেতৃত্বে ছাত্রনেতাদের বড় একটি অংশ সার্বক্ষণিকভাবে কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের দিকে নজর রাখছে।
দলের নতুন কমিটিতে পদবঞ্চিত নেতা আমানউল্লাহ আমান ও নাজিমউদ্দিন আলমের ঘনিষ্ঠ হওয়ায় খোকনকে পদবঞ্চিত করা হয়েছে। গত কয়েক দিনে সাবেক ছাত্র নেতাদের বড় একটি অংশ নাজিমউদ্দিন আলমের বাসায় বৈঠক করে পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেন। যদিও আলম কালের কণ্ঠ’র কাছে দাবি করেন, আসলে ওটি বৈঠক নয়। তিনি বলেন, আমাকে যথাযথ পদ না দেওয়ায় সবাই কষ্ট পেয়েছেন। তাই সহানুভূতি জানাতে আসছেন তাঁরা। কিন্তু আমার ঠিকানা বিএনপি। বিএনপি ছেড়ে আমি কোথাও যাব না—যোগ করেন ডাকসুর এই সাবেক এজিএস।
নয়াপল্টন কার্যালয়ে দল বেঁধে যাওয়ার কারণ জানতে চাইলে ’৯০-এর ছাত্রনেতা অ্যাডভোকেট আনোয়ারা শিখা কালের কণ্ঠকে বলেন, টাকা নিয়ে কমিটি গঠন করে যাঁরা বিএনপিকে ধ্বংস করেছেন, তাঁদের আমরা ছাড়ব না। তিনি বলেন, একজনকে খুঁজতে নয়াপল্টনে গিয়েছিলাম, তবে পাইনি। পাওয়া গেলে কী করতাম জানি না।
আনিসুর রহমান তালুকদার খোকন বলেন, ‘আসলে আমরা মহাসচিবের সঙ্গে দেখা করার জন্য গিয়েছিলাম। তা ছাড়া অন্যায়ের বিরুদ্ধে দলীয় কার্যালয় চাঙ্গা রাখাও তো একটি কাজ।
এর আগে গত ৮ আগস্ট মহানগরী বিএনপি নেতা এস এম জ্বিলানীসহ পদবঞ্চিত বিক্ষুব্ধ বেশ কিছু নেতাকর্মী বিক্ষোভ করে নয়াপল্টন কার্যালয়ে যান। তাঁরাও কমিটি ঘোষণার সঙ্গে সম্পৃক্ত একজন নেতার নাম ধরে গালাগাল করেন।
এদিকে গুলশান কার্যালয়েও প্রতিদিনই কোনো না কোনো পদবঞ্চিত নেতা খালেদা জিয়ার সঙ্গে দেখা করে কমিটির ব্যাপারে ক্ষোভ জানাচ্ছেন। সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার গিয়েছিলেন সাবেক ছাত্রনেতা শামীম আরা সাথী। এর আগে গত চার দিনে কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান মেজর (অব.) হাফিজউদ্দিন আহমেদ, সাবেক এমপি নাজিমউদ্দিন আহমেদ, ইলেন ভুট্টো, মুক্তিযোদ্ধা সাদেক খানসহ অনেকে সেখানে গিয়ে তাঁদের ক্ষোভ জানান। সব মিলিয়ে বিএনপিতে এক ধরনের অস্থিরতা ছড়িয়ে পড়ছে।
দলের স্থায়ী কমিটির প্রবীণ সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের মতে, বিএনপির মতো বড় একটি দলে কমিটি ঘোষণার পর কিছুটা অসন্তোষ থাকা অস্বাভাবিক নয়। কারণ কিছু ক্ষেত্রে প্রত্যাশিত পদ পাননি বলে অনেকের মন খারাপ থাকতেই পারে। তবে পর্যালোচনা করে এগুলো সমাধানের সুযোগ এখনো আছে এবং তা করাও হবে বলে আশা করছি।-কালের কণ্ঠ
১৩ আগস্ট,২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এইচএস/কেএস