নিউজ ডেস্ক : মোবাইল সিমকার্ড নিবন্ধনে অনড় অবস্থানে রয়েছে ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয়। এরই অংশ হিসেবে ভেরিফিকেশন বা যাচাইয়ের সুযোগ রাখা হচ্ছে। গ্রাহকরা কিভাবে এটা করবেন তার নির্দেশনা দেয়া হবে আগামী রোববার। বিভিন্ন পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিয়ে মন্ত্রণালয় জনগণকে অবহিত করবে। মূলত ওইদিন থেকেই শুরু হচ্ছে সিম নিবন্ধন প্রক্রিয়া। সিম নিবন্ধন নিয়ে এটাই চূড়ান্ত প্রক্রিয়া বলেও জানানো হয়েছে। গতকাল সচিবালয়ে টেলিকম রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশের (টিআরএনবি) সঙ্গে বৈঠকে এসব তথ্য জানান ডাক ও টেলিযোগাযোগ প্রতিমন্ত্রী তারানা হালিম।
তিনি বলেন, যারা সঠিক প্রক্রিয়ায় সিমকার্ড নিবন্ধন করেছেন, তারা ভেরিফিকেশন করবেন। সেটা আমরা নিবন্ধন রেকর্ডের সঙ্গে মিলিয়ে নেবো। আর যদি দেখি সঠিকভাবে নিবন্ধন করা ছিল তাহলে নতুনভাবে নিবন্ধনের প্রয়োজন পড়বে না।
সঠিকভাবে যাদের নিবন্ধন করা হয়নি তাদের পুনঃনিবন্ধন করতে হবে। সঠিকভাবে নিবন্ধন না থাকলে তিনমাস পর সিমগুলো সাময়িক স্থগিত রাখা হবে বলেও জানান প্রতিমন্ত্রী। তবে পরে নিবন্ধনের মাধ্যমে আবারও তা চালু করা যাবে। প্রাথমিকভাবে রোববার থেকেই পুনঃনিবন্ধন ও ভেরিফিকেশন শুরু করা হবে জানিয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, যেহেতু এটা একটা চলমান প্রক্রিয়া, প্রাথমিকভাবে তা চলবে আগামী তিন মাস। ক’দিন ধরে সিমকার্ড নিবন্ধন নিয়ে নানা ধরনের বিভ্রান্তির মধ্যেই গতকাল মন্ত্রী তার এ অবস্থানের কথা তুলে ধরেন।
এ সময় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশনের (বিটিআরসি) চেয়ারম্যান সুনীল কান্তি বোস। তিনিও মন্ত্রীর কথায় সমর্থন জানান। বিটিআরসি চেয়ারম্যান বলেন, এনআইডির সঙ্গে চুক্তি হলে অনলাইনে নিবন্ধন করা যাবে। অনলাইনে করার জন্য আমরা প্রস্তুত। বিটিআরসি’র কাছে এনআইডি’র একটা লুপ থাকবে। আমরা সিম বিক্রি বন্ধ করতে চাই না, জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে সিম বরাবরের মতোই কেনা যাবে। নিবন্ধন ছাড়া সিম বা অবৈধ সিম শনাক্তে অপারেটররা ইতিমধ্যে আধুনিক প্রযুক্তি নিয়ে এসেছে বলেও জানান বিটিআরসি চেয়ারম্যান।
তারানা হালিম বলেন যেসব রিটেইলার এবং ডিস্ট্রিবিউটররা আছেন, তাদের সঠিক পরিসংখ্যান, নাম-ঠিকানা কোন সময়ই পাই না। এ কারণে অনিয়ম ঘটে থাকে। আমরা মোবাইল অপারেটরদের বলেছি, সিম বিক্রিতে যারা রিটেইলার-ডিস্ট্রিবিউটর আছেন তাদেরও ভেরিফাইড হতে হবে। তাদের একটা ডাটাবেইজ তৈরি করব। ভেরিফিকেশন এবং পুনঃনিবন্ধনের সাড়া পাওয়ার ওপর নির্ভর করবে সিমগুলো বন্ধ করে দেয়ার বিষয়। প্রতিমন্ত্রী বলেন, সঠিকভাবে হলে সময় বৃদ্ধি করতে পারি।
অথবা যদি দেখি, সঠিকভাবে হচ্ছে না তখন বন্ধ করে দেবো। সিমকার্ডের নিবন্ধনের জন্য জাতীয় পরিচয়পত্র (এনআইডি) সার্ভারের সঙ্গে এক সপ্তাহের মধ্যে চুক্তি করা হবে বলেও জানান তারানা হালিম। সিমকার্ড পুনঃনিবন্ধন বিষয়ে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কিছু কিছু সাধারণ মানুষ হয়রানির শিকার হচ্ছেন। অবৈধ সিমের মাধ্যমে চাঁদাবাজি, জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড হয়। আমরা তাদের তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে পাঠাতে চাই।
এদিকে সরকারি মোবাইল ফোন অপারেটরদের সঙ্গে প্রতিযোগিতার উপযুক্ত করে রাষ্ট্রায়ত্ত মোবাইল ফোন অপারেটরকে গড়ে তোলা হবে বলেও জানান তারানা হালিম। তিনি বলেন, টেলিটককে বাজারে প্রতিযোগিতার উপযুক্ত করে গড়ে তোলা আমাদের অন্যতম চ্যালেঞ্জ। সেজন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। আমরা চাই টেলিটক নিজের পায়ে দাঁড়াক। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে যেন প্রতিযোগিতায় উপযুক্ত হতে পারে।
তিনি বলেন, আমরা বেসরকারি খাতকে অবশ্যই চাই। তারা বৈধ সুবিধা নিয়ে বৈধভাবে কাজ করবে। কারণ, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে আমাদের বেসরকারি খাতকেও প্রয়োজন। কিন্তু বৈধভাবে বৈধ সেবা দিয়ে কাজ করে যাবে। এ জন্য আমরা একটা লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে চাই, যাতে টেলিটক স্বাবলম্বী প্রতিষ্ঠান হিসেবে টিকে থাকতে পারে। অনুষ্ঠানে টিআরএনবি’র সভাপতি রাশেদ মেহেদি, সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ জাহিদুল ইসলামসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।
বিটিআরসির ৭২৫ কোটি টাকা নিয়ে পরিকল্পনা
এদিকে বিটিআরসির ফান্ডে অলস পড়ে থাকা ৭২৫ কোটি টাকার ব্যবহার নিয়ে পরিকল্পনা করছে মন্ত্রণালয়। এ টাকা দিয়ে বৃদ্ধনিবাসে ইন্টারনেট সংযোগ দিয়ে বিনোদন ও গবেষণার সুযোগ দেয়ার পরিকল্পনার কথা জানান প্রতিমন্ত্রী। নীতিমালা অনুযায়ী, টেলিযোগাযোগ সমপ্রসারণ ও উন্নয়ন খাতে এ টাকা ব্যয় করা যাবে। মন্ত্রী বলেন, এ অলস টাকায় ওয়াইফাই হটস্পট, দুর্গম এলাকায় ইন্টারনেট এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগে টেলিযোগাযোগ সেবায় ব্যয় করা যেতে পারে।
তিনি বলেন, দুর্গম এলাকা যেমন- চা বাগান এলাকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান কম, হাওর এলাকা, বন্যাদুর্গত এলাকায় পানি উঠে যায়, সে সমস্ত জায়গায় ‘কম্পিউটার গ্রাম’ বা ‘কম্পিউটার হাট’ করবো। সেখানে কম্পিউটার থাকবে, কানেকটিভিটি থাকবে, সেখানকার গ্রামবাসীদের বিনামূল্যে প্রশিক্ষণ দেবো। এটা একটা স্কুলের মতো হবে। পরবর্তীতে যেন বাচ্চারা কম্পিউটার জ্ঞান নিয়ে বড় হয়।
তিনি জানান, বৃদ্ধনিবাসে তারা সময় কাটান, তাতে তাদের সন্তানদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেন না। অত্যন্ত অলস-নিঃসঙ্গ সময় কাটান। এ বৃদ্ধনিবাসগুলোতে যদি কম্পিউটার নেটওয়ার্ক দেই তাহলে তাদের বিনোদনের সুযোগ হবে এবং তারা স্ট্যাডি করতে পারবেন।
তিনি বলেন, বিভিন্ন জায়গায় ওয়াইফাই হটস্পট তৈরি করতে পারি কি-না, এ বিষয়টাও চিন্তা করা হচ্ছে। ভূমিধসের আগাম বার্তার যে যন্ত্রপাতি, তার স্বত্ব কিনে নিতে পারি কি-না, জনগণের করের টাকা এমনভাবে ব্যবহার করতে হবে। কর্মপরিকল্পনা নিয়ে জেলায় জেলায় তরুণদের গবেষণার কাজে ব্যবহার, টেলিযোগাযোগ খাতে গবেষণা কতোটুকু এবং তা কতোটুকু কার্যকর তাতে বিনিয়োগ করতে পারি কিনা- তাও চিন্তা করা হচ্ছে।
বিভিন্ন প্রকল্পের স্বচ্ছতার পাশাপাশি যেন ধীরগতি না থাকে তার জন্য সময় নির্ধারণ করে তা বাস্তবায়নের ওপরও জোর দেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, মন্ত্রণালয় সচল থাকলে সকলে সচল হয়। ব্যুরোক্রেসিকে দ্রুতগতি করার আলামত দেখতে পাচ্ছেন মনে হয়। অনুষ্ঠানে বিটিআরসি’র চেয়ারম্যান তহবিলের টাকা কোন কোন জায়গায় ব্যবহার করা যায় তা আলোচনা করে ঠিক করা হবে বলে জানান। তিনি বলেন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা ভূমিকম্পের সময় স্যাটেলাইট ফোন দিয়ে দুর্গত এলাকায় যেতে পারি। এ জন্য স্যাটেলাইট ফোনের কাজে এ টাকা লাগাতে পারি।
১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে