নিউজ ডেস্ক : বাগেরহাটের রামপালে কয়লাভিত্তিক তাপ বিদ্যুৎকেন্দ্রের পক্ষে ‘বৈজ্ঞানিক ব্যাখ্যা’ তুলে ধরেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। শুক্রবার দুপুরে ধানমণ্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে আনুষ্ঠানিকভাবে এ ব্যাখ্যা তুলে ধরেন দলটির প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক হাছান মাহমুদ।
তিনি বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া রামপাল বিদ্যুৎকেন্দ্র নিয়ে বিভ্রান্তমূলক কথা বলেছেন। এরপরই আমাদের দলের পক্ষ থেকে তাৎক্ষণিক বক্তব্য তুলে ধরা হয়েছিল। আজকে দলের পক্ষ থেকে তার (খালেদা জিয়ার) বক্তব্যের বিপক্ষে বৈজ্ঞানিক বিশ্লেষণ এবং তথ্য উপাত্তসহ রামপাল বিদ্যুৎ কেন্দ্রের পক্ষে আমাদের বক্তব্য তুলে ধরবো।
হাছান মাহমুদ বলেন, বেগম জিয়া তার বক্তব্যে বলেছেন, রামপাল প্রকল্পের কারণে সুন্দরবনে ফ্লাইঅ্যাশ ভরে যাবে, সালফার ডাই-অক্সাইডে সুন্দরবন বিষাক্ত হবে, নাইট্রোজেন ডাই-অক্সাইডে সুন্দরবনের বাতাস ভারী হয়ে যাবে, পশুর নদীর পানি গরম হয়ে যাবে ইত্যাদি। কিন্তু একজন মেট্রিক ফেল মহিলা যেভাবে বিশেষজ্ঞের মতো কথা বলেছেন তাতে আমরা আতঙ্কিত হয়েছি। কারণ, অল্প বিদ্যা ভয়ানক হয়। তাই তিনি এ প্রকল্প নিয়ে জাতিকে বিভ্রান্ত করার জন্য কিছু ভুল তথ্য পরিবেশন করেছেন।
তিনি বলেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়ন করার জন্য ৯৯ দশমিক ৯৯ ভাগ অর্থাৎ প্রায় শতভাগে ফ্লাইঅ্যাশ নিয়ন্ত্রণ করার ব্যবস্থা করা হয়েছে। উন্নত প্রযুক্তির ইএসপি সিস্টেমে শতভাগ ফ্লাইঅ্যাশ নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এগুলো বাংলাদেশের সিমেন্ট কারখানায় ব্যবহার করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে।
সাবেক বন ও পরিবেশমন্ত্রী হাছান মাহমুদ বলেন, ৯৬ শতাংশ সালফার ডাই অক্সাইড নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হয়েছে। নাইট্রোজেন অক্সাইড, লো-নাইট্রোজেন অক্সাইড ব্যবহারের মাধ্যমে এখানে নাইট্রোজেন অক্সাইড নিয়ন্ত্রণ করা হবে।
তিনি বলেন, যারা এইগুলো নিয়ে আন্দোলন করেন তাদের অনেকেই সঠিক তথ্য না জেনে কিংবা ইচ্ছাকৃতভাবে অনেক ভুল তথ্য উপস্থাপন করছেন। সেখানে বলা হয়েছে নদীর পানি ব্যবহার করা হবে, নদী শুকিয়ে যাবে। প্রকৃতপক্ষে শুষ্ক মৌসুমে শুন্য দশমিক শুন্য পাঁচ ভাগ পানি ব্যবহার করা হবে। বর্ষা মৌসুমে সেটা অনেক কম। আবার এই পানি কুলিং সিস্টেমে ঠান্ডা করে আবার নদীতে ফেরত দেওয়া হবে। সুতরাং এইখানে ব্যপকভাবে নদীর পানি ব্যবহারের কোনো সম্ভাবনাই নেই।
আওয়ামী লীগের এই নেতা বলেন, বেগম জিয়া বলেছেন, রামপালের বাতাস গিয়ে সুন্দরবনের পরিবেশ বিনষ্ট করবে। কিন্তু প্রায় ৯০০ ফিট বা ৯০ তলার সমান উচু চিমনি ব্যবহার করা হবে। আর এ প্রকল্পের এরিয়ার বাতাস বছরে ৯ মাস সুন্দরবনের বিপরীতে প্রবাহিত হয়। তাই এতে করে কোনো ক্ষতি হবে না।
হাছান মাহমুদ বলেন, রামপাল প্রকল্প সুন্দরবন থেকে ১৪ কিলোমিটার, ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ থেকে প্রায় ৭০ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। এ প্রকল্প বাস্তবায়নের জন্য কোনো কৃষি জমি এবং বসত-বাড়ি উচ্ছেদ করা হয়নি। শুধু ১৫০টি স্থাপনা পুনর্বাসন করা হচ্ছে।
তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় থাকাকালীন দেশের জনগণ বিদ্যুতের জন্য আন্দোলন করেছে দিনাজপুরের ফুলবাড়ি, চাপাইনবাবগঞ্জের কানসাটসহ বিভিন্ন এলাকায়। কানসাটে পুলিশের গুলিতে ১৮ জন আন্দোলনতকারী নিহতও হয়েছেন। এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদনও বাড়াতে পারেননি। দেশের ২১ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করে লোপাট করা হয়েছে।
হাছান বলেন, বেগম জিয়া আন্দোলনে ব্যর্থ হয়ে, কোনো ইস্যু না পেয়ে এখন অন্যের ইস্যু হাইজ্যাক করার চেষ্টা করছেন। যারা এতদিন ধরে এই নিয়ে আন্দোলন করেছে তাদের সেই ইস্যুকে হাইজ্যাক করে এর উপর আশ্রয় নিয়ে রাজনীতিতে টিকে থাকার চেষ্টা করছেন তিনি।
বিএনপির সমালোচনা করে তিনি বলেন, বিএনপি এখন একটি পরগাছা দলে রূপান্তরিত হয়েছে। পরগাছা যেমন অন্য গাছের উপর জন্মায় ঠিক তেমনি বিএনপিও অন্যের ইস্যুকে হাইজ্যাক করে বেঁচে থাকার চেষ্টা করছে।
বেগম জিয়াকে উদ্দেশ করে হাছান মাহমুদ বলেন, আন্দোলনের নাম করে দেশের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবেন না। সরকার এবং আওয়ামী লীগ দেশের মানুষকে সঙ্গে নিয়ে আপনাদের এমন অপচেষ্টা প্রতিরোধ করবে।
বিএনপি ছাড়া অন্য আন্দোলনকারীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমরা আপনাদের উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। কিন্ত অতিউদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা কখনোই ভালো নয়। ভুল তথ্যের উপর ভিত্তি করে আবেগপ্রবণ হয়ে বক্তব্য রাখা জাতির জন্য ঠিক নয়। আপনাদের কোনো বক্তব্য থাকলে তা সরকারে কাছে উপস্থাপন করুন।
সংবাদ সম্মেলনে আরো উপস্থিত ছিলেন- আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও সমাজকল্যাণ সম্পাদক ফরিদুন্নাহার লাইলী, দফতর সম্পাদক আবদুস সোবহান গোলাপ, কার্যনির্বাহী সদস্য আমিনুল ইসলাম আমিন, সুজিত রায় নন্দী প্রমুখ।
এদিকে আলোচিত-সমালোচিত এই প্রকল্প নিয়ে আগামীকাল শনিবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি সংবাদ সম্মেলন রয়েছে।
২৬ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ/সৈকত/এমএম