নিউজ ডেস্ক : সাবেক সেনাবাহিনী প্রধান ও সেক্টর কমান্ডার্স ফোরামের চেয়ারম্যান কে এম সফিউল্লাহ বলেছেন, ওই সময় আমি বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করতে পারিনি। আমার হাত পা বাঁধা ছিল। গতকাল জাতীয় প্রেস ক্লাবের ভিআইপি লাউঞ্জে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এমন মন্তব্য করেন তিনি। ‘বঙ্গবন্ধু মুক্তিযুদ্ধ ও বাংলাদেশ’ শীর্ষক এ আলোচনা সভার আয়োজন করে সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।
সভায় আমন্ত্রিত বক্তারা বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে স্মৃতিচারণ করে পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্টে তাকে সপরিবারে হত্যার দেশি-বিদেশি কুশীলবদের খুঁজে বের করার দাবি জানান। পঁচাত্তরের ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যাযাকাণ্ডের সময় সেনা প্রধানের দায়িত্বে ছিলেন কে এম সফিউল্লাহ। পরে তাকে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।
গতকাল ওই সময়ের স্মৃতিচারণা করে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর মৃত্যু দিবস আমার জন্য কষ্টকর দিন। ওই দিন বঙ্গবন্ধুকে আমি রক্ষা করতে পারিনি। এই অর্থে যে তখন চারিদিক থেকে আমার হাত পা বাঁধা ছিল। এই যন্ত্রণা আমি এখনও অনুভব করি। তিনি বলেন, ওই দিন আমাকে অস্ত্রের মাধ্যমে রেডিও স্টেশনে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। মেজর ডালিম আমার মুখের ওপর অস্ত্র তাক করেছিল। আমি তাকে বলেছিলাম, যে অস্ত্র তুমি তাক করেছ সেই অস্ত্র আমিও ব্যবহার করেছি। তখন বাধ্য হয়ে মোশতাক সরকারের প্রতি সমর্থন জানাতে হয়েছিল বলে উল্লেখ করেন কে এম সফিউল্লাহ।
এ সময় কৃষক লীগ নেতা আবদুল হাই কানু উঠে দাঁড়িয়ে কে এম সফিউল্লাহর উদ্দেশ্যে বলেন, স্যার, যখন আপনার কাছ থেকে স্বাক্ষর নিচ্ছিল, তখন আপনি মৃত্যুবরণ করেননি কেন? বসে বক্তব্য দিতে থাকা কে এম সফিউল্লাহ তাকে উদ্দেশ্য করে বলেন, আমাদেরকে বাধ্য করা হয়েছিল। আপনি (কানু) তখন কী করেছেন? তখন আবদুল হাই কানু বলেন, আমি তখন কর্মী ছিলাম। ওই ঘটনার প্রতিবাদ করেছি, জেল খেটেছি। এ পর্যায়ে অনুষ্ঠানস্থলে কিছুটা হৈ চৈ শুরু হলে উপস্থিত মন্ত্রী ও অন্য আমন্ত্রিত অতিথিদের হস্তক্ষেপে পরিস্থিতি শান্ত হয়।
আলোচনায় অংশ নিয়ে খাদ্যমন্ত্রী কামরুল ইসলাম বলেন, একাত্তরের ঘাতকরাই ফারুক, রশীদ, ডালিমকে ব্যবহার করে বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে হত্যা করেছিল। সেনাবাহিনীর বহিষ্কৃত কর্মকর্তারা কিভাবে দেশকে নেতৃত্ব দিয়েছিল আমি জানি না। কিভাবে সবাই তখন ওই খুনিদের কাছে আত্মসমর্পণ করেছে সেই উত্তর আমরা দিতে পারবো না।
সাবেক প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানকে বঙ্গবন্ধু হত্যার পরিকল্পনাকারী উল্লেখ করে তিনি বলেন, তিনি যে পরিকল্পনাকারী ছিলেন সেটি সাক্ষ্য প্রমাণে এসেছে। খুনিদের চাকরি দেয়া হয়েছে। তাদের প্রমোশন দেয়া হয়েছে। মুক্তিযুদ্ধের সকল চেতনা তিনি মুছে ফেলতে চেয়েছিলেন। একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা কখনও এমনটি করবে না। কামরুল ইসলাম বলেন, একাত্তর, পঁচাত্তর, ২১শে আগস্টের ঘাতকরাই আজকের জঙ্গি গোষ্ঠী। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে এদের রুখে দাঁড়াতে হবে।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রী আ ক ম মোজাম্মেল হক বলেন, ১৫ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যা কেবল কয়েকজনের ষড়যন্ত্র ছিল না। এটি ছিল আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র। ওই ঘটনায় পর্দার আড়ালে যারা ছিল, তাদের মুখোশ উন্মোচিত করা উচিত।
উপস্থিত ছিলেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান ৮ নম্বর সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার আবু ওসমান চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল হান্নান খান, বঙ্গবন্ধু হত্যা মামলার সাক্ষী ও ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব মেজর (অব.) জিয়া উদ্দিন আহমেদ, সাবেক রাষ্ট্রদূত ওয়ালি উর রহমান, ফোরামের সহ-সভাপতি ও তৎকালীন টুঙ্গিপাড়ার পুলিশ কর্মকর্তা এডিআইজি নুরুল আলম, ফোরামের যুগ্ম মহাসচিব আবুল কালাম আজাদ পাটোয়ারী প্রমুখ। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের মহাসচিব হারুন হাবীব।
উল্লেখ্য, ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট কিছু বিপথগামী সেনাসদস্য বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারে হত্যা করে। ওই সময় সেনাপ্রধান ছিলেন কে এম সফিউল্লাহ।
১৫ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস