রবিবার, ১৪ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০৫:১০

‘দুই সন্তানকে খুন করে মা বলে গায়েবি নির্দেশনা’

‘দুই সন্তানকে খুন করে মা বলে গায়েবি নির্দেশনা’

ঢাকা : রক্তাক্ত লাশ ঘরের ভেতরে রেখে রাতভর উত্তর বাসাবোর বিভিন্ন অলিগলিতে বাসা খুঁজছিলেন মা তানজিনা রহমান।  উত্তর বাসাবোর মসজিদ গলিতে টহল পুলিশের কাছে ছয়তলা ভবনের ঠিকানা জানতে চাইলে আটক করে পুলিশ।  পরে তাকে সবুজবাগ থানায় নিয়ে যাওয়া হয়।

দুই ছেলেকে হত্যাকাণ্ডের কথা স্বীকার করলেও তার কথায় অসঙ্গতি রয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

পরিবারের সদস্যরা জানিয়েছেন, দুপুরে বাসায় ছোটভাই আসায় ভালো খাবার রান্না করেছিলেন তানজিনা।  তার স্বামী, সন্তান ও ছোটভাইসহ সবাই মিলে সে খাবার খায়।  এরপর রাতেই এ নির্মম ঘটনা ঘটে।

শুক্রবার রাতে রাজধানীর উত্তর বাসাবোর ১৫৭/২ নম্বর ছয়তলা ভবনের চিলেকোঠায় দুই ভাই-বোনের গলাকাটা লাশ উদ্ধার করে পুলিশ।  তারা হলো- হুমায়রা বিনতে মাহবুব তাকিয়া (৬) ও মাশরাফি ইবনে মাহবুব আবরার (৭)।

এ ঘটনায় শনিবার ভোরে সবুজবাগ থানায় নিহত শিশুদের বাবা মা তানজিনা রহমানকে একমাত্র আসামি করে মামলা দায়ের করেন।

এ ব্যাপারে সবুজবাগ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আব্দুল কুদ্দুস ফকির বলেন, নিহত দুই শিশুর বাবা মাহবুবুর রহমান এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেছেন।  মামলায় নাম উল্লেখ করা একমাত্র আসামি শিশুদের মা তানজিনা রহমান।  তাকে আদালতে হাজির করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড চাইলে আদালত পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।  

ওসি বলেন, হত্যাকাণ্ডের ঘটনা জানার পরপরই পুরো এলাকায় চেকপোস্ট বসিয়ে দিই।  টহল পুলিশ বৃদ্ধি করে লাশ উদ্ধার করা হয়।  রাতভর আলামত সংগ্রহ, লাশ উদ্ধার ও সুরতহাল প্রতিবেদন করে ময়নাতদন্তের জন্য লাশ ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়।

তিনি বলেন, ঘটনার পর থেকেই শিশুদের মা নিখোঁজ ছিলেন।  আমরা তাকে খুঁজছিলাম।  রাত সাড়ে ৪টা বা ৫টার দিকে সবুজবাগের মসজিদ গলিতে হাঁটাহাঁটি করছিলেন তিনি।  এ সময় টহল পুলিশ তাকে জেরা করে।  তিনি কোথায় যাবেন জানতে চাইলে তানজিনা বলেন, ‘বাসাবোর সাততলা (চিলেকোঠাসহ) ভবন খুঁজতেছি।’

এসময় পুলিশের সন্দেহ হয়।  পুলিশও তাকে বলে, আমরাও সাততলার মানুষ খুঁজতেছি।  এরপর তাকে আটক করে থানায় নিয়ে আসা হয়।

পুলিশ কর্মকর্তারা বলেছেন, সকাল থেকে তানজিনা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলছিলেন।  তার ভেতরে কোনো অনুতাপ নেই।  সন্তানদের হত্যার বিষয়ে তার কাছে পুলিশ বারবার জানতে চাইলে তিনি জিন, গায়েবি নির্দেশনার কথা বলছিলেন।  

শিশুদের বাবা মাহবুব রহমান মামলার এজাহারে উল্লেখ করেছেন, ২০০৮ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি তানজিনা রহমানের সঙ্গে বিয়ে হয়।  বিয়ের এক বছর পর আমার শ্বশুরবাড়ি ১৭ গিলগাঁও বাগিচায় থেকে আসছিলাম।  এ বছরের ১ জানুয়ারি থেকে উত্তর বাসাবোর ১৫৭/২-এর ছয়তলার চিলেকোঠা ভাড়া নিয়ে বসবাস শুরু করি।  

তিনি বলেন, আমার এক ছেলে মাশরাফি ইবনে মাহবুব আবরার (৭) ও মেয়ে হুমায়রা বিনতে মাহবুব তাকিয়া (৬)।  আমার ছেলে খিলগাঁও বাগিচার হাফেজিয়া মাদরাসার নুরানী শাখার ছাত্র।  মেয়ে দীপ শিখা কিন্ডারগার্টেনের কেজি শ্রেণির ছাত্রী।

১২ আগস্ট শুক্রবার আমার ছোট শ্যালক আহসানুল হক মিঠু আমাদের বাসায় আসে।  সে মগবাজারের একটি আবাসিক স্কুলে থেকে পড়ালেখা করে।  দুপুরে বাসায় ভালো খাবার রান্না করা হয়।  সবাইকে নিয়ে খাবার খেয়ে সন্ধ্যার দিকে শ্যালককে নিয়ে মগবাজারে যাই।  তখন আমার স্ত্রী ও দুই সন্তান বাসায় ছিল।

আমি আমার শ্যালককে মগবাজারে পৌঁছে দিয়ে উত্তর বাসাবোর ঝিলপাড় মসজিদে এশার নামাজ পড়ি।  নামাজ শেষে রাত সোয়া ৯টার দিকে ছোট ভাই মোস্তাফিজুর রহমান আমার মোবাইল ফোনে ফোন করে।  

সে জানায়, তাকে বাড়ির মালিক ফোন করে জানিয়েছেন, আমার বাসার সামনে রক্ত দেখা যাচ্ছে। আমি দ্রুত বাসায় এসে বাড়িওয়ালাসহ বাসার সামনে যাই।  এসময় দরজায় হ্যাজবল লাগানো ছিল। দরজা খুলে ভেতরে প্রবেশ করা মাত্র প্রথমে রুমে আমার মেয়ে তাকিয়ার গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ দেখতে পাই।  দ্বিতীয় রুমে আমার ছেলের গলাকাটা রক্তাক্ত লাশ দেখতে পাই।

এ সময় আমি আমার স্ত্রীকে চিৎকার করে ডাকতে থাকি। তাকে কোথাও পাই না। এরপর মোবাইল ফোনে বাড়িওয়ালা পুলিশকে খবর দেয়। পুলিশ এসে লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশের ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।

আমার স্ত্রী তানজিনা ১২ আগস্ট সন্ধ্যা ৬টা থেকে রাত সোয়া ৯টার যেকোনো এক সময়ে চাপাতি দিয়ে গলাকেটে আমার দুই সন্তানকে হত্যা করেছে। এ বিষয়ে আইনগত গ্রহণ করা একান্ত প্রয়োজন।’

বাড়িওয়ালা আতিকুর রহমান বলেন, কখনো মনে হয়নি এ ধরনের ঘটনা তানজিনা ঘটাতে পারে। তাকে দেখলে এরকম মনে হয় না।  কেউ বিশ্বাসও করবেন না।  

নিহত শিশুদের নানার বাড়িখিলগাঁওয়ের বাগিচা এলাকায়।  তাদের নানা বেঁচে নেই।  নানি, মামা ও খালারা সেখানে থাকেন।  তাদের বাড়ি কুমিল্লার দেবীদ্বারে।

প্রতিবেশীরা বলেন, আমরা পাশাপাশি থাকি।  কখনো তাকে মানসিক ভারসাম্যহীন মনে হয়নি।  কেন যে এমন করলো বুঝতে পারছি না!
১৩ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে