তারেক সালমান : দল ঢেলে সাজানোর নতুন উদ্যোগের টার্গেট পূরণে ব্যর্থ হয়েছে বিএনপি। ব্যর্থতার জন্য সাতটি কারণ চিহ্নিত করেছে দলটি। কারণগুলোর মধ্যে ঈদুল আজহা, পবিত্র হজ, এলাকাভিত্তিক কাউন্সিল করতে সরকারি ও আওয়ামী লীগের বাধা, নেতৃত্বের কোন্দল, কাউন্সিলের জন্য স্থান বরাদ্দ না পাওয়া এবং হামলা-মামলার শিকার হয়ে নেতাকর্মীরা এলাকায় থাকতে না পারাকে দুষছেন দলের নেতাকর্মীরা।
সারাদেশে তৃণমূল থেকে দল পুনর্গঠনের লক্ষ্যে গত ৯ আগস্ট ৭৫টি সাংগঠনিক ইউনিটের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে কেন্দ্র থেকে চিঠি পাঠায় বিএনপি। দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের পক্ষে অন্যতম যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে দলের প্রতিটি পৌর, থানা, উপজেলা, জেলা ও মহানগর কমিটি গঠন ও পুনর্গঠন করে কেন্দ্রে পাঠানোর জন্য সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেওয়া হয়। কমিটি পুনর্গঠনের পর কেন্দ্রে জমা দেওয়ার সেই ডেটলাইন শেষ হয়েছে বুধবার।
বিএনপি সূত্রে জানা যায়, দল পুনর্গঠনে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশনা তৃণমূল নেতাকর্মীদের চাঙ্গা করে তুললেও দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা তা সামাল দিতে পারছেন না। প্রায় সব জেলা-উপজেলায় নেতৃত্বের কোন্দল আয়ত্তের বাইরে চলে যাওয়ায় কমিটি গঠনের প্রক্রিয়া থমকে গেছে।
বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আব্দুস সালাম আজাদ বৃহস্পতিবার বিকেলে প্রতিবেদককে বলেন, সরকারি দলের সঙ্গে প্রশাসনের নানাবিধ বাধার পাশাপাশি দুটি ধর্মীয় উৎসব কোরবানির ঈদ ও পবিত্র হজের কারণেও আমাদের দল পুনর্গঠনের নির্দিষ্ট সময়সীমার টার্গেট পূরণ হয়নি, এটা সত্য।
সালাম আরও বলেন, ঢাকা বিভাগের জেলাগুলোর মধ্যে প্রায় ৫০ ভাগ জেলার বিভিন্ন থানা-উপজেলা ইউনিট কমিটিগুলো পুনর্গঠন এরই মধ্যে শেষ হয়েছে। আশা করি, আগামী ১৫-২০ দিনের মধ্যে বাকি কমিটি গঠনের কাজ সম্পন্ন হবে।
তিনি বলেন, আমাদের অনেক নেতা পবিত্র হজ উপলক্ষে সৌদি আরব রয়েছেন। এ ছাড়া নেতাকর্মীদের নামে মামলা থাকায় দীর্ঘদিন ধরেই তারা নিজেদের এলাকায় থাকতে পারছেন না। অনেক জায়গায় কাউন্সিলের জন্য স্থান নির্বাচন করা হলেও পরে আওয়ামী লীগের পাশাপাশি থানা পুলিশের হুমকির কারণে সে স্থান বরাদ্দ বাতিল করা হয়। পুলিশ আওয়ামী লীগের দায়িত্ব পালন করছে। এ ছাড়া কিছু এলাকায় নেতাদের কোন্দলও কমিটি না হওয়ার জন্য দায়ী। মূলত এ সব প্রতিবন্ধকতার কারণে নির্ধারিত ৩০ সেপ্টেম্বরের মধ্যে আমরা দল পুনর্গঠনের টার্গেট পূরণ করতে পারিনি।
জানা গেছে, দলের ৭৫টি সাংগঠনিক জেলার কোনোটিই কেন্দ্রের নির্দেশ অনুযায়ী বেঁধে দেওয়া সময়ের মধ্যে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া শেষ করতে পারেনি। একই ভাবে ওয়ার্ড-থানা-পৌর কিংবা ইউনিয়ন পর্যায়ের কমিটিতেও আশানুরূপ অগ্রগতি হয়নি। এমনকি অনেক সাংগঠনিক ইউনিটের জেলা ও মহানগরের নেতারা তৃণমূলে পুনর্গঠন সংক্রান্ত কেন্দ্র থেকে পাঠানো চিঠির প্রতি সাড়াও দিচ্ছেন না। কোনো কোনো জেলায় নেতাদের কোন্দলে সম্মেলন ও কমিটি গঠনের উদ্যোগ এখনো আলোর মুখ দেখেনি। এ অবস্থায় কোনো অগ্রগতি না হওয়ায় অন্তত ১৫টি সাংগঠনিক ইউনিটের কমিটি ভেঙে দেওয়ার চিন্তা-ভাবনা করছে দলটি। তবে এরই মধ্যে কেন্দ্রের নির্দেশনা বাস্তবায়নের জন্য লিখিত ও মৌখিকভাবে কমপক্ষে অর্ধশতাধিক জেলা সময় চেয়ে কেন্দ্রের কাছে আবেদন করেছে বলে বিএনপির দফতর সূত্রে জানা গেছে।
দলীয় সূত্র জানায়, নেতাদের কোন্দলে যে সব জেলা কমিটি গঠনে ব্যর্থ হবে, কেন্দ্র সে সব জেলায় হস্তক্ষেপ করবে। একই সঙ্গে ওই সব জেলা কমিটি ভেঙে দেবে।
সূত্র জানায়, নেতাদের কোন্দলের কারণে ময়মনসিংহ উত্তর ও দক্ষিণ জেলা, টাঙ্গাইল, বরিশাল মহানগর ও জেলা, পটুয়াখালী, ঝালকাঠি, পঞ্চগড়, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, চট্টগ্রাম মহানগর, খুলনা জেলা, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ, রাজশাহীসহ অনেক জেলায় কমিটি গঠনে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই।
দল পুনর্গঠনে কেন্দ্রের নির্দেশের সময়সীমার বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব মো. শাহজাহান এই প্রতিবেদককে বলেন, কমিটি গঠন করার নির্দেশনা দিয়ে চিঠি পাঠানোর পর প্রায় সব ইউনিট কাজ শুরু করেছে। কাজও অনেক এগিয়েছে। তবে বিভিন্ন প্রতিবন্ধকতার কারণে পুনর্গঠন প্রক্রিয়া বাধাগ্রস্ত হওয়ায় তা নির্ধারিত সময়ে শেষ করা সম্ভব হয়নি। তবে যারা সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন তাদের সময় বাড়িয়ে দেওয়া হবে।
মো. শাহজাহান আরও বলেন, কেন্দ্রের নির্দেশনার পরও যারা কাজ শুরু করেননি, তাদের বিরুদ্ধে চেয়ারপারসন দেশে ফিরেই সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবেন।
কমিটি পুনর্গঠনের অগ্রগতি বিষয়ে বিএনপির সহ-দফতর সম্পাদক তাইফুল ইসলাম টিপু প্রতিবেদককে বলেন, কমিটি পুনর্গঠনে কেন্দ্র থেকে পাঠানো চিঠির সময়সীমা গতকাল (বুধবার) শেষ হয়েছে। চেয়ারপারসন দেশে ফিরলেই পুনর্গঠনের চিত্র তার কাছে উপস্থাপন করা হবে। এ জন্য কাজ চলছে।
টিপু বলেন, কমিটি পুনর্গঠনে কিছু কিছু জায়গায় সমস্যা হয়েছে। সেগুলো নিয়ে আমরা কাজ করছি। ঈদ ও হজের কারণে এ প্রক্রিয়া কিছুটা বাধাগ্রস্ত হয়েছে। অনেকেই সময় চেয়েছেন। কয়েকটি ইউনিট কমিটি পুনর্গঠনে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। তাদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবেন চেয়ারপারসন।
২০০৯ সালের ৮ ডিসেম্বর বিএনপির সর্বশেষ জাতীয় কাউন্সিল হয়। এর পর আর কেন্দ্রীয় কমিটি হয়নি। সব জেলা কমিটি গঠনের পর বিএনপি জাতীয় কাউন্সিল করবে বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।-দ্য রিপোর্ট
২ অক্টোবর, ২০১৫/এমটিনিউজ২৪/এস.এ.সুমন/একে