সিদ্ধার্থ সিধু : ধানমন্ডির ৩২ নম্বর। ঘাতকের বুলেট। সিঁড়িতে বিদীর্ণ জাতির পিতার দেহ। ছোট্ট রাসেল। রেহাই মিলেনি তারও। বঙ্গবন্ধুর প্রিয়তমা স্ত্রী, সন্তান, পুত্রবধূ, ভাই, স্বজন কাউকেই বাঁচতে দেয়নি ঘাতকরা। দিনটি ছিল ১৫ আগস্ট, ১৯৭৫। পৃথিবীর ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কময় একটি দিন।
কর্ম, সাহসীকতা ও ব্যবহারে জীবনকে জয় করেছিলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। এমনকি মৃত্যুকেও। প্রিয় অনুসারীকে তিনি ভালোবাসতেন আবার শত্রুর প্রতিও প্রতিশোধ নেননি। ক্ষমা তাকে মহত্ত্ব দিয়েছিলো। শত্রুদের প্রতিও ক্ষমাশীল ছিলেন বঙ্গবন্ধু। রাজনীতিতে যারা তার তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বী ছিল অনায়াসে তাদের বাড়ির আঙ্গিনায় পা রেখেছেন।
বঙ্গবন্ধুর দেহ যেদিন সমাহিত হলো সেদিন বাংলাদেশের রাজনীতি থেকে সহনশীলতা, ক্ষমার মতো বিষয়গুলোও হারিয়ে গেলো। বিদায় নিলো ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্রের মতো রাষ্ট্রের মৌলিক কাঠামোগুলোও।
বারবার বঙ্গবন্ধুকে সতর্ক করা হয়েছিলো। এখন জানা যাচ্ছে, তার কোনো কোনো শত্রুও তাকে সতর্ক করেছিলো। কিন্তু অকুতোভয় বঙ্গবন্ধু সেইসব আমলে নেননি। তিনি কোনোদিন বিশ্বাস করেননি কোনো বাঙালি তাকে হত্যা করতে পারে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ভাবেননি তার স্বাধীন বাংলার আলো-বাতাসে কোনোদিন বেড়ে উঠতে পারে তার ঘাতকেরা।
আওয়ামী লীগের রাজনীতির এক কড়া সমালোচক ছিলেন প্রয়াত লেখক আহমদ ছফা। সেই আহমদ ছফাও বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে লিখে গেছেন- ‘দিবসের উজ্জ্বল সূর্যালোকে যে বস্তু চিকচিক করে জ্বলে তা হলো মানুষটির সাহস। আর জ্যোৎস্নারাতে রুপোলি কিরণ ধারায় মায়ের স্নেহের মতো যে বস্তু আমাদের অন্তরে শান্তি ও নিশ্চয়তার বোধ জাগিয়ে তোলে তা হলো তার ভালোবাসা। জানো খোকা তার নাম? শেখ মুজিবুর রহমান।’
হ্যাঁ আজ তিনি স্বশরীরে নেই, কিন্তু তিনি আছেন বাংলার ঘরে ঘরে, প্রতিটি বাঙালীর হৃদয়ে। শতচেষ্টা করেও সেদিন বাংলাদেশের ইতিহাসের মোড় ঘুরাতে পারিনী ঘাতকরা। মহানায়কের মৃত্যু নেই- ইতিহাসের সেই কঠিন সত্য প্রতিষ্ঠিত হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে কেন্দ্র করে। বাংলাদেশের ইতিহাসে তিনি ফিরে আসেন প্রবল বিক্রমে। এমনকি জীবিত বঙ্গবন্ধুর চেয়েও প্রভাবশালী রূপে। আর এখানেই মৃত্যুঞ্জয়ী বঙ্গবন্ধুর কাছে হেরে যান চক্রান্তকারীরা। জয়ী হয় বাংলাদেশ।
১৫ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস