বৃহস্পতিবার, ২৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:৪১:১৭

বিএনপির চরিত্রের কোনো বদল হয়নি : প্রধানমন্ত্রী

বিএনপির চরিত্রের কোনো বদল হয়নি : প্রধানমন্ত্রী

বিশেষ প্রতিনিধি : প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির চরিত্রের কোনো বদল হয়নি। যুদ্ধাপরাধীদের সন্তান-সন্ততি, আত্মীয়স্বজনদের নবগঠিত কমিটিতে স্থান দিয়ে বিষয়টি তারা পুরো জাতির কাছে স্পষ্ট করেছে। ৫শ’ জনের একটা তালিকা  দিয়ে তারা একটা কমিটি গঠন করেছে। যেখানে যুদ্ধাপরাধী, বাংলাদেশের স্বাধীনতা বিরোধী, হত্যা, খুন, ধর্ষণ, লুটপাট, বুদ্ধিজীবী হত্যার সঙ্গে জড়িত, পাক হানাদারদের সহযোগিতা করার জন্য যাদের এই বাংলার মাটিতে বিচার হয়েছে, তাদেরকে রেখেছে।

বুধবার সকালে প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের শাপলা হলে ‘অসুস্থ, অস্বচ্ছল ও দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক এবং নিহত সাংবাদিকদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সহায়তা ও অনুদানের চেক বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন তিনি।

প্রধানমন্ত্রী মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে এ সময় বলেন, সব ধর্ম, বর্ণ, গোত্রের মানুষ এদেশে সুখে-শান্তিতে বসবাস করবে। আর এই লক্ষ্য নিয়েই সরকার কাজ করে যাচ্ছে। এখানে কোনো সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ ও যুদ্ধাপরাধীদের স্থান হবে না। দেশের চলমান যুদ্ধাপরাধীদের বিচার চলবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বের অনেক দেশেই এ ধরনের বিচার কোনো নতুন ঘটনা নয়। দেশে প্রায় ২১ বছর যুদ্ধাপরাধী চক্র শাসন ক্ষমতায় থাকায় তারা অবৈধ বিত্ত-বৈভবের পাহাড় গড়ে তুলেছে। যে কারণে নানাভাবে বিচারকে প্রভাবান্বিত করার চেষ্টা করছে।

তিনি বলেন, এ বিষয়ে আমরা আমাদের নীতিতে অটল রয়েছি। আমরা এই বিচার কার্যকে এগিয়ে নিয়ে যাব এবং এজন্য ক্ষমতায় থাকা বা না থাকা, জীবন-মৃত্যু কোন কিছুরই আমরা তোয়াক্কা করি না। তিনি বলেন, ক্ষমতা কোন ভোগের বিষয় নয়। ক্ষমতা হচ্ছে মানুষের প্রতি অর্পিত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের বিষয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, সাংবাদিকদের কল্যাণে বাংলাদেশ সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্ট স্থাপনে আমার ব্যক্তিগত আগ্রহ কাজ করেছে। আপনারা (সাংবাদিক) কেউ আমাকে কোনো পরামর্শ দেননি। নিজ উদ্যোগে করেছি। এ বিষয়ে অনুপ্রেরণা পেয়েছিলাম জাতির পিতার কাছ থেকে। কেননা জাতির পিতা সংবাদপত্রে কাজ করতেন।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, অনলাইন পত্রিকার জন্য নীতিমালা করা জরুরি।  এরই মধ্যে আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছি।  অনলাইন পত্রিকা ব্যাপকভাবে বের হচ্ছে।  তবে এর কোনো নীতিমালা নেই।  সবাইকে একটা নীতিমালায় আসতে হবে।


প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাস করে না, স্বাধীনতায় বিশ্বাস করে না, দেশের মানুষের শান্তিতে বিশ্বাস করে না, উন্নয়নে বিশ্বাস করে না, এটাই হলো বাস্তবতা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা ক্ষমতায় থাকাকালে জঙ্গিবাদের বিস্তৃতি হয়েছে, বাংলা ভাইয়ের সৃষ্টি হয়েছে। যারা প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মিছিল করেছে। বিএনপি-জামায়াত জোট জঙ্গিবাদকে ব্যবহার করেছে, উসকে দিয়েছে।  তখন আওয়ামী লীগ নেতাদের খুন করে আট টুকরা করেছে। দেশে বীভৎস, ভয়ংকর পরিবেশ সৃষ্টি করে রেখেছিল। ওই সময় সংবাদপত্রগুলোও তাদের নির্যাতন, হত্যা, খুনের সংবাদ প্রকাশ করার সাহস পেত না। সাংবাদিকদের ওপর তারা অমানষিক নির্যাতন চালাত। সাংবাদিকদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে আপনারা স্বোচ্চার ছিলেন আরও স্বোচ্চার হতে হবে। এই দেশে জঙ্গিবাদের কোনো স্থান হবে না। প্রধানমন্ত্রী বলেন, জনগণের মাঝে যদি আমরা সচেতনতা গড়তে পারি তাহলে সেটাই হবে সবচেয়ে বড় অর্জন।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় আসার পর দেশে বেসরকারি খাতে ইলেকট্রনিক মিডিয়া উন্মুক্ত করে দেয়া হয় উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এর একটাই উদ্দেশ্য ছিল, আমাদের দেশের মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করা। সরকারের সমালোচনায় আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, যত খুশি সমালোচনা করুন, আপত্তি নাই। তবে সে সমালোচনা অবশ্যই গঠনমূলক হতে হবে। গণমাধ্যমের সমালোচনা থেকে শিক্ষা নিয়ে আমি যে কোনো ভুল সংশোধন করতে চাই। সংবাদমাধ্যমের ভূমিকা ও কাজের ধরনের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাংবাদিকদের স্বাধীনতা অবশ্যই রয়েছে, কিন্তু সে স্বাধীনতা দায়িত্বশীলতার সঙ্গে উপভোগ করতে হবে।

অনলাইন পত্রিকার জন্য নীতিমালা করা জরুরি বলে মন্তব্য করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, অনলাইন পত্রিকা ব্যাপকভাবে বের হচ্ছে। তবে এর কোনো নীতিমালা নেই। ইতিমধ্যে আমরা এ বিষয়ে কাজ শুরু করেছি। লাইভ সংবাদ পরিবেশন এবং গণমাধ্যমে প্রকাশিত ছবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সকলকে সতর্ক হওয়ার পরামর্শ দিয়ে বলেন, এমন কোনো সংবাদ যেন পরিবেশন না হয় যা সরকারের কোনো অপারেশনের তথ্য সন্ত্রাসী তথা জঙ্গিদের জানিয়ে দেয়। এমন কোনো ছবি যেগুলো শিশুদের মনস্তাত্ত্বিক বিকাশের সমস্যা ঘটাতে পারে, তা প্রকাশ থেকে বিরত থাকতে হবে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, প্রধানমন্ত্রীর তথ্য উপদেষ্টা ইকবাল সোবাহান চৌধুরী, তথ্য মন্ত্রণালয়-সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি কে এম রহমত উল্লাহ, তথ্য সচিব মরতুজা আহমদ, বিএফইউজে সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল, মহাসচিব ওমর ফারুক, ডিইউজে সভাপতি শাবান মাহমুদ, সাধারণ সম্পাদক সোহেল হায়দার চৌধুরী প্রমুখ।

সাংবাদিক কল্যাণ ট্রাস্টের আওতায় প্রথমবারের মতো ১৯৬ জন দুস্থ, অসুস্থ, দুর্ঘটনায় আহত সাংবাদিক ও নিহত সাংবাদিকদের পরিবারকে ১ কোটি ৪০ লাখ টাকা অনুদান দেয়া হলো। ২০১২ সালে সাংবাদিক সহায়তা অনুদান ও ভাতা নীতিমালা প্রণয়ন করে সরকার।
২৫ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস‌‌‌‌

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে