নিউজ ডেস্ক : মনে জমা অনেক কথাই। খোলাখুলি বলা দরকার, সময়ে কুলোচ্ছে না। সুযোগ মিলবে গোয়ায় ১৬ অক্টোবর। সেখানে ‘বিমস্টেক’ (দ্য বে অব বেঙ্গল ইনিশিয়েটিভ ফর মাল্টি-সেক্টোরাল টেকনিক্যাল অ্যান্ড ইকনমিক কোঅপারেশন)-এর শীর্ষ সম্মেলনে যোগ দেবেন বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি।
দু’দেশেরই সমস্যা সন্ত্রাস। উন্নয়নের ধারায় রাশ টানতে চাইছে জঙ্গিরা। নাশকতায় নৈরাজ্য সৃষ্টির প্রবণতা। সন্ত্রাসীদের শেকড় ছিঁড়তে ব্যস্ত বাংলাদেশ। তাড়া খেয়ে জঙ্গিরা পশ্চিমবঙ্গ-অাসাম দিয়ে ঢুকছে ভারতে।
বাংলাদেশের তিন দিকে ভারত। আর এক সীমান্তে মায়ানমার। সম্মেলনে মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, তাইল্যান্ডের প্রতিনিধিরাও থাকবেন। অর্থনৈতিক উন্নয়নে পারস্পরিক সমন্বয় বাড়ানই ‘বিমস্টেক’ এর লক্ষ্য। সন্ত্রাসী ছায়ায় উন্নয়ন কীভাবে সম্ভব।
৪ আগস্ট ইসলামাবাদে সার্কের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের বৈঠকে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিং সরাসরি আক্রমণ শানিয়েছেন পাকিস্তানের বিরুদ্ধে। তিনি জানিয়েছেন, সন্ত্রাসে আস্কারা দিয়ে ভারতের শান্তি নষ্ট করছে পাকিস্তান। সেটা বন্ধ না হলে সার্কের কার্যক্রম পথভ্রষ্ট হবে।
বাংলাদেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান আলমও বৈঠকে থাকলে ভালো হত। পাকিস্তানকে কোণঠাসা করতেও বাংলাদেশের হাতে অভিযোগ ভূরিভূরি। বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্ক পলকা সুতোয় ঝুলছে। যেকোনো মুহূর্তে ছিঁড়তে পারে।
২৮ জুলাই দিল্লিতে সন্ত্রাস নিয়ে রাজনাথ-আসাদুজ্জামানের আলোচনার ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে। পশ্চিমবঙ্গে ধৃত জঙ্গি মুসার সঙ্গে ১ জুলাই ঢাকার গুলশনে জঙ্গি হামলার যোগ পাওয়া গেছে।
তার কাছে বাংলাদেশের অনেক জঙ্গি ঘাঁটির হদিস মিলেছে। জেএমবি জঙ্গি মোহাম্মদ সালেহান ১২ জঙ্গি নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ-অসম সীমান্ত পেরিয়ে ভারতে ঢুকেছে বলে মনে করা হচ্ছে। তাদের খোঁজ চলছে।
অভিযুক্ত জঙ্গি মোহাম্মদ সুলেমান উত্তর ভারতে গা ঢাকা দিয়েছে। এনআইএ রিপোর্টে বলা হয়েছে, যেসব জঙ্গি অ্যাকশনে নামছে তাদের বোধবুদ্ধি বেশি নয়। নেপথ্যের পরিচালক মস্তিষ্কেরাই ভয়ঙ্কর। সব হামলার পেছনে অদৃশ্য শক্তি তারাই।
নিজেরা গোপনে থাকে। প্রকাশ্যে এলেও চেনা যায় না। প্রতিষ্ঠিত সামাজিক ব্যক্তিত্বের তকমাটা গায়ে সাঁটা থাকে। উপযুক্ত প্রমাণের অভাবে পার পেয়ে যায়। বাংলাদেশে সেই শয়তানের মাথারা নেক নজরে আছে। আশা করা হচ্ছে, যথার্থ প্রমাণেই তাদের ধরা যাবে। ভারত যেন এ ব্যাপারে তৎপর থাকে। বাংলাদেশের নিরাপত্তা বলয় থেকে বাঁচতে আপাতত ভারতই তাদের ঠিকানা।
বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের অনেকটা অঞ্চলই অরক্ষিত। কাঁটা তারের বেড়া নেই। জমি সমস্যায় কাজটা আটকে। জমি অধিগ্রহণের চেষ্টা চলছে। দু’দেশের প্রাকৃতিক সীমান্তে পাহারা দেয়ায় অসুবিধা। রাতের অন্ধকারে জঙ্গি অনুপ্রবেশের সুযোগ থাকছে।
জঙ্গিরা যাতায়াতে স্থলবন্দর ব্যবহার করে না। সেখানে ধরা পড়ার আশঙ্কা। বৈধ পাশপোর্ট ভিসাও তাদের থাকে না। নদী-জঙ্গলের দুর্গম পথ পেরিয়ে সীমানা টপকায়। জঙ্গিদের অস্ত্রশস্ত্র আমদানির রাস্তাও বদলেছে। আকাশ, জল, স্থল পথে সরাসরি অস্ত্র আসছে না।
অস্ত্র কিনছে অনলাইনে। পৌঁছচ্ছে ডাকে, কুরিয়ারে। ভারি নয়, হালকা অস্ত্র। আকারেও ছোট। এমনভাবে প্যাক করা হচ্ছে স্ক্যানারেও ধরা পড়ছে না। প্রেরক আর গ্রাহক কোড ব্যবহার করে কাজ সারছে। যে ঠিকানায় অস্ত্র যাচ্ছে, অস্ত্র হাতে আসতেই আস্তানা বদল।
সন্ত্রাস নির্মূল করার সঙ্গে সঙ্গে উন্নয়নে নজর দু’দেশের। বাংলাদেশে ভারতের বিনিয়োগ বাড়ানোর দাবি রয়েছে। হাসিনা-মইদ বৈঠকে দ্বিপাক্ষিক অসম্পাদিত চুক্তি দ্রুত সম্পাদন নিয়ে কথা হবে।
বাংলাদেশের আখাউড়া থেকে ত্রিপুরার আগরতলা, ১৫ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণে জমি সমস্যা মিটিয়ে ফেলার ব্যবস্থা হয়েছে, দু’দেশের যোগাযোগ বাড়ানোর পরিকল্পনা বাণিজ্যিক বিস্তারের স্বার্থেই। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখেই কথাবার্তা এগোবে দুই প্রধানমন্ত্রীর। সূত্র : আনন্দবাজার
১৩ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম