নিউজ ডেস্ক : প্রকাশক ফয়সল আরেফিন দীপন হত্যার ‘হোতা’ সিফাত ওরফে শামীম ওরফে মঈনুল ইসলামকে গ্রেফতার করেছে গোয়েন্দা পুলিশ। মঙ্গলবার রাতে টঙ্গী থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ব্লগার, গ্রগতিশীল লেখক ও প্রকাশক হত্যায় জড়িত যে ছয়জনকে চিহ্নিত করে ধরিয়ে দেয়ার জন্য পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছিল তাদের মধ্যে শামীম একজন। তার নামে পুরস্কারের অংক ছিল ২ লাখ টাকা।
গ্রেফতারের পর শামীম জানিয়েছে, সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া সেই মেজার জিয়া তাদের বড় ভাই। মেজর জিয়াই তাদের প্রশিক্ষণ ও হত্যাকাণ্ডে নির্দেশনা দিয়ে থাকে।
বুধবার ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার ও কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিটের প্রধান মনিরুল ইসলাম ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত প্রেস ব্রিফিংয়ে এ তথ্য দিয়েছেন।
জানা গেছে, অনেক দিন থেকেই গোয়েন্দা জালে ছিল শামীম। তাকে গ্রেফতারের জন্য রাজধানী ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় বেশ কয়েকটি অভিযান চালানো হয়। শেষ পর্যন্ত মঙ্গলবার রাতের অভিযানে সফলতা পাওয়া যায়।
ব্রিফিংয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, প্রকাশক ফয়সাল আরেফীন দীপন হত্যায় এবিটির যে স্লিপার সেল অংশ নেয় তার অন্যতম পরিচালক শামীম। এর আগে ৫ জুন ডিবি বিমানবন্দর ওভারব্রিজ এলাকা থেকে শিহাব ওরফে সুমন পাটোয়ারীকে গ্রেফতার করে। তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে শামীমকে গ্রেফতার করা হয়। সুমন পাটোয়ারী ৩১ অক্টোবর শুদ্ধস্বর কার্যালয়ে হামলার আসামি। আর মঙ্গলবার গ্রেফতার হওয়া শামীম এবিটির যে স্লিপার সেলের দায়িত্বে ছিল তাদের ভাষায় একে বলা হয় ‘মাসুল’। এই মাসুল সদস্যদের সবাই গৃহত্যাগী ও সংগঠনের জন্য আত্মোৎসর্গ করতেও প্রস্তুত। দীপন হত্যায় এরকম মোট ৫ জন মাসুল অংশ নেয়।
তিনি বলেন, এবিটির সামরিক শাখার দায়িত্ব পালন করছে সেনাবাহিনী থেকে বরখাস্ত হওয়া মেজর সৈয়দ জিয়াউল হক। সে জঙ্গিদের বড়ভাই এবং বস। তাকে ধরিয়ে দিতে ইতিমধ্যে ২০ লাখ টাকা পুরস্কার ঘোষণা করা হয়েছে।
মনিরুল ইসলাম আরও জানান, দীপন হত্যার আগে শামীমের নেতৃত্বে স্লিপার সেলের ৫ সদস্য টঙ্গীর একটি বাসায় প্রশিক্ষণ নেয়। পরে মহাখালীতে চূড়ান্ত প্রস্তুতি নিয়ে ৩১ অক্টোবর দীপনকে হত্যা করে। এই প্রস্তুতিকে তাদের ভাষায় বলা হয় ‘মারকাজ’। এছাড়া শামীম ২০১৪ সালে সাভারে শান্তামারিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র ও ব্লগার রিয়াদ মোর্শেদ বাবু হত্যায় অংশ নেয়। শামীমের বিরুদ্ধে সুমানগঞ্জের ছাতকে একটি মামলা আছে। তার গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জ। সে মদনমোহন কলেজের ছাত্র ছিল।
ডিএমপির উপকমিশনার মাসুদুর রহমান জানান, শামীম নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের (এবিটি) সদস্যদের সার্বিক প্রশিক্ষণ ও পরিচালনার দায়িত্বে ছিলেন। শামীমের কয়েকটি সাংগঠনিক নাম আছে। সে সিফাত, সামির ও ইমরানসহ বিভিন্ন নাম ব্যবহার করত। এবিটির সামরিক শাখার চার দায়িত্বশীল ব্যক্তির মধ্যে শামীম একজন। বোমা তৈরির বিষয়ে তার উচ্চতরও প্রশিক্ষণ আছে।
ব্রিফিংয়ে ডিবি পুলিশের যুগ্ম কমিশনার আবদুল বাতেন, উপকমিশনার মাসরুকুর রহমান খালেদ, শেখ নাজমুল আলম, সাজ্জাদুর রহমান ও মাসুদুর রহমান প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
গত বছরের ৩১ অক্টোবর শাহবাগে আজিজ সুপার মার্কেটে জাগৃতির কার্যালয়ের ভেতরে ফয়সাল আরেফীন দীপনকে কুপিয়ে হত্যা করে জঙ্গিরা। ওই ঘটনায় দীপনের বাবা অধ্যাপক আবুল কাশেম ফজলুল হক শাহবাগ থানায় একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলার তদন্ত করছেন ডিবি পুলিশের পরিদর্শক মো. ফজলুর রহমান। এই মামলায় শামীমকে গ্রেফতার দেখিয়ে বুধবার ১০ দিনের রিমান্ড হেফাজতে নেয়ার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতের জেনারেল রেজিস্ট্রার এসআই মাহমুদুর রহমান আদালতকে বলেন, আসামি মইনুল হাসান শামীম ওরফে সিফাত ওরফে সামির ওরফে ইমরান নিষিদ্ধ সংগঠন আনসারুল্লাহ বাংলা টিমের একজন উচ্চ পর্যায়ের নেতা। তার নির্দেশে ও নেতৃত্বে এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে। এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে কারা কারা জড়িত তাদের নাম-ঠিকানা জানার জন্য ১০ দিনের রিমান্ড প্রয়োজন। শুনানি শেষে ঢাকা মহানগর হাকিম মোহাম্মদ আহসান হাবীব আসামির ৬ দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন।
দীপন হত্যা মামলার তদন্ত তদারকি কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের উপকমিশনার মাসরুকুর রহমান খালেদ বলেন, শামীমকে রিমান্ডে নেয়া হয়েছে। তাকে এখন নিবিড় জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। এর মাধ্যমে আশা করছি হত্যায় জড়িত অপর আসামিদের শনাক্ত করা সম্ভব হবে।
৩১ অক্টোবর দীপনকে হত্যার পাশাপাশি একই সময়ে লালমাটিয়ায় শুদ্ধস্বর প্রকাশনীর মালিক ও প্রকাশক আহমেদ রশিদ টুটুলের ওপর হামলা করে জঙ্গিরা। শুদ্ধস্বর কার্যালয়ে টুটুল ছাড়াও লেখক তারেক রহিম ও রণদীপম বসু আহত হন। ওই ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় মামলা করা হয়। - যুগান্তর
২৫ আগস্ট ২০১৬/এমটি নিউজ২৪/এসবি/এসএস