সাঈদুর রহমান রিমন : রাজধানীর গুলশান-বারিধারাসহ বিভিন্ন স্থানে গত কয়েক বছরে এক ডজনেরও বেশি বিদেশি নাগরিক অপমৃত্যুর শিকার হয়েছেন, কিন্তু এ ব্যাপারে যথাযথ তদন্ত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। ঘটনার পর ইউডি মামলা হয়েছে, তারপর ময়নাতদন্ত শেষে মৃতদেহগুলো যত্নসহকারে পাঠিয়ে দেয়া হয়েছে নিজ নিজ দেশে। এসব ঘটনায় পুঙ্খানুপুঙ্খ তদন্ত করা হয়নি। ফলে বিদেশি নাগরিকদের একের পর এক মৃত্যুর ঘটনা থামানো যাচ্ছে না।
এই বাস্তবতায় সৌদি দূতাবাস কর্মকর্তা খালাফ বিন মোহাম্মদ সালেম আল আলী হত্যাকাণ্ডের রেশ না কাটতেই গুলশানের সংরক্ষিত এলাকাতে আবার গুলিতে নিহত হয়েছেন ইতালির নাগরিক তাভেলা সিজার।
এর আগে গত বছরের ২১ নভেম্বর বনানী থেকে উদ্ধার করা হয় এক ব্রিটিশ নাগরিকের লাশ। তার নাম মেজবাহ উদ্দিন (৭১)। এ ব্যাপারে বনানী থানার উপপরিদর্শক (এসআই) জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছিলেন, বনানীর ২৫/এ রোডের ৯১ নম্বর বাড়ির পাঁচতলা ফ্ল্যাটে একা থাকতেন মেজবাহ উদ্দিন। নিকটাত্দীয়দের কাছ থেকে খবর পেয়ে ওই বাসা থেকে লাশ উদ্ধার করা হয়।
এ সময় বাসার দরজা ভিতর থেকে বন্ধ ছিল। লাশের শরীরের বিভিন্ন অংশে রক্ত দেখা গেছে। তবে কোনো আঘাতের চিহ্ন বা কোনো সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের আলামত পাওয়া যায়নি। মেজবাহ উদ্দিনের মৃতদেহ সুরতহাল প্রতিবেদন শেষে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়।
জানা গেছে, এ ব্যাপারে আর কোনো তদন্ত হয়নি। সৌদি দূতাবাস কনস্যুলার সেকশনের দ্বিতীয় সচিব হিসেবে কর্মরত খালাফ বিন মোহাম্মদ সালেম আল-আলী খুন হয়েছিলেন ২০১২ সালের ৫ মার্চ রাতে। গুলশানের কূটনীতিক এলাকার ১২০ নম্বর সড়কের ১৯/বি নম্বর বাসার সামনে তাকে গুলি করা হয়। পরদিন ৬ মার্চ ভোরে ইউনাইটেড হাসপাতালে তিনি মারা যান।
জানা গেছে, তার হত্যাকাণ্ডের বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হয়েছে। তাতে একজনের মৃত্যুদণ্ড, তিনজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড ও পলাতক একজনকে বেকসুর খালাস দেয়া হয়েছে। তবে আসামিরা উচ্চ আদালতে আপিল করেছেন বলে জানা গেছে। ঘটনার মধ্যে আরও রয়েছে সিং ইয়েন হন (৭৩) নামে এক বিদেশির মৃত্যুর ঘটনা। তিনি বারিধারার একটি আবাসিক এলাকায় অবস্থান করতেন। ভাটারা থানার এসআই মিজানুর রহমান জানান, পাঁচতলা বাড়ির ছাদ থেকে লাফ দিয়ে ওই বিদেশি আত্দহত্যার চেষ্টা করেন। তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার পর চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু ঘটে। এ ছাড়া রাজধানী সংলগ্ন ফতুল্লার এক শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে ম্যানুয়েল মার্টেবার (৪৫) নামে ফিলিপাইনের এক নাগরিকের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। তিনি একটি ডায়িং কারখানায় কাজ করতেন। কারখানার ভিতরেই আবাসিক ভবন থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়।
ফতুল্লা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জানান, পঞ্চবটী বিসিক শিল্পনগরে এম এস ডায়িং, প্রিন্টিং অ্যান্ড ফিনিশিং মিলস লিমিটেডের একটি কক্ষের দরজা ভেঙে ভিতর থেকে ওই বিদেশি নাগরিকের লাশ উদ্ধার করা হয়। শুধু রাজধানী নয়, এর বাইরে চট্টগ্রামেও বেশ কয়েকজন বিদেশি নাগরিকের লাশ উদ্ধার করা হয়।
জানা গেছে, এসব ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট থানাসমূহে যথারীতি মামলা হয়েছে। তদন্ত হয়েছে। কিন্তু চূড়ান্ত কোনো রহস্য উদঘাটন করা যায়নি।
নিরাপত্তা অনিশ্চিত ৩০ মিশনের : গুলশান ১৯৬১ সালে গড়ে ওঠা একটি মডেল টাউন, যা বর্তমানে সেকেলে ও সাধারণ পাড়ায় পরিণত হয়েছে। গুলশানের ৫৩.৫৯ কিলোমিটার স্কয়ার এলাকার মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ কূটনীতিক পাড়া। বাকি ৫০ শতাংশ রেসিডেন্সিয়াল, ২০ শতাংশ কমার্শিয়াল, ১৮ শতাংশ বস্তি ও গ্রাম। ওয়াকিবহালদের প্রশ্ন- এই ১২ শতাংশ কূটনীতিক পাড়ায়ও যদি নিরাপত্তা নিশ্চিত না করা যায়, তা হলে কী হবে এত পুলিশ ও র্যাব ফোর্স দিয়ে? শুধু রাজনৈতিক কাজে পুলিশকে ব্যবহার না করে, এসব কাজেও প্রাইওরিটি প্রদান বেশি জরুরি। বর্তমানে খোদ গুলশানেই রয়েছে ২৭টির মতো হাসপাতাল ও ক্লিনিক।
আরও রয়েছে ১০টির মতো ক্লাব। গুলশানে রয়েছে ১৩টির মতো বিশ্ববিদ্যালয়। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো গুলশানে রয়েছে সৌদি আবর, যুক্তরাষ্ট্রসহ ৩৭টি দেশের বৈদেশিক মিশন। জনসংখ্যা ৩ লাখেরও বেশি। ২০১১ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী গুলশানের জনসংখ্যা হলো প্রায় ২ লাখ ৫৩ হাজার। ৩০টি বৈদেশিক মিশনসহ ৩ লাখ অধিবাসী অধ্যুষিত এই গুলশান এলাকার নিরাপত্তা ব্যবস্থার দায়িত্বে আছে র্যাব ও পুলিশ। তন্মধ্যে মাত্র ১২ শতাংশ জনগোষ্ঠীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা যথেষ্ট কিনা- তা খতিয়ে দেখার বিষয় বলে ওয়াকিবহাল সূত্রগুলো মনে করছে।-বিডিপ্রতিদিন
২ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে