শনিবার, ২৭ আগস্ট, ২০১৬, ০১:৫১:২৪

যেভাবে সফল অপারেশন ‌‘হিট স্ট্রং-২৭’

যেভাবে সফল অপারেশন ‌‘হিট স্ট্রং-২৭’

নিউজ ডেস্ক : অভিযানে নিহত হন গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার 'মূলহোতা' তামিম আহমেদ চৌধুরী
নারায়ণগঞ্জ শহরের পাইকপাড়া বড় কবরস্থান এলাকার একটি বাড়িতে পুলিশের অভিযানে গুলশান ও শোলাকিয়া হামলার ‘মূল পরিকল্পনাকারী’ তামিম আহমেদ চৌধুরীসহ তিন জঙ্গি নিহত হয়েছেন।

শনিবার সকাল ৯টা ৩৫ মিনিট ১০টা ৩৫ মিনিট পর্যন্ত এক ঘণ্টার এ অভিযান পরিচালনা করে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট।

অভিযান শেষে আইজিপি একেএম শহীদুল হক ব্রিফিংয়ে জানান, অপারেশন হিট স্ট্রং টুয়েন্টি সেভেন নামে পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিট পরিচালিত এ অভিযানে তিন জঙ্গি নিহত হয়েছে।

তিনি আরও জানান, নিহতদের মধ্যে একজনের চেহারার সঙ্গে পুলিশের পুরস্কারঘোষিত এক জঙ্গির চেহারার হুবহু মিল রয়েছে। তিনি গুলশান ও শোলাকিয়াসহ জঙ্গি হামলার পরিকল্পনাকারী, কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশী নাগরিক তামিম আহমেদ চৌধুরী। তিনি সিরিয়া থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে বাংলাদেশে জঙ্গি কার্যক্রম চালাচ্ছিলেন।

অভিযান সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে শুক্রবার রাত আড়াইটার দিকে পাইকপাড়ায় অবস্থান নেন আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

সেখানে তিনতলা 'দেওয়ান বাড়ি'র তৃতীয় তলার দুটি ফ্লাটে জঙ্গিদের অবস্থান নিশ্চিত হওয়ার পর বাড়িটির আশেপাশের বাড়ি থেকে লোকজনকে সরিয়ে নেয়া হয়।

শনিবার ভোর ৫টা থেকে সাড়ে ৫টার দিকে বাড়ি ঘিরে ফেলে পুলিশ। অভিযানের অংশ হিসেবে প্রথমে বাড়ির মালিক নুরুদ্দিন দেওয়ানসহ বাকি চারটি ইউনিটের ভাড়াটিয়াদের কৌশলে নিরাপদ দূরত্বে সরিয়ে নেয়া হয়।

এরপর সেখানে পুলিশের স্পেশাল সোয়াট টিম, নারায়ণগঞ্জের স্থানীয় পুলিশ মোতায়েন করে পুলিশের সিটি ইউনিট অভিযান শুরু করে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ঘটনাস্থলে র‌্যাবের অতিরিক্ত সদস্যও মোতায়েন করা হয়।

অভিযানের এক পর্যায়ে নারায়ণগঞ্জের পুলিশ লাইন্স থেকে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ঘটনাস্থলে আনা হয়। তারা পুরো এলাকা ঘিরে রাখে। এলাকার ইন্টারনেট সংযোগও বন্ধ করে দেয়া হয়।

মূল অভিযান শুরু হয় সকাল ৯টা ৩৫ মিনিটে। পুলিশের সদস্যরা তিনতলার দিকে এগিয়ে গেলে তাদের লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে জঙ্গিরা।

এরপর পুলিশ জঙ্গিদের আত্মসমর্পণে আহ্বান জানায়। কিন্তু তারা তাতে রাজি না হয়ে উল্টো গ্রেনেড ছুড়ে মারে। এরপরই উভয়পক্ষের মধ্যে গুলি বিনিময় চলতে থাকে।

এরই মধ্যে বাড়িটির পেছন দিক থেকে পুলিশের আরেকটি চৌকস দল অভিযান চালিয়ে সকাল ১০ ৩৫ মিনিটের দিকে অভিযান সম্পন্ন করে। সফল এ অভিযানে তারা স্নাইপার রাইফেল ব্যবহার করেন। পরে বাড়িটির ভেতর তিনজনের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।

বাড়ির মালিক নুরুদ্দিন দেওয়ান পুলিশকে জানিয়েছেন, ওষুধ ব্যবসায়ী পরিচয়ে রমজান শেষে তার বাড়ির তৃতীয় তলার দুটি ইউনিট ভাড়া নেন কয়েকজন ব্যক্তি।

পুলিশের ধারণা, এই বাসা থেকে মূলত জঙ্গিরা আদমজী ইপিজেডে কর্মরত বিদেশীদের টার্গেট করেছিলেন।

অভিযান শেষে বাড়িতে তল্লাশি চালানো হচ্ছে। সেখানে যেসব অবিস্ফোরিত বোমা রয়েছে তা নিষ্ক্রিয় করা হচ্ছে।

এর আগে রাজধানীর কল্যাণপুরে জঙ্গি আস্তানায় 'স্টর্ম-২৬' নামে অভিযান পরিচালনা করেছিল পুলিশের কাউন্টার টেরোরিজম ইউনিট ও পুলিশ সদর দফতরের এলআইসি শাখা। ওই অভিযানে ৯ জঙ্গি নিহত হয়।

এরও আগে রাজধানীর গুলশানে হলি আর্টিজান রেস্তোরাঁয় হামলার পর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে অপারেশন 'থান্ডার বোল্টে' ৬ জঙ্গি নিহত হয়।

নারায়ণগঞ্জের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপারেশন) ফারুক হোসেন জানান, পাইকপাড়া বড় কবরস্থান এলাকার তিনতলা ওই ভবনের তৃতীয় তলাতে জঙ্গিরা অবস্থান নিয়েছিল। সকালে অভিযানের বিষয়টি টের পেয়ে তারা তাদের সব ডকুমেন্ট ও আলামত আগুন দিয়ে পুড়িয়ে ফেলে।

তিনি আরও জানান, অভিযানের সময় আইনশৃংখলা বাহিনীর সদস্যদের লক্ষ্য করে জঙ্গিরা একের পর এক গ্রেনেড ছুড়ে মারে ভারী অস্ত্র দিয়ে গুলি করে। -যুগান্তর
২৭ আগস্ট, ২০১৬/এমটিনিউজ২৪/সৈকত/এমএম

Follow করুন এমটিনিউজ২৪ গুগল নিউজ, টুইটার , ফেসবুক এবং সাবস্ক্রাইব করুন এমটিনিউজ২৪ ইউটিউব চ্যানেলে