কাজী জেবেল : উপজেলা চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে। নতুন এ বিধান যুক্ত করে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা সংশোধনের খসড়া চূড়ান্ত করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি) সচিবালয়। এই প্রথম স্থানীয় সরকারভুক্ত প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান পদ ছাড়াও ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান যুক্ত হচ্ছে।
সংশোধিত বিধিতে স্বতন্ত্র প্রার্থী হওয়ার শর্ত শিথিল করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ভোটার স্বাক্ষরযুক্ত কোনো তালিকা জমা দিতে হবে না। উপজেলা পরিষদ ভোটের আগে কোনো প্রার্থীর মৃত্যু হলে ওই নির্বাচন বাতিল হয়ে যাবে। মহিলা সদস্য পদে সমভোট পেলে লটারির মাধ্যমে জনপ্রতিনিধি নির্বাচনের বিধান রাখা হয়েছে এ বিধিমালায়। এছাড়া আচরণবিধিতে মন্ত্রী, এমপি, মেয়রসহ সরকারি সুবিধাভোগী গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের প্রচারণায় বিধিনিষেধ রাখা হয়েছে। বিধিমালা দুটির খসড়া অনুমোদনের জন্য নির্বাচন কমিশনে (ইসি) উপস্থাপন করা হয়েছে। আগামীকাল কমিশন সভা অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে। ইসি সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
এ বিষয়ে ইসি সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, উপজেলা পরিষদের সব পদেই দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হবে। এজন্য চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও নারী ভাইস চেয়ারম্যান পদে দলীয়ভাবে এবং স্বতন্ত্র উভয়ভাবেই প্রার্থিতার সুযোগ রাখা হয়েছে।
সূত্র জানায়, সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভা নির্বাচনে শুধু মেয়র এবং ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে শুধু দলীয় প্রতীকে নির্বাচনের বিধান আছে। বাকি পদগুলোতে দলীয় প্রতীক নেই। আগে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনও একইভাবে হতো। কিন্তু এবার ভিন্নতা আসছে। শুধু উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের পাশাপাশি ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদেও দলীয় প্রতীকে নির্বাচন হতে যাচ্ছে। সর্বশেষ ২০১৪ সালে ছয় ধাপে সারা দেশে নির্দলীয় প্রতীকে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ২০১৫ সালের নভেম্বরে জাতীয় সংসদে দলীয় প্রতীকে স্থানীয় সরকার নির্বাচনের বিধান রেখে আইন পাস হয়।
ইসি সূত্রে জানা গেছে, উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা এবং উপজেলা পরিষদ (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালার চূড়ান্ত খসড়ার কপি ইতিমধ্যে কমিশনারদের কাছে পাঠানো হয়েছে। এর সঙ্গে ইসির উপসচিব (নিঃসঃওসঃ) মোহা. ইসরাইল হোসেন স্বাক্ষরিত কার্যপত্র উপস্থাপন করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের লক্ষ্যে বিধিমালা সংশোধনের প্রস্তাবনা প্রস্তুত করা হয়েছে। ওই কার্যপত্রে আরও বলা হয়েছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা এবং আচরণ বিধিমালার আদলে উপজেলা পরিষদ নির্বাচন বিধিমালা ও আচরণ বিধিমালা প্রস্তুত করা হয়েছে। এতে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের ক্ষেত্রে ভোটার স্বাক্ষরযুক্ত তালিকা যাচাই পদ্ধতি রাখা হয়নি।
যদিও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীদের ৩০০ ভোটারের স্বাক্ষর জমা দেয়ার বিধান রয়েছে। খসড়া নির্বাচন বিধিমালায় দেখা গেছে, প্রার্থীর সংজ্ঞায় চেয়ারম্যান এবং ভাইস চেয়ারম্যান উভয় পদে রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত প্রার্থী এবং স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বোঝানো হয়েছে। অর্থাৎ সবগুলো পদেই দল মনোনীত ব্যক্তি এবং স্বতন্ত্ররা প্রার্থী হতে পারবেন। রাজনৈতিক দল কর্তৃক মনোনীত চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান এবং মহিলা ভাইস চেয়ারম্যানদের জন্য দলীয় প্রতীকের বিষয় আলাদা তফসিলে উল্লেখ করা হয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জন্যও প্রতীক পৃথকভাবে সংরক্ষণ করা হয়েছে।
বিধির ২৩ ধারায় বলা হয়েছে, ভোট গ্রহণের আগে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে মনোনীত বৈধ প্রার্থীর কারও মৃত্যু হলে সংশ্লিষ্ট উপজেলার নির্বাচন কার্যক্রম রিটার্নিং অফিসার গণবিজ্ঞপ্তি দিয়ে বন্ধ করে দেবেন। বিদ্যমান বিধিমালায় কোনো প্রার্থীর মৃত্যু হলে বাকি প্রার্থীদের মধ্যে ভোটের বিধান রয়েছে। এছাড়া মহিলা সদস্য নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী সমান ভোট পেলে লটারির মাধ্যমে নির্বাচনের বিধান রাখা হয়েছে। তবে চেয়ারম্যান, ভাইস চেয়ারম্যান ও মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান পদে সমভোট পেলে পুনঃভোট হবে। খসড়া বিধিতে কোনো প্রার্থী বা তার পক্ষে অন্য কেউ বিধিমালা লঙ্ঘন করলে অনধিক ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং দশ হাজার টাকা জরিমানার কথা বলা হয়েছে। রাজনৈতিক দল বিধি লংঘন করলে দশ হাজার টাকা জরিমানার প্রস্তাব করা হয়েছে।
এদিকে স্থানীয় সরকারের অন্যান্য নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে মন্ত্রী, এমপিসহ সরকারি সুবিধাভোগীদের নির্বাচনী প্রচারণা অংশ নেয়ার ওপর বিধিনিষেধ আরোপ করার প্রস্তাব করা হয়েছে। সভা, সমাবেশ এবং সরকারি স্থাপনা ও যানবাহন ব্যবহার করার ওপর নিষেধাজ্ঞা থাকছে। তবে প্রার্থীরা পথসভা ও ঘরোয়া সভা করতে পারবেন। - যুগান্তর
২৩ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস