ঢাকা : রাজধানীর বাসাবোতে দুই সন্তানকে গলা কেটে হত্যার কথা স্বীকার করেছেন মা তানজিনা রহমান। গতকাল ভোরে সবুজবাগ এলাকা থেকে গ্রেফতারের পর পুলিশের কাছে এ কথা স্বীকার করেন তিনি।
সবুজবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ মো. আব্দুল কুদ্দুস ফকির রোববার গণমাধ্যমকে বলেন, তিনি (তানজিন রহমান) প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে বলেছেন, জিন তাকে সন্তাদের হত্যা করার নির্দেশ দেয়। তার কথা শুনে তিনি তাদের হত্যা করেন। তিনি দাবি করছেন, তার কিছু হবে না, জিন তাকে ছাড়িয়ে নেবে।
দুই শিশু হত্যার ঘটনায় গ্রেপ্তারকৃত মা তানজিন রহমান বড় ধরনের মানসিক রোগী বলে দাবি করছেন তার স্বজন ও প্রতিবেশীরা। তাদের বর্ণনা অনুযায়ী, অনেকটা অস্বাভাবিক চলাফেরা ছিল তার। কারো সঙ্গে মিশতেন না, কথা বলতেন না। তবে নিয়মিত মানসিক রোগের চিকিৎসা নিতেন।
বাড়ির ছয়তলার ভাড়াটিয়া আশরাফ হোসাইন বলেন, তানজীনকে বাসার কেউ চিনতো না। কারো সঙ্গে কথা বলতে দেখিনি। সবাই বলেন তিনি খুব শান্ত প্রকৃতির।
শনিবার ভোর রাতে হুমায়রা বিনতে মাহবুব তাকিয়া (৬) ও মাশরাফি ইবনে মাহবুব আবরারের (৭) গলা কাটা লাশ উদ্ধার করে সবুজবাগ থানা পুলিশ। শনিবার ভোরে তাদের মা তানজীন রহমানকে (৩০) বাসাবো থেকে আটক করা হয়।
গতকাল নিহতদের বাবা মাহবুবুর রহমান থানায় বাদি হয়ে হত্যা মামলা করেছেন। মামলার একমাত্র আসামি তানজিনা রহমান। এ দিকে দুই সন্তানকে হত্যার কারণ জানতে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গতকাল ৫ দিনের রিমান্ডে নেয়া হয়েছে তানজিনাকে।
ময়নাতদন্তকারী চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, ধারালো ও ভারী অস্ত্রের আঘাতে মাশরাফি বিন মাহবুব আবরার (৭) ও হুমায়রা বিনতে মাহবুব তাকিয়া (৬)-এর মৃত্যু হয়েছে। গতকাল দুপুরে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল মর্গে ময়নাতদন্ত শেষে লাশ দুটো স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।
ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ফরেনসিক বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা: সোহেল মাহমুদ সাংবাদিকদের বলেন, ভারী ও ধারালো অস্ত্রের আঘাতেই শিশু দুটির মৃত্যু হয়েছে। তাদের খুব নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়েছে। ধারালো অস্ত্র দিয়ে যেভাবে গল কাটা হয়েছে তাতে ঘটনাস্থলেই তাদের মৃত্যু হয়।
তিনি জানান, হুমায়রার গলা খুব নৃশংসভাবে কাটা হয়েছে। তার মাথা কোনোরকম শরীরের সাথে লেগে ছিল। ঘাড়ের পেছনের চামড়ার সঙ্গে হালকাভাবে মাথাটি লাগানো। আর একটু হলে পুরো মাথাটি বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত।
অপরদিকে মাশরাফির ঘাড়ের ডান পাশে ধারালো অস্ত্রের দু’টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। তার স্পাইনালকডসহ ঘাড়ের বেশ কিছু অংশ কেটে গেছে।
শিশুদের ফুফু লায়লা নূর বলেন, আট বছর আগে পারিবারিকভাবে তানজিনার সঙ্গে মাহবুবের বিয়ে হয়। বিয়ের আগে থেকেই তিনি মানসিক ভারসাম্যহীন ছিলেন।
১৪ আগস্ট,২০১৬/এমটিনিউজ২৪/এমআর/এসএম