সোমবার, ২২ আগস্ট, ২০১৬, ০৪:৫৭:২৩

গোপনে চলছে জামায়াতের কমিটি গঠন : যে কোন দিন ঘোষণা

গোপনে চলছে জামায়াতের কমিটি গঠন : যে কোন দিন ঘোষণা

ছলিম উল্লাহ মেজবাহ : অনেকদিন পর জামায়াতের কমিটি গঠনের প্রক্রিয়ার কাজ চলছে গোপনে। যে কোনো দিন ঘোষণা আসতে পারে শীর্ষ নেতাদের নাম। কাদেরকে নিয়ে গঠিত হচ্ছে দলটির সঠিক নেতৃত্ব তা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে নানা হিসাব-নিকাশ। তবে জামায়াতের কমিটি গঠন প্রক্রিয়ার বিষয়টি কয়েকটি গোয়েন্দা সংস্থার নজরে এসেছে।

এমন তথ্য জানিয়েছেন গোয়েন্দা সংস্থার এক প্রতিনিধি। নাম না প্রকাশ করার শর্তে গোয়েন্দা সংস্থার এ সদস্য জানান, তাদের নির্ভরযোগ্য সূত্রগুলো জানিয়েছে জামায়াতে ইসলামী নতুন নেতাদের নাম শিগগিরই ঘোষণা করতে পারে।

এদিকে কমিটি গঠনের ব্যাপারে জামায়াতের কোনো নেতা সরাসরি স্বীকার না করলেও গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে নেতাকর্মীদের মধ্যে। সেটিও অস্পষ্ট। শুক্রবার ঢাকা মহানগর জামায়াতের একাধিক দায়িত্বশীল নেতার সঙ্গে কমিটি গঠনের বিষয় জানতে চাওয়া হলে তারা বলেন, এ প্রক্রিয়া তো অনেক আগ থেকেই চলছে, নতুন কিছুই নয়। নাম গোপন রাখার শর্তে তারা বলেন, সময় সুযোগ মতো নেতাদের নাম প্রকাশ করা হবে।

অপরদিকে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ নেই বা ১৯৬০ সালের পর যাদের জন্ম হয়েছে তাদের নিয়ে এ কমিটি গঠিত হবে বলে জানিয়েছেন জামায়াতের এক কেন্দ্রীয় নেতা। তিনি বলেন, সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রেখে এ কমিটিতে স্থান দেয়া হবে সাংগঠনিক ও নেতৃত্বে চালিয়ে যাবার মতো যোগ্য ব্যক্তিদের। তিনি বলেন, যাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকবে না ৭১ সালের ভূমিকা নিয়ে।

অন্যদিকে একাধিক সূত্র জানিয়েছে, জামায়াত নিষিদ্ধ হচ্ছে না, জামায়াতকে কলঙ্কমুক্ত করতে বিভিন্ন মহলের চাপের পরিপ্রেক্ষিতে ৭১ সালে পাকিস্তানের পক্ষে শান্তিবাহিনী ও আলবদর বাহিনীর সঙ্গে যারা যুক্ত ছিলেন তাদের বাদ দেয়া হচ্ছে। মতিঝিল জোনের জামায়াতের এক নেতা বলেন, যাদের বিরুদ্ধে এখন পর্যন্ত যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে মামলা হয়নি এমন ব্যক্তিদের কমিটিতে রাখা হচ্ছে। এছাড়া আগামীতে মামলা হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে এমন চিন্তাধারা থেকেও অনেককে কমিটিতে রাখা হচ্ছে না। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এই নেতা বলেন, নতুন কমিটিতে বিতর্কিত ব্যক্তিদের বাদ দিয়ে ছাত্রশিবিরের সাবেক আইকনদের নিয়ে গঠিত হবে জামায়াতের কমিটি।

জামায়াত সূত্র জানায়, যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা নেই এমন দুই ব্যক্তিকে জামায়াতের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল পদে নিয়োগ দিতে যাচ্ছেন দলটির নেতারা। তারা থাকবেন সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ আসবে না কোনো মহল থেকে। তবে জামায়াতের সাংগঠনিক কার্যক্রম সব সময় পরিচালিত হয়ে আসছে নির্বাচনের মাধ্যমে। দলটির বর্তমান নাজুক অবস্থানের কারণেই অনেকে নির্বাচনের পক্ষে না গিয়ে মতামতের ভিত্তিতে দলের আমির ও সেক্রেটারি পদে নিয়োগ দেয়ার জন্য পরামর্শ দেন। সেই পরামর্শের ভিত্তিতে দলের আমির ও সেক্রেটারি জেনারেল নির্বাচিত করার প্রক্রিয়া চালাচ্ছে জামায়াত।

এদিকে এ প্রক্রিয়ার মধ্যে আমির পদে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদ, নায়েবে আমির পদে সাবেক এমপি মুজিবুর রহমান ও সেক্রেটারি জেনারেল পদে ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল ডা. শফিকুর রহমান, ছাত্র শিবিরের সাবেক কেন্দ্রীয় সভাপতি আব্দুল্লাহ মুহাম্মদ তাহেরকে সিনিয়র সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল ও হামিদুর রহমান আজাদের নাম সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল পদের তালিকায় রয়েছে। দলটির একাধিক নেতা এ তথ্য জানিয়ে বলেন, তাদের আগামী নেতৃত্বের জন্য চূড়ান্ত ধরতে পারেন।

অন্যদিকে তৃণমূল থেকে রাজনীতি শুরু করে নিজের যোগ্যতার পরিচয় দিয়ে দুঃসময়ে জামায়াতের শীর্ষ ভারপ্রাপ্ত আমির হিসেবে দায়িত্ব পালন করে যাচ্ছেন মকবুল আহমাদ। তিনি ফেনী জেলা থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় রাজনীতিতে আসা মকবুল আহমাদের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতার অভিযোগের কথা শোনা গেলেও মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলা এখন পর্যন্ত নেই। শুধু তার বিরুদ্ধে রয়েছে নাশকতা ও সহিংসতার অভিযোগে অনেক মামলা। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকেই আত্মগোপনে রয়েছেন মকবুল আহমাদ। নেতা-কর্মীরা ধারণা করছেন, মকবুল আহমাদই হচ্ছেন আমির। নির্বাচিত হলে ছয় বছরের ভারপ্রাপ্ত আমির মকবুল আহমাদই হবেন স্বাধীনতার পর জামায়াতের তৃতীয় আমির।

রাজশাহীর সাবেক এমপি মুজিবুর রহমান ও সিলেটের নেতা শফিকুর রহমান এসব মামলায় দীর্ঘদিন হাজতবাস করেছেন। তারা জামিনে রয়েছেন। কুমিল্লার ড. আব্দুল্লাহ মুহাম্মাদ তাহেরও জামিন নিয়ে পলাতক আছেন। কক্সবাজার জেলার সাবেক এমপি হামিদুর রহমান আজাদও পলাতক। তাদের বিরুদ্ধে নেই কোনো যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ।

২০১০ সালে যুদ্ধাপরাধের বিচার শুরুর পর থেকেই কোণঠাসা অবস্থায় রয়েছে জামায়াত। বিচার ঠেকাতে হরতালে সহিংসতার মামলায় কেন্দ্র থেকে তৃণমূল পর্যায়ের প্রায় সব নেতা হয় কারাগারে, নয়তো আত্মগোপনে। ২০১১ সালের সেপ্টেম্বর থেকে নেই প্রকাশ্যে কর্মসূচি। প্রতিকূল পরিস্থিতির কারণে সাত বছর সম্মেলন করতে পারেনি জামায়াত। এ অবস্থায় যুদ্ধাপরাধের কলঙ্ক মুছে ফেলতে চাইছে জামায়াত। তাই পুরোদমে ক্লিন ইমেজের ব্যক্তিদের নিয়ে নতুন আঙ্গিকে জামায়াতকে পরিপূর্ণ রাজনৈতিক দল হিসেবে টিকে থাকার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা অব্যাহত রাখছেন দলটির নেতারা।

এর আগে স্বাধীনতার পর নিষিদ্ধ হয় মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতা করা জামায়াত। এ সময় মাওলানা আবদুর রহিম দলের ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালে রক্তাক্ত পথে ক্ষমতার পটপরিবর্তন হলে জিয়াউর রহমান ১৯৭৭ সালে জামায়াতকে প্রকাশ্যে রাজনীতির সুযোগ দেন। ১৯৭৮ সালে দলের আমির গোলাম আযম দেশে ফেরেন। বাংলাদেশের নাগরিকত্ব না থাকায় প্রকাশ্যে আমিরের দায়িত্ব নিতে পারেননি গোলাম আযম। তবে তিনিই ছিলেন মূল নেতা। এ সময় ভারপ্রাপ্ত আমিরের দায়িত্ব পালন করেন আব্বাস আলী খান। ১৯৯৪ সালে নাগরিকত্ব পাওয়ার পর গোলাম আযম আনুষ্ঠানিকভাবে আমির হন। ২০০০ সালে তিনি রাজনীতি থেকে অবসর নিলে আমির নির্বাচিত হন মতিউর রহমান নিজামী। ২০০৩, ২০০৬ ও ২০০৯ সালের রুকন সম্মেলনে তিনি আমির নির্বাচিত হন। - মানবকণ্ঠ

২২ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস‌‌‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে