মঙ্গলবার, ২৩ আগস্ট, ২০১৬, ০৫:২৯:২০

জেলা পরিষদ নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা প্রার্থী নয়

জেলা পরিষদ নির্বাচনে জনপ্রতিনিধিরা প্রার্থী নয়

উবায়দুল্লাহ বাদল : কোনো জনপ্রতিনিধি জেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান অথবা সদস্য পদে প্রার্থী হতে পারবেন না। এছাড়া ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হলে অথবা জনস্বার্থ পরিপন্থী কোনো কাজ করলে সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান ও সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে সরকার।

পাশাপাশি জেলা পরিষদের কোনো সম্পত্তি অর্জন ও হস্তান্তর করতে সরকারের অনুমতি নেয়া বাধ্যতামূলক হচ্ছে। এসব বিধান অন্তর্ভুক্ত করে জেলা পরিষদ (সংশোধন) অধ্যাদেশ, ২০১৬-এর খসড়া প্রায় চূড়ান্ত করেছে স্থানীয় সরকার বিভাগ।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার বিভাগের সচিব আবদুল মালেক সোমবার তার নিজ দফতরে বলেন, জেলা পরিষদ আইনে প্রয়োজনীয় সংশোধনী এনে তা অধ্যাদেশ আকারে জারি করা হবে। জাতীয় সংসদের অধিবেশন শুরু হলে তা বিল আকারে উপস্থাপন করা হবে। এ সংক্রান্ত খসড়া চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটি অনুমোদনের জন্য অতি শিগগিরই তা মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে পাঠানো হবে।

সংশোধনীর বিষয়ে আবদুল মালেক বলেন, অধ্যাদেশে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানদের ভোটার করাসহ স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের পদের কিছু শব্দগত সংশোধনী আনা হয়েছে। পাশাপাশি জনপ্রতিনিধিরা পদে থেকে জেলা পরিষদের কোনো পদে প্রার্থী হতে পারবেন না তা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। আর জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের আচরণ সুনির্দিষ্ট করা হয়েছে। নির্বাচনের বিধি প্রণয়নের ক্ষমতা আগে মন্ত্রণালয়ের হাতে ছিল। প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে তা নির্বাচন কমিশনের (ইসি) হাতে দেয়া হয়েছে।

জনপ্রতিনিধিরা পদত্যাগ করে নির্বাচন করতে পারবেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে আবদুল মালেক বলেন, পদত্যাগ করলে অবশ্যই নির্বাচন করতে পারবেন। তবে তা অধ্যাদেশে বলা হয়নি। এটি নির্ধারণ করবে নির্বাচন কমিশন। তারা এ বিষয়টি নির্বাচন সংক্রান্ত বিধিমালায় স্পষ্ট করবেন।

জেলা পরিষদ অধ্যাদেশের খসড়ায় বলা হয়েছে, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের জেলা পরিষদের সব পদে প্রার্থী হওয়ার সুযোগ রহিত করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে শুধু জাতীয় সংসদ সদস্য প্রার্থী হতে পারবেন না বলে উল্লেখ আছে। তবে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জনপ্রতিনিধিদের বিষয়ে কোনোকিছু বলা নেই।

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে উল্লেখ করা হয়, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, সদস্য ও সংরক্ষিত মহিলা আসনের সদস্য পদে বাংলাদেশের যে কোনো নাগরিক প্রার্থী হতে পারবেন। তবে তার বয়স ২৫ বছরের বেশি হতে হবে। পাশাপাশি সংশ্লিষ্ট জেলার ভোটার তালিকায় তার নাম থাকতে হবে। এছাড়া প্রজাতন্ত্রের বা পরিষদের বা অন্য কোনো স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কোনো কর্মে লাভজনক সার্বক্ষণিক পদে অধিষ্ঠিত ব্যক্তিরা এসব পদের প্রার্থী হিসেবে যোগ্য বলে বিবেচিত হবেন না।

ভোটার কারা হবেন তা বিদ্যমান আইনের ধারাই বহাল রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে। জেলা পরিষদের নির্বাচনে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের সব জনপ্রতিনিধিই ভোটার থাকবেন। তবে জনপ্রতিনিধিদের পদের নাম সংক্রান্ত কিছু বিষয় সংশোধন করা হয়েছে। বিদ্যমান আইনে উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যানরা ভোটার ছিলেন না। নতুন অধ্যাদেশে সিটি কর্পোরেশন ও পৌরসভার ‘ওয়ার্ড কমিশনারে’র বদলে ‘কাউন্সিলর’ শব্দ যোগ করা হয়েছে। পাশাপাশি পৌরসভার ‘চেয়ারম্যানে’র বদলে ‘মেয়র’ শব্দ যোগ করা হয়েছে।

জনগণের সরাসরি ভোটে জেলা পরিষদ নির্বাচনের ব্যবস্থার দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘জনগণের সরাসরি ভোটে জেলা পরিষদের সদস্যরা নির্বাচিত হবেন। সদস্যরা পরে নিজেদের মধ্য থেকে একজনকে চেয়ারম্যান নির্বাচন করবেন। নইলে সব পদে সরাসরি নির্বাচন দেয়া হোক। কারণ এসব পদের প্রার্থীদের আমিও ভোট দিতে চাই।’

প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও সদস্যদের সাময়িক বরখাস্ত করার বিধান নতুন করে যোগ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বা কোনো সদস্যের বিরুদ্ধে উপযুক্ত আদালত কর্তৃক কোনো ফৌজদারি মামলায় অভিযোগপত্র গৃহীত হলে বা সরকারের বিবেচনায় ওই চেয়ারম্যান বা সদস্যের ক্ষমতা প্রয়োগ জনস্বার্থের পরিপন্থী হলে, সরকার সংশ্লিষ্ট চেয়ারম্যান বা সদস্যকে সাময়িক বরখাস্ত করতে পারবে।

পাশাপাশি নতুন করে যুক্ত করা হয়েছে পুনর্বহালের ধারাও। এ বিষয়ে বলা হয়েছে- এই আইনের বিধান অনুযায়ী অপসারিত হয়ে পদ হারানোর পর সরকার কর্তৃক পুনর্বিবেচনা বা অপসারণের আদেশ বাতিল বা প্রত্যাহার হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি নিজ পদে অবশিষ্ট মেয়াদের জন্য পুনর্বহাল হবেন।

নির্বাচনের আচরণবিধি ভঙ্গের জন্য অনধিক ৫০ হাজার টাকা জরিমানা এবং অনধিক ৬ মাসের কারাদণ্ড বা উভয় দণ্ডের বিধান রাখা হয়েছে প্রস্তাবিত অধ্যাদেশে। বিদ্যমান আইনে দণ্ডের বিধান থাকলেও তা সুস্পষ্ট করা নেই।

চেয়ারম্যানের অবর্তমানে অস্থায়ী প্যানেল চেয়ারম্যানকে দায়িত্ব দেয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে খসড়ায়। এতে বলা হয়, ‘পরিষদের নির্বাহী ক্ষমতা চেয়ারম্যানের উপর ন্যস্ত থাকবে। পরিষদ ইহার সকল বা যে কোন নির্বাহী ক্ষমতা প্রয়োগ করার জন্য কোন অস্থায়ী প্যানেল চেয়ারম্যান বা কোন সদস্য বা সরকারের অনুমোদনক্রমে কোন উপযুক্ত কর্মকর্তাকে ক্ষমতা প্রদান করতে পারবেন।’ বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, চেয়ারম্যান যে কোনো ব্যক্তিকে পরিষদের নির্বাহী ক্ষমতা দিতে পারেন।

জেলা পরিষদের যে কোনো সম্পত্তি হস্তান্তর করতে সরকারের অনুমতি বাধ্যতামূলক করা হয়েছে নতুন অধ্যাদেশে। এ প্রসঙ্গে বলা হয়, সরকারের পূর্বানুমোদনক্রমে দান, বিক্রয়, বন্ধক, ইজারা বা বিনিময়ের মাধ্যমে বা অন্য কোনো পন্থায় যে কোনো সম্পত্তি অর্জন বা হস্তান্তর করতে পারবে। বিদ্যমান আইনে সরকারের অনুমতি নেয়ার বিধান নেই।

প্রসঙ্গত, ব্রিটিশদের তৈরি করা লোকাল গভর্নমেন্ট অ্যাক্ট, ১৮৮৫-এর আওতায় জেলা পরিষদ চলেছে একশ’ বছরের বেশি সময়। সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসকরাই ছিলেন এর হর্তাকর্তা। ১৯৮৮ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি এইচএম এরশাদ স্থানীয় এমপিদের মধ্য থেকে একজনকে জেলা পরিষদের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব দেন।

১৯৯১ সালে বিএনপি সরকার গঠন করে ওই নিয়োগ বাতিল করে। ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসে ২০০০ সালে বিদ্যমান জেলা পরিষদ আইন প্রণয়ন করে। তবে তখনও কোনো নির্বাচন দেয়া হয়নি। ২০০১ সালে বিএনপি-জামায়াত জোট ক্ষমতায় এলে জেলা পরিষদ আবারও হিমঘরে চলে যায়। আমলাদের দায়িত্বে চলে জেলা পরিষদের কার্যক্রম।

ওয়ান-ইলেভেনের সরকার ২০০০ সালের আইনে সংশোধনীর চেষ্টা করলেও তা আলোর মুখ দেখেনি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার গঠন করলে বিদ্যমান আইন অনুযায়ী ২০১১ সালের ১৫ ডিসেম্বর দেশের তিন পার্বত্য জেলা বাদে বাকি ৬১টি জেলা পরিষদে প্রশাসক নিয়োগ দেয়া হয়। এদের সবাই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের নেতা। মৃত্যুজনিত কারণে চারটি জেলা পরিষদের প্রশাসক পদ শূন্য হলে আবার নিয়োগ দেয়া হয়। গত ৫ বছর ধরে এভাবেই চলছে স্থানীয় সরকারের এ গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান। - যুগান্তর
২৩ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস‌‌‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে