শরীফুল আলম সুমন : পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলনের সঙ্গে সুর মিলিয়ে এবার মাঠে নামছেন দেশের ৩০৬টি সরকারি কলেজের শিক্ষকরা। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিলের প্রতিবাদে এবং অধ্যাপকদের বিদ্যমান বৈষম্যমূলক বেতন স্কেল আপগ্রেডেশনের দাবিতে আজ সারা দেশের সরকারি কলেজ, সব শিক্ষা বোর্ড ও শিক্ষাসংশ্লিষ্ট অফিসে পূর্ণদিবস কর্মবিরতি ঘোষণা করেছে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতি। কলেজে নিয়মিত কোনো ক্লাস-পরীক্ষা নেয়া হবে না। অথচ আজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে বিবিএ ও মাস্টার্সের পরীক্ষা রয়েছে। সরকারি কলেজগুলো এসব পরীক্ষা না নেয়ায় বন্ধ রাখতে হবে বেসরকারি কলেজের পরীক্ষাও। এ ছাড়া সরকারি কলেজের প্রায় ১৩ লাখ শিক্ষার্থীর অনেকের আজ আন্তপরীক্ষা রয়েছে। ফলে বিপাকে রয়েছে এসব শিক্ষার্থী।
শিক্ষকদের অভিযোগ, নতুন পে স্কেলে টাকা বাড়লেও মর্যাদার দিক দিয়ে পিছিয়ে যাচ্ছেন তারা। মোট চারভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তারা। এসব সমস্যা সমাধান না করলে তারা দীর্ঘমেয়াদি কঠোর কর্মসূচির দিকে যাবেন।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে দেশে ২৭২টি সরকারি কলেজ, ১৪টি শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজ (টিটিসি), ১৬টি সরকারি কমার্শিয়াল কলেজ ও চারটি সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়া রয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে শিক্ষকের পদ আছে ১৫ হাজার ২৪৬টি। এর মধ্যে অধ্যাপকের পদ ৬৩৪টি, সহযোগী অধ্যাপক দুই হাজার ৪০৩টি, সহকারী অধ্যাপক চার হাজার ২১৪টি ও প্রভাষকের পদ সাত হাজার ৯৯৫টি। সপ্তম পে স্কেলে প্রভাষকরা বেতন পান নবম গ্রেডে, সহকারী অধ্যাপকরা ষষ্ঠ গ্রেডে, সহযোগী অধ্যাপকরা পঞ্চম গ্রেডে এবং অধ্যাপকরা চতুর্থ গ্রেডে। তবে মোট অধ্যাপকের অর্ধেকের সিলেকশন গ্রেড পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত শিক্ষকরা বেতন পান তৃতীয় গ্রেডে।
জানা যায়, সরকারি কলেজের প্রভাষক থেকে সহকারী অধ্যাপক পদে পদোন্নতি পেতে কমপক্ষে পাঁচ বছর সময় লাগে। এরপর সহকারী অধ্যাপক থেকে সহযোগী অধ্যাপক হতে লাগে আরো তিন বছর। আর সহযোগী অধ্যাপক থেকে অধ্যাপক হতে সময় লাগে আরো দুই বছর। মোট ১০ বছরে অধ্যাপক হওয়ার কথা থাকলেও নানা জটিলতায় সময় লাগে ১৮ থেকে ২২ বছর। আর সিলেকশন গ্রেড পেতে সময় লাগে আরো কয়েক বছর। চাকরির শেষ প্রান্ত ছাড়া কেউ সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত অধ্যাপক হন না। তবে সে সুযোগও সবার নেই।
শিক্ষকরা জানান, অষ্টম বেতন স্কেলে তাদের বেতনের টাকা বাড়লেও পদের দিক দিয়ে অবনমন হচ্ছে। তারা মোট চারভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন। সিলেকশন গ্রেড না থাকায় তারা আর তৃতীয় গ্রেডে উঠতে পারবেন না। এতে ৩০ বছর চাকরি করেও তাদের চতুর্থ গ্রেডে থেকেই অবসর গ্রহণ করতে হবে। অথচ প্রশাসনের উপসচিব পদ পঞ্চম গ্রেডের। তারা পদোন্নতি পেয়ে যুগ্ম সচিব হয়ে এক ধাপ ডিঙিয়ে সরাসরি তৃতীয় গ্রেডে চলে যান। এতে দুই ক্যাডারের বৈষম্য বাড়বে।
এ ছাড়া আগে কলেজশিক্ষকরা তৃতীয় গ্রেড পর্যন্ত আসতে পারলেও এখন প্রথম গ্রেডের ওপরে আরো দুটি বিশেষ গ্রেড করায় কার্যত তাঁরা ষষ্ঠ গ্রেডে থাকছেন। এতে বড় ধরনের মর্যাদার অবনমন হচ্ছে।
দেশের অনেক কলেজেই অধ্যাপকের পদ নেই। আবার যেসব বিষয় কম গুরুত্বপূর্ণ, সারা দেশেই সেগুলোতে অধ্যাপক পদের সংখ্যা হাতে গোনা। তাঁরা সহযোগী অধ্যাপক হলেও তাঁদের সিলেকশন গ্রেড দিয়ে আর্থিক ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়া হতো। কিন্তু সিলেকশন গ্রেড না থাকায় আর্থিকভাবেও পিছিয়ে পড়বেন শিক্ষকরা। এ ছাড়া সব অধিদপ্তরের মহাপরিচালক পদটি প্রথম গ্রেডের। আর শিক্ষা অধিদপ্তরগুলোর মহাপরিচালক পদ দ্বিতীয় গ্রেডের তবে প্রথম গ্রেডে উন্নীত করার কাজ চলছে। সিলেকশন গ্রেডপ্রাপ্ত তৃতীয় গ্রেডের অধ্যাপকদের চলতি দায়িত্ব দিয়ে এই পদে বসানো হয়। কিন্তু এখন যদি শিক্ষকদের চতুর্থ গ্রেডই শেষ ধাপ হয়, তাহলে দুই বা তিন ধাপ ডিঙিয়ে তাঁদের আর শিক্ষা প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদগুলোতে বসা সম্ভব নয়। আর অধিদপ্তর আর প্রকল্পগুলোর পরিচালকসহ অন্যান্য সমমানের পদে সাধারণত শিক্ষকরাই প্রেষণে এসে থাকেন। এই পদগুলোও তৃতীয় গ্রেডের। কিন্তু এখন শিক্ষকরা চতুর্থ গ্রেডে এসে পদোন্নতি থেমে গেলে শিক্ষা প্রশাসনের কোনো উচ্চপদেই আর বসতে পারবেন না তাঁরা।
শিক্ষকদের অভিযোগ, জেনেশুনেই শিক্ষকদের এই পদের অবনমন করা হয়েছে। শিক্ষকরা যেভাবে তাঁদের প্রশাসন চালাতে পারেন, অন্য ক্যাডারের পক্ষে তা সম্ভব নয়। কিন্তু এখন নিয়ম অনুযায়ী অন্য ক্যাডার থেকেই শিক্ষা প্রশাসনে বসাতে হবে। হারাতে হতে পারে মহাপরিচালক, পরিচালকের মতো পদগুলো। আসলে এই পদগুলোতে শিক্ষকদের বসতে না দিতেই এ ধরনের বৈষম্য করা হয়েছে।
এসব বিষয়ে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা সমিতির মহাসচিব আই কে সেলিম উল্লাহ খোন্দকার গতকাল বুধবার প্রতিবেদককে বলেন, 'আমরা সব দিক দিয়েই অবমাননার শিকার হয়েছি। নতুন পে স্কেলে শিক্ষকরাই সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত, এটা নিঃসন্দেহে বলা যায়। আর বেতন বাড়ার কথা বলা হচ্ছে, আসলে সেখানে বৈষম্য হয়েছে। যাঁরা প্রথম গ্রেডে যাবেন তাঁরা একটি ক্যাডারে যোগদান করেছিলেন। আমরাও অন্য ক্যাডারে যোগদান করেছি। মেধার দিক থেকে আমরা কোনো অংশেই কম নই। সুযোগ না থাকায় আমরা সর্বোচ্চ গ্রেডে যেতে পারছি না।
বেতন বাড়ার হার একই থাকলেও ওপরের গ্রেডগুলোতে যত টাকা বাড়বে নিচের গ্রেডে বেসিক কম হওয়ায় অনেক কম বাড়বে। সে ক্ষেত্রে টাকার দিক দিয়েও বৈষম্যের শিকার হচ্ছি। বিষয়গুলো আগে আমরা বারবার বলেছি। কিন্তু আমাদের কথা শোনা হয়নি। এখন আর অন্য কোনো চেষ্টা করে লাভ নেই। আমরা প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করব। কাল (আজ বৃহস্পতিবার) কর্মবিরতি শেষে আমরা নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করব। যেকোনো দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচির জন্যও আমরা প্রস্তুত। কালকের (বৃহস্পতিবার) কর্মসূচিতে কোনো প্রকার ক্লাস-পরীক্ষা নেওয়া হবে না। তবে শুধু বিসিএসের লিখিত পরীক্ষা নেওয়া হবে। আর শিক্ষার্থীরাও যাতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে না পড়ে সে বিষয়টিও আমরা মাথায় রেখেছি।
জানতে চাইলে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা ও গণসাক্ষরতা অভিযানের নির্বাহী পরিচালক রাশেদা কে চৌধুরী এই প্রতিদেবদককে বলেন, 'আমাদের দেশের শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, মর্যাদা আশপাশের দেশের শিক্ষকদের চেয়ে কম। তবে শিক্ষকরা কোচিংসহ নানা কাজে ব্যস্ত। তাই তাদের স্বচ্ছতা নিয়েও প্রশ্ন আছে। শিক্ষকরা যতই যুক্তিসংগত আন্দোলন করুক না কেন, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শিক্ষার্থীদের ওপরই। সব আন্দোলনের শিকার হয় শিক্ষার্থীরা। তাই এ সমস্যার দ্রুত নিরসন হওয়া উচিত। সরকারেরই দায়িত্ব এ ব্যাপারে গ্রহণযোগ্য জায়গায় পৌঁছানো। শিক্ষানীতিতে যে স্বতন্ত্র বেতন কাঠামোর কথা বলা হয়েছে, সেটাও ভাবা উচিত।
রাজধানীর ঢাকা কলেজের সহযোগী অধ্যাপক মো. আবদুল কুদ্দুস সিকদার বুধবার এই প্রতিবেদককে বলেন, নতুন পে স্কেলে আমরা বৈষম্যের শিকার হয়েছি। অনেক ক্ষেত্রেই আমাদের বঞ্চিত করা হয়েছে। ফলে স্বাভাবিকভাবেই শিক্ষাঙ্গনে অস্থিরতা বিরাজ করছে। সব সময় গুণগত শিক্ষার কথা বলা হয়। কিন্তু শিক্ষকদের মর্যাদা দেওয়ার ক্ষেত্রে কার্পণ্য করা হয়। এভাবে চলতে থাকলে ভবিষ্যতে মেধাবীরা আর এই পেশায় আসবে না।
ঢাকার বাইরের শিক্ষকরাও কেন্দ্রীয় এই কর্মসূচির সঙ্গে একাত্মতা ঘোষণা করেছেন। নারায়ণগঞ্জ সরকারি মহিলা কলেজের প্রভাষক সারমিনা আক্তার গতকাল ফোনে প্রতিবেদককে বলেন, 'আমার চাকরির বয়স চার বছর। আরো ৩০ বছর চাকরি রয়েছে। সপ্তম স্কেলে আগামী মাসেই আমি সিলেকশন গ্রেড পেতাম। এতে বেতন এমনিতেই বেড়ে যেত। সেটা না দিয়ে এখন নতুন স্কেল দেয়া হলো। গড়ে তো একই কথা দাঁড়াল। আর আমি ইচ্ছা করলে অন্য ক্যাডারেও যেতে পারতাম। কিন্তু সম্মানের বিষয়টি চিন্তা করেই শিক্ষা ক্যাডারে এসেছি। অথচ সেই সম্মানের দিক দিয়েই আমাদের অবমাননা করা হচ্ছে। তাই আমরা কর্মসূচিতে একাত্মতা ঘোষণা করেছি। আমরা আজ বৃহস্পতিবার কলেজে যাব, কিন্তু কোনো ক্লাস-পরীক্ষা নেব না।'
জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বদরুজ্জামান বুধবার প্রতিবেদককে বলেন, আজ বৃহস্পতিবার বিবিএ ও মাস্টার্সের পরীক্ষা রয়েছে। সাধারণত পরীক্ষা কর্মবিরতির বাইরে থাকে। কিন্তু এখন যদি অন্য কোনো ধরনের পরিস্থিতি সৃষ্টি হয় তাহলে কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করে তখন সিদ্ধান্ত নেব। তবে সরকারি কলেজে পরীক্ষা না নিয়ে বেসরকারি কলেজে তো নেওয়া সম্ভব নয়।
অর্থমন্ত্রীকে বক্তব্য প্রত্যাহারে ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম : বুধবার বাংলাদেশ শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের কোনো কর্মসূচি না থাকলেও পৃথকভাবে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি কর্মসূচি পালন করেছে। প্রায় প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরাই অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে সমাবেশ করেছেন।
বুধবার অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার জন্য ২৪ ঘণ্টার আলটিমেটাম দিয়েছেন শিক্ষকরা। শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ঘোষিত বেতন কাঠামোতে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের চার দফা দাবির কোনোটিই গ্রহণ করা হয়নি, এমনকি দাবি পূরণের বিষয়েও এখনো সুনির্দিষ্ট কোনো দিকনির্দেশনা দেয়া হয়নি। উপরন্তু অর্থমন্ত্রী মঙ্গলবার সংবাদমাধ্যমে শিক্ষকদের বিষয়ে বলেছেন, শিক্ষকদের জ্ঞানের অভাব রয়েছে। এ ছাড়া তিনি শিক্ষকদের সম্পর্কে আরো কিছু বিরূপ মন্তব্য করেছেন, যা শুধু অনভিপ্রেতই নয়, অসংলগ্নও বটে। অতীতে তিনি স্বৈরাচার সরকারের মন্ত্রী ছিলেন এবং এখনো তাঁর স্বৈরাচারী মনোভাবের পরিবর্তন হয়নি বলে তিনি এ রকম ঔদ্ধত্যপূর্ণ আচরণ করছেন। শিক্ষকদের সম্পর্কে তাঁর এমন মন্তব্য বাংলাদেশের শিক্ষা পরিবারের প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি সদস্যের মধ্যে ক্ষোভের সঞ্চার করেছে। এমতাবস্থায় আমরা অর্থমন্ত্রীকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাঁর বক্তব্য প্রত্যাহার করে প্রকাশ্য ক্ষমা প্রার্থনার আহ্বান জানাই। অন্যথায় শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যেকোনো উদ্ভূত পরিস্থিতির দায়ভার তাঁকেই বহন করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অন্য এক বিবৃতিতে অর্থমন্ত্রীর বক্তব্যের প্রতিবাদ জানিয়ে বলেছে, 'মন্ত্রী হিসেবে তিনি (অর্থমন্ত্রী) শপথ নেয়ার সময় বলেছিলেন, অনুরাগ বা বিরাগের বশবর্তী হয়ে কারো প্রতি কোনো আচরণ করবেন না। অথচ তার ওই বক্তব্যের মাধ্যমে তিনি শপথ ভঙ্গ করেছেন। এরই প্রেক্ষিতে তিনি মন্ত্রী হিসেবে থাকার সকল নৈতিক ও সাংবিধানিক অধিকার হারিয়েছেন। তাই শিক্ষকরা তাঁকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করার আহ্বান জানিয়েছেন।
ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় আজ বৃহস্পতিবার পূর্ণ দিবস কর্মসূচি ঘোষণা করেছে। এ ছাড়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের পূর্বঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী আজ কর্মবিরতি চলবে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও আগামী রবিবার পর্যন্ত টানা কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছে। ময়মনসিংহের বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতিও অনির্দিষ্টকালের জন্য ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে।
আমাদের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ও নিজস্ব প্রতিবেদকরা জানান, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়, টাঙ্গাইলের মাওলানা ভাসানী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অর্থমন্ত্রীর বক্তব্য প্রত্যাহার এবং অষ্টম বেতন স্কেলের গ্রেড পুনর্নির্ধারণের দাবিতে গতকাল কালো ব্যাজ ধারণ, মৌন মিছিল ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে।
সংসদে অর্থমন্ত্রীর সমালোচনা : বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন নিয়ে মন্তব্য করায় অর্থমন্ত্রীর কড়া সমালোচনা করেছেন বিরোধীদলীয় সদস্য কাজী ফিরোজ রশিদ ও স্বতন্ত্র সংসদ সদস্য তাহজীব আলম সিদ্দিকী। গত রাতে জাতীয় সংসদে পয়েন্ট অব অর্ডারে অনির্ধারিত বক্তব্যে কাজী ফিরোজ রশিদ বলেন, 'শিক্ষকদের আন্দোলনে ছাত্রছাত্রীদের লেখাপড়া বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এ অবস্থা থেকে শিক্ষকদের ফিরিয়ে আনতে অর্থমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রীর প্রতি অনুরোধ, প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনা করুন কিভাবে এর সুরাহা করা যায়। তা না হলে ছাত্রছাত্রীদের বিরাট ক্ষতি হয়ে যাবে।'
এর আগে পয়েন্ট অব অর্ডারে দাঁড়িয়ে তাহজীব আলম সিদ্দিকী অর্থমন্ত্রীকে লক্ষ্য করে বলেন, 'শিক্ষকদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে অর্থমন্ত্রী স্বভাবসুলভ ভঙ্গিতে বলেছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের জ্ঞানের অভাবেই নাকি এই আন্দোলন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের তো অবশ্যই জ্ঞানের অভাব! না হলে মেধাবী হওয়া সত্ত্বেও বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক না হয়ে ওনারা আমলা হতেন, পরবর্তীতে রাজনৈতিক দলের ভিতরে ঢুকে দলের শীর্ষে অবস্থান করতেন এবং রাজনৈতিক সরকারের নীতিনির্ধারক হতেন।
তিনি আরো বলেন, যে জাতি তাদের শিক্ষকদের মর্যাদা দিতে পারে না, তাদের মেধার বিকাশ কোনো দিনই ঘুচবে না, কোনো দিন সেই জাতি উন্নতির শিখরে পৌঁছায় না। তাই বেতন কাঠামো পুনর্বিবেচনাসহ ওয়ারেন্ট অব প্রিসিডেন্স-এ তাদের প্রাপ্য মর্যাদা সুনিশ্চিত করতে হবে। এ সময় তিনি অর্থমন্ত্রীকে ক্ষমা চাওয়ারও আহ্বান জানান।
শিক্ষকদের আন্দোলন বিএনপি সমর্থন করে : স্বতন্ত্র বেতন স্কেল ঘোষণার দাবিতে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য বিএনপি সমর্থন করে বলে জানিয়েছেন । বুধবার সকালে জাতীয়তাবাদী মহিলা দলের ৩৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে দলের প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর পর সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি।
হান্নান শাহ বলেন, অবৈধ সরকার নতুন যে পে স্কেল ঘোষণা করেছে তা অবৈধ। বর্তমান সরকার নির্বাচিত নয়। তারা অনৈতিকভাবে ক্ষমতা দখল করে আছে। তাদের এ স্কেল ঘোষণার কোনো এখতিয়ার নেই।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে বিএনপি এক স্থায়ী কমিটির সদস্য বলেন, বর্তমানে সারা দেশে শিক্ষকরা যে ন্যায্য দাবি করছেন তার প্রতি বিএনপির পূর্ণ সমর্থন রয়েছে। শিক্ষকদের জন্য সমান সুযোগ দিয়ে ভিন্ন বেতন স্কেল ঘোষণার দাবি জানাচ্ছি। তিনি বলেন, অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অনেক সময় আজেবাজে কথা বলেন।-কালের কণ্ঠ
১০ সেপ্টেম্বর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে